যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
দেশজুড়ে লকডাউনের সময় গরিব মানুষকে কিছুটা সুরাহা দিতে রেশনের মাধ্যমে বিনামূল্যে চাল-গম দেওয়া শুরু করেছিল কেন্দ্র। লকডাউন উঠে গেলেও এখনও বহু পরিবারের রোজগেরে মানুষটি তাঁর হারানো কাজ ফিরে পাননি। বেকারত্বের সংখ্যাও অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে অনেকেরই মজুরি কমেছে। বহু ছোট-মাঝারি শিল্পসংস্থা ও দোকানের ঝাঁপ এখনও বন্ধ। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, গত মাসে পণ্যসামগ্রীতে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১২.৪ শতাংশ, খুচরো মূল্যবৃদ্ধি প্রায় ৭ শতাংশ। নেমেছে টাকার দাম। করোনার পরবর্তীকালে দেশের এমন জ্বলন্ত ছবিটা চোখের সামনে ভাসলেও এমাসের পরেই কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য রেশনে বরাদ্দ বিনামূল্যের চাল-গম দেওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! কারণ গরিব মানুষকে বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী দেওয়ার মতো নাকি অর্থ নেই কেন্দ্রীয় কোষাগারে! অথচ প্রধানমন্ত্রীর ৭২তম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে ৯০০ কোটি টাকা খরচ করে আটটি চিতা আনা হয়েছে। তাদের ভরণপোষণের জন্য বছরে খরচ হবে ৫০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি চলছে মোদিকে ‘মহাত্মা’ করে তুলতে পক্ষকাল ধরে জন্মদিন পালনের বিস্তর আয়োজন! অথচ গরিবের রেশনে টান পড়তে চলেছে! অবাক করা কাণ্ডই বটে!
এখানেই থেমে থাকছে না কেন্দ্রীয় সরকার। গণবণ্টন ব্যবস্থায় দেশের ৮১ কোটি গরিবকে সস্তায় চাল-গম দেয় কেন্দ্র। ২০১৩ সালের ‘খাদ্য সুরক্ষা আইন’ মোতাবেক সস্তায় খাদ্যশস্য পাওয়া রেশন গ্রহীতাদের অধিকার। এজন্য বছরে সরকারের খরচ হয় ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৫২ কোটি টাকা। বিজেপি সরকার অবশ্য এত টাকা খরচ করতে আর রাজি নয়। ধনকুবের তোষণকারী এই সরকার কর্পোরেটদের করের টাকায় কিছুটা ছাড় দিলেও গরিবদের কথা ভাবতে প্রস্তুত নয়। তাই রেশনে তিন টাকা দরের চাল দশ টাকা, দু’টাকা দরের গম ন’টাকা ও এক টাকা দরের দানাশস্য ৮ টাকা করার চিন্তাভাবনা শুরু করছে! অর্থাৎ সবক্ষেত্রেই কেজিতে সাত টাকা করে বৃদ্ধি! গরিবের উপর এই বাড়তি খরচের বোঝা চাপিয়ে রেশন থেকে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা বাঁচাতে চায় কেন্দ্র। কমাতে চায় গরিব রেশন গ্রাহকের সংখ্যাও। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় এখন গ্রামের ৭৫ এবং শহরাঞ্চলের ৫০ শতাংশ গরিব মানুষ সস্তায় চাল গম দানাশস্য পান। এই গ্রাহকের সংখ্যা কমিয়ে গ্রামাঞ্চলে ৬০ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে ৪০ শতাংশ করতে উদ্যোগী কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিলমোহর পড়লেই নতুন দাম কার্যকরী হতে পারে। আসলে মোদি জমানায় গরিবদের ভাতে মারতে এক চমকপ্রদ অর্থনীতি চলছে। একদিকে মোদিভক্ত শিল্পগোষ্ঠীর সম্পদ বাড়ছে কয়েকগুণ, মুষ্টিমেয় বড়লোকের হাতে দেশের একের পর এক সম্পদ চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে গরিব হচ্ছে আরও গরিব। এবার করোনা আবহে এতদিনের ফ্রি রেশন দেওয়ার খরচ তুলতে এক নয়া কৌশল নিচ্ছে কেন্দ্র। রেশনের খাদ্যশস্যের দাম বাড়িয়ে সরাসরি গরিবের পেটে লাথি মারার পরিকল্পনা করছে! দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলির কাছে সত্যিই এবার প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ কোষাগার সামলাতে এধরনের প্রয়াস মোদি সরকারের লোক দেখানো ‘জনদরদের’ মুখোশটাকেই টেনে খুলে দিচ্ছে।