যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
কিন্তু কেন্দ্রের টনক না নড়লেও এই ইস্যুতে হাতগুটিয়ে বসে থাকেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। কারণ তিনি যে ব্যতিক্রমী। শুধু তাই নয়, মূলত তাঁরই উদ্যোগে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। উন্নতি ঘটেছে সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির। হয়েছে উন্নয়ন। হাসি ফুটেছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের মুখে। সেখানকার সুস্থির পরিস্থিতি যাতে নতুন করে অশান্ত হয়ে না ওঠে তার জন্য জট কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছে মমতা প্রশাসন। মূলত রাজ্য প্রশাসনের উদ্যোগেই কিছুটা হলেও জট কেটেছে। একদল আন্দোলনে অনড় থাকলেও পাঁচ দিনের মাথায় পুরুলিয়ার দিকের একাধিক জায়গায় অন্যপক্ষ প্রত্যাহার করেছে অবরোধের কর্মসূচি। রাজ্য প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য। যদিও আন্দোলনের জেরে পুজোর মুখে যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ভোগান্তিরও অবসান হয়নি। কারণ আন্দোলনকারীদের মধ্যেই আড়াআড়ি দুটি ভাগ লক্ষ করা যাচ্ছে। কুর্মিরা যে দাবিদাওয়াতে আন্দোলন করছে তা বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের না থাকলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে দৌত্য চালিয়ে গিয়েছে নবান্ন। এখানেই মমতা সরকার কিছুটা হলেও সফল।
একথা ঠিক, কুর্মিদের দাবিগুলি কয়েকবছরের পুরনো। তাদের তফসিলি উপজাতির (এসটি) মর্যাদা দেওয়া, কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলভুক্ত করা এবং এই সম্প্রদায়ের সারনা ধর্মের সরকারি কোড চালু করার দাবি থেকে আন্দোলনকারীরা সরে আসেনি। কেন্দ্র তাদের এই দাবিদাওয়ার মীমাংসার জন্য যথাসময়ে উদ্যোগী না হলেও রাজ্য সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্রমাগত আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে। আলোচনা কিছুটা হলেও সন্তোষজনক মনে করে পাঁচদিনের মাথায় একটি পক্ষ আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিশ্বাস করে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব। রাজ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সময়েও মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছিল। অথচ ঘটনা হল, কুর্মিদের এই দাবিগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী হল কেন্দ্রীয় সরকার। এবং সেই কারণে ২০১৭ সালে দিল্লিতে কেন্দ্রের আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন কুর্মি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সেবার দিল্লিতে তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তারপর দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু কুর্মিদের দাবি নিয়ে ভাবার সময় পায়নি কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি। তাই এই ইস্যুটি নিয়ে বারবার কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছে রাজ্য সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই কুর্মি বিক্ষোভের নেপথ্যে মাওবাদী যোগসাজশের ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্ট। তাই অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। দেখতে হবে জঙ্গলমহল যেন অশান্ত হয়ে না ওঠে। শুধু তাই নয়, আন্দোলনকারীরাও সতর্ক না থাকলে দাবিদাওয়া আদায়ের আসল উদ্দেশ্যটাই বিফলে চলে যাবে। তাই সাধু সাবধান।