যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
এবার পাশে রাখতে হচ্ছে মোদি জমানাকে। এখনও পর্যন্ত ১২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে মোদি সরকার। তাঁদের মধ্যে ১১৮ জন বিভিন্ন অবিজেপি দলের। অর্থাৎ চলতি জমানায় ৯৫ শতাংশের বেশি বিরোধী নেতা সিবিআইয়ের ঘানি টানছেন। শীর্ষে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ৩০ জন নেতার উপর সিবিআই খাঁড়া নামিয়ে আনা হয়েছে। এই তালিকায় সোনিয়া গান্ধীর দলের নেতা ২৬ জন। বাকি অবিজেপি দলগুলির মধ্যে রয়েছে আরজেডি (১০), ওয়াইএসআরসিপি (৬), বিএসপি (৫), বিজেডি, টিডিপি, টিআরএস, আপ, ডিএমকে, সিপিএম, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি প্রভৃতি। গত আটবছর চারমাসে সিবিআইয়ের খাতায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতার সংখ্যা মাত্রই ৬! লক্ষণীয় যে, সেই অভিযোগও নামেই। বিজেপির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিবিআই তৎপরতা নজরে পড়ে না। উপর্যুক্ত তথ্য বলছে, ইউপিএ জমানায় সিবিআই নিরপেক্ষ না-হলেও এতখানি একপেশে ছিল না। তারপরেও আদালত সিবিআইকে ‘খাঁচাবন্দি তোতাপাখির’ সঙ্গে তুলনা করতে বাধ্য হয়েছিল (২০১৩)।
তাহলে মোদিযুগের সম্পূর্ণ একচক্ষু সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স প্রভৃতি কেন্দ্রীয় এজেন্সির অতি সক্রিয়তাকে কোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত? তাই বিরোধীরা বারবার এই অভিযোগ তুলছেন যে, মোদিযুগে সিবিআই, ইডি প্রভৃতি কেন্দ্রীয় এজেন্সি বস্তুত শাসকের রাজনৈতিক হাতিয়ারে রূপান্তরিত হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি আর কোনওভাবেই স্বশাসিত নেই, বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের নিমিত্ত পরিচালিত। আরও স্পষ্ট করে বলা যায় যে, এই অস্বচ্ছ নীতির নেপথ্যে কাজ করছে চিহ্নিত কয়েকটি রাজ্যে ডবল ইঞ্জিন সরকার প্রতিষ্ঠার গেরুয়া এজেন্ডা। ভারতের বিরাট দুর্দশার মূল কারণ দুর্নীতি এবং তা রুখতে না-পারার সীমাহীন ব্যর্থতা। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বক্ষণের লড়াইটাই কাম্য। একইসঙ্গে দুর্নীতি রোখার নামে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ততোধিক নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এখনও সচেতন হওয়া উচিত সরকারের। মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ (১৮ আগস্ট, ২০২১) ধার করে বলতে হচ্ছে—নির্বাচন কমিশন এবং সিএজির মতোই স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থার চরিত্র কেন্দ্রীয় এজেন্সিরও ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি। বিচারপতি এন কিরুবাকরণের বেঞ্চ এই সুপারিশও করে যে, ‘কেবলমাত্র সংসদের কাছেই সিবিআইয়ের দায়বদ্ধ থাকা উচিত।’ এই প্রসঙ্গে বেঞ্চের মন্তব্যটিও তাৎপর্যপূর্ণ, ‘এই আদেশ, খাঁচাবন্দি তোতাকে (সিবিআই) মুক্তি দেওয়ারই একটি চেষ্টা।’