শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
এতদিন নিয়ম ছিল, একজন পুরুষ কর্মী ৩৮ সিএফটি এবং
একজন মহিলা কর্মী ২৮ সিএফটি মাটি কাটলে তবেই রোজের মজুরি ১৯১ টাকা হাতে পাবেন। কেন্দ্রের নয়া নিয়মে সেই পরিমাণ বাড়িয়ে করে দেওয়া হয়েছে ৬০ সিএফটি। পুরুষ-মহিলা ভেদাভেদও তুলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের অভিযোগ, একজন মানুষের পক্ষে একদিনে এতটা মাটি কাটা সম্ভবই নয়। এই কাজ শেষ করতে কম করে দু থেকে তিনদিন সময় লাগবে। অন্যদিকে, নয়া নিয়মে একদিনে যেটুকু কাজ একজন শ্রমিক করছেন, মজুরি মিলছে মাপ করে ঠিক সেইটুকুর জন্য। এমনও নাকি হচ্ছে, কেউ ৩৫ টাকা পাচ্ছে, কেউ ৭৫-৮০ টাকা। এসবের নিট ফল হল, গ্রামাঞ্চলে একদা লোভনীয় প্রকল্পে কেউ কাজ করতেই রাজি হচ্ছে না। মুখ থুবড়ে পড়েছে এতবড় একটা প্রকল্প। যার হাত ধরে গ্রামের অর্থনীতিতে যে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছিল, তাও ধরাশায়ী। পুজোর মুখে দোকানদানিতে তেজ নেই বিক্রিবাটায়। হতাশা গ্রাস করেছে গোটা বাংলাকে।
এমন একটা পরিস্থিতিতে বিজেপি কিন্তু আড়ালে মুচকি হাসছে। ভাবখানা এমন, এতদিন একে হাতিয়ার করেই ভোটব্যাঙ্ক বাড়িয়েছো। এখন দেখো, কেমন লাগে। অন্যদিকে, তৃণমূলের সঙ্কটটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। কারণ কাটমানির কাঁটায় নেতৃত্বের একাংশ ইতিমধ্যেই বিদ্ধ হয়ে জনতার কাঠগড়ায়। নতুন করে বিপথগামী হওয়া তাদের পক্ষে এই মুহূর্তে বিপজ্জনক। তাই তাদের একটা অংশ নিজেদের বাঁচাতে এবং প্রতিপক্ষ বিজেপিকে বিপাকে ফেলতে অস্ত্র হিসেবে একে ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। এমনিতেই দেশের অর্থনীতির অবস্থা সঙ্গীন। তারপরে ১০০ দিনের কাজে নতুন নতুন নিয়ম যে মোদির ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপেরই নমুনা, এমন প্রচারও তৃণমূলের তরফে করা শুরু হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে একদিকে এতবড় একটা প্রকল্পে কাজ প্রায় বন্ধের মুখে। পাশাপাশি একে নিয়ে শুরু হয়েছে চরম রাজনীতি। মাঝখান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেইসব মানুষ, যারা কাজ করে দুটো পয়সার মুখ দেখতে পাচ্ছিল।
তবে এটাও ঠিক, এই প্রকল্প ঘিরে উন্মাদনায় সামাজিক কাঠামোতেও বদল আসছিল। কিছু অসৎ এবং স্বার্থান্বেষী নেতার কারসাজিতে কম পরিশ্রমে হাতে নগদ কড়কড়ে টাকা এসে যাওয়ায় পরিশ্রম বিমুখতা বেড়েই চলছিল। দোকানে, কলকারখানায়, বাড়িতে অন্য কাজের জন্য শ্রমিক সঙ্কট তীব্র আকার নিচ্ছিল। এরকম একটা অবস্থায় কেন্দ্রের নয়া নিয়ম পরিশ্রম বিমুখতার ওই চেনা রোগের বড় দাওয়াই বলা চলে। তবে এটাও ঠিক, কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া কাজের পরিমাণ সংক্রান্ত যে অভিযোগ উঠেছে, তারও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা উচিত। রাজ্য ১০০ দিনের কাজে বিগত কয়েক বছরে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। পেয়েছে শ্রমদিবস সৃষ্টিতে সেরার সম্মান। এখন যদি রাজ্যকে স্রেফ টাইট দেওয়ার জন্য কেন্দ্র ওই পথে পা বাড়ায়, তাহলে তা খুবই দুঃখজনক এবং হাজার হাজার রাজ্যবাসীর সঙ্গে প্রবঞ্চনারই সমান।