শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
আজ হঠাৎ করে যেন আমাদের মনে হয়েছে, জল বাঁচানোই এখন সবচেয়ে বড় কর্তব্য। সেই নিয়ে প্রচারাভিযানও শুরু করেছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যে জল বাঁচান, জীবন বাঁচান—এই স্লোগান নিয়ে মিছিলও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জল যে কতটা জরুরি, সেটা মাথায় রেখেই বৃষ্টির জল সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরও। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে মা উড়ালপুলকে। বৃষ্টির সময় উড়ালপুলের যে জল নেমে এসে রাস্তা ভাসিয়ে দেয়, তা ধরে মাটির তলায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সংবাদে প্রকাশ, একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বর্ষার সময় এই উড়ালপুল থেকে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার কিউবিক বৃষ্টির জল নর্দমায় চলে গিয়ে নষ্ট হয়। এবার সেই জলকে পিলারগুলির গা ঘেঁষে পাইপ দিয়ে পাম্পের মাধ্যমে ৪০ থেকে ৫০ ফুট নীচে মাটির ভিতরে ঢোকানো হবে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেকটাই বাড়বে।
জলস্তর কমে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির সমীক্ষা রিপোর্টে উদ্বেগে সরকার। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, জলস্তর কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ জলে ধাতব পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেই কারণে জলে আর্সেনিকের প্রকোপ বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়ে যায়। শুধু তাই নয়, জলস্তর কমে যাওয়ায় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্রীষ্মের সময় বহু বহুতল বাড়িতে পাম্প চালিয়েও জল ওঠে না। জলের অভাব দেখা দেয় শহর ও শহরতলিতে। তাই বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবারের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে কেএমডিএ। তার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনায় সিলমোহর দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
মন্ত্রীর মতে, যেভাবে মাটির নীচ থেকে জল তোলা হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে চরম অসুবিধা দেখা দিতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখেই বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। যার প্রথম পদক্ষেপ মা উড়ালপুল দিয়ে শুরু হবে। ওই উড়ালপুলের পড়া বৃষ্টির জল ধরে মাটির তলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার জেনেছে, নেদারল্যান্ডসে এ ধরনের প্রকল্প রয়েছে। সে কারণে সেখানকার বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে বাড়ি তৈরির প্ল্যানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নিউটাউনে যেসব বাড়ি তৈরি হচ্ছে, সেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের সংস্থান থাকছে। এটা সব বহুতলে বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা রয়েছে। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যতে জল নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে, এই আশঙ্কাতেই নানা ধরনের পরিকল্পনা করছে রাজ্য পুর দপ্তর। বিল্ডিং প্ল্যানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বাধ্যতামূলকের জন্য আইনে সংশোধনী আনা হবে বলে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন।
অতএব, গায়ে যখন তাপ লেগেছে, তখন আগুন নেভানোর কথা মনে পড়ার মতো হলেও একটা বিন্দু অন্তত সংরক্ষণের যে ভাবনা এসেছে, তাও সাধুবাদযোগ্য। বহু দেরি হয়ে গেলেও আমরা যে সামান্যতম পরিবেশ সচেতন হতে চলেছি, এটা তারই প্রথম পদক্ষেপ বলা যায়। অনেক আগে গঙ্গার জল কলকাতার রাস্তায় সরবরাহ করা হতো। যাতে করে নিত্যদিনের ব্যবহার্য বহু প্রয়োজন মিটত। এখন সেসব প্রায় নেই বললেই চলে। বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত জল সরবরাহ করতে গিয়ে রোজ লক্ষ লক্ষ গ্যালন পানীয় জল নর্দমা দিয়ে বয়ে চলে যায়। অন্যদিকে, মাটির তলার বিশাল ভাণ্ডার শূন্য করে ফেলছি আমরা। শুধু একা মুখ্যমন্ত্রী জল ধরো, জল ভরোর ডাক দিলে হবে না, রাজ্যবাসীকেও সেই ব্যাপারে সতর্ক পদক্ষেপ করতে হবে। কারণ নবজাতকের কাছে এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গীকার সকলকেই নিতে হবে।