যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
চিকিৎসাবিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, তত পাল্টে যাচ্ছে, বিচিত্র হচ্ছে রোগ-জীবাণুর আক্রমণের প্রকরণ। প্রয়োজনে তারা নিজেদের চেহারা, চরিত্র ও কৌশলে বৈচিত্র্য এনে মানুষকে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে মোক্ষম চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। এমনই একটি টাটকা চ্যালেঞ্জের নাম কোভিড-১৯। নির্মূল না-হলেও করোনা আপাতত নিয়ন্ত্রণেই। তবে তার বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই এখনও অব্যাহত। ২০২২ হল, ইতিহাসের সর্ববৃহৎ মহামারীর বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর লড়াইয়ের তৃতীয় বর্ষ। করোনার স্পর্শ থেকে ব্যক্তির শরীর এবং পরিবার ও গোটা সমাজকে রক্ষা করতে কিছুদিন আগে পর্যন্তও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে বিশেষ কড়াকড়ি ছিল। যেমন মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ ও সোশ্যাল ডিসট্যান্স রক্ষা করা ইত্যাদি। একথা অত্যুক্তি নয় যে, স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি বেশিরভাগ মানুষই খুশি মনে নেয়নি, বেঁচে থাকার তাগিতেই মানতে বাধ্য হয়েছে তারা। তাই করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার সুযোগে স্বাস্থ্যবিধির শিথিলতায় মানুষ বস্তুত মুক্তির স্বাদই পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ সামাজিক উৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার জন্য, দু’বছর বাদে, এবার তারা তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু মানুষকে টানা স্বস্তিতে থাকতে দেওয়াটা তো রোগ-জীবাণুদের কর্তব্য বা ধর্ম নয়। তাদের ধর্ম বরং উল্টোটাই। ব্যাপারটা এইরকম যে, কোভিড-১৯ আপাতত ক্লান্ত? বেশ, এবার মানুষকে বিপাকে ফেলতে আসরে নামবে তবে অন্যকোনও রোগ, নাই-বা হল তারা মহামারী। পশ্চিমবঙ্গের নানাস্থানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি অন্তত সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে। কয়েক দশকের জোড়া মিথ ভেঙে দিয়েছে এই রোগ। সাধারণভাবে জুলাই-সেপ্টেম্বরে শহরাঞ্চলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ ঘটত। এবার তা শুরু হয়েছে মার্চ-এপ্রিলেই। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডেঙ্গুর দাপাদাপি ডিসেম্বর পর্যন্তও চলতে দেখা গিয়েছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের ৬০ শতাংশই গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। নিতান্ত শহুরে বিপদটি শহর-গ্রাম-নির্বিশেষের হয়ে উঠেছে!
মোটামুটিভাবে তিনধরনের ডেঙ্গু চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রোগলক্ষণেও তফাত স্পষ্ট হচ্ছে এবার। জ্বরের সঙ্গে থাকছে হাত-পা ও গলা ব্যথাও। দেহে অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যাচ্ছে এবং শুরু হচ্ছে শ্বাসকষ্ট। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। বহু রোগীর ক্ষেত্রে প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা কমছে না। অবাক ব্যাপার যে, হুবহু করোনার লক্ষণ। সব মিলিয়ে রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে অনেক ডাক্তারও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। কঠিন হয়ে যাচ্ছে রোগীকে সুস্থ করে তোলা। শিশু এবং স্থূলকায় রোগীদের নিয়েই বাড়ছে উদ্বেগ। দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশসহ স্বাস্থ্য প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের অভিজ্ঞতা বলে, বিপদ একা আসে না। রোগের বেলায়ও তাই। ডেঙ্গুর সঙ্গেই রক্তচক্ষু দেখিয়ে চলেছে ম্যালেরিয়াও। করোনা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি টেস্টের খরচ এখনও যথেষ্ট বেশি। তাই বহু পরিবার সময়মতো টেস্ট করাতে পারে না। তার ফলে সঠিক রোগনির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসার সুযোগ অনেকের ক্ষেত্রে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাতেই বিপদ বাড়ছে বেশি। সরকারের উচিত, পুরো ব্যাপারটিতে নজর দেওয়া। অন্যথায় উৎসবের আনন্দ সবাইকে স্পর্শ করতে পারবে না।