যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
এই সাবধানতা গ্রহণ জরুরি ছিল সেদিন। কারণ, ভারত দু’শো বছরের বেশিকাল ইংরেজের পদানত ছিল। ধর্ম বর্ণ ভাষা অঞ্চল সংস্কৃতি নির্বিশেষে সমস্ত ভারতবাসী একযোগে লড়াই সংগ্রাম করেই স্বাধীনতা এনেছে। জনগণ রক্ত দিয়েছে অপরিমেয় পরিমাণ। বলিদান গিয়েছে অসংখ্য প্রাণ। আর উত্তীর্ণ হতে হয়েছে ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিরাট পরীক্ষায়। কিন্তু এতকিছুর পরেও ইংরেজ সহজে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া যাতে জটিল থেকে জটিলতর হয় তারই সুবন্দোবস্ত করেছিল তারা। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্ষমতার আসনটি দীর্ঘায়ু পেয়েছিল ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির বদান্যতায়। তবে তাদের দর্প চিরস্থায়ী হয়নি। একদিন ভারত ছেড়ে যাওয়াটাই অনিবার্য, ক্রমে উপলব্ধি করেছিল ব্রিটিশ রাজশক্তি। তাই ভারতত্যাগের আগে চূড়ান্ত নষ্টামিই করেছিল তারা। দ্বিজাতি তত্ত্বকে মান্যতা দিয়ে ভারতের দুই প্রান্তের দুটি ভূমিভাগ কেটে নিয়ে সৃষ্টি করেছিল পাকিস্তান নামক একটি পৃথক রাষ্ট্র। কিন্তু সেখানেই ইংরেজের প্রতিহিংসার রাজনীতিতে ইতি পড়েনি। মূল ভারতবাসীর মধ্যেও বুনে দিয়েছিল অবিশ্বাস, বিদ্বেষ ও ঘৃণার রাজনীতির বীজ। তা থেকে বিষবৃক্ষ গজিয়ে ওঠার সম্ভাবনা বিনষ্ট করতেই স্বাধীনতার সৈনিকরা সবরকমে সচেতন ছিলেন। সংবিধানের অতুলনীয় প্রস্তাবনাটি ওই স্বচ্ছ পবিত্র ভাবনারই অমৃতফল। সৃষ্টির সিকি শতক পূর্তির আগেই দ্বিখণ্ডিত হয়ে পাকিস্তান প্রমাণ করে দেয়, দ্বিজাতি তত্ত্ব ছিল একটি ঐতিহাসিক ভুল। পাকিস্তানের ভিতরে এখনও সক্রিয় আরও বিচ্ছিন্নতার আকাঙ্ক্ষা ও শক্তি। তারপরেও বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি থেকে অনেকখানি সরে এসেছে। ভারতের ভিতরেও একটি রাজনৈতিক শক্তি রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে ধর্মকে জুড়ে দেওয়ার রাজনীতিতে হাত পাকাচ্ছে। ভারতের এই ধর্মান্ধদের রাজনীতি জিন্নার পাল্টা ছাড়া কিছু নয়।
এই বদলার রাজনীতির প্রবক্তাদের হাতিয়ার উগ্র হিন্দুত্ব। তারা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) অনুগামী। আজকের ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপিই হল সঙ্ঘের রাজনৈতিক শাখা। দেশকে একটিমাত্র নীতিতে বাঁধার কথা বলে তারা আসলে ভারতের বহুত্ববাদ এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের শক্তির মূলে কুঠারাঘাত করতে বদ্ধপরিকর। তাদের এই নষ্টামিতে সচেতন নাগরিকের অনুমোদন নেই বুঝতে পেরে সঙ্ঘের পেয়াদারা আম জনতার মগজ ধোলাই করার ফন্দি এঁটেছে। সবাই জানে, এই অপকর্মে তাদের আইটি সেল এবং সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ কতটা দড়। একটি ধর্ম সম্পর্কে কাল্পনিক ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা প্রচার করছে যে, এখনই সতর্ক না-হলে হিন্দুধর্ম এবং হিন্দুরা ভারতের বুকেও বিপন্ন হতে পারে। তার জন্য এখনই নতুন করে লিখতে হবে দেশের ইতিহাস। বিদেশিদের নির্দেশে ও স্বার্থে লেখা দেশের ইতিহাসের বহু অধ্যায় বাতিল করতে হবে এখনই। নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে সঙ্ঘের এই কুচিন্তার প্রতিফলন দেখে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিরপেক্ষ শিক্ষাবিদরা। অন্যদিকে, দেশের নানা স্থানে চলছে প্ল্যানমাফিক কিছু স্থাননাম পাল্টাবার হিড়িক। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ইতিমধ্যেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশের ইতিহাস-ভূগোল বদলের এই প্রবণতা নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বহু অবিজেপি নেতা ইতিমধ্যেই আপত্তি জানিয়েছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখতে মেরুকরণের অস্ত্রে আরও বেশি শান দিতেই যে এই গেরুয়া উদ্যোগ, সন্দেহ কী। সমস্ত সচেতন নাগরিকের অবিলম্বে এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। একমাত্র নাগরিক সচেতনতাই জনবিরোধী সংবিধানবিরোধী শাসককে সংযত করতে পারে। দেশের অগ্রগতি এবং মর্যাদা রক্ষার জন্যই এটা জরুরি।