শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
খবরে প্রকাশ, রাষ্ট্রপতি বোলসোনারোর প্রতি সমর্থন বোঝাতে, ১০ আগস্ট এই কৃষকরা আগুন ধরিয়ে দেন জঙ্গলের বেশ কিছু জায়গায়। এর ফলে স্যাটেলাইট ছবিতে ধরা পড়ে আগুনের উৎসের আধিক্য। পারা প্রদেশের স্থানীয় সংবাদপত্র ‘ফলহা দো প্রোগ্রেসো’-তে প্রথম প্রকাশিত হয় অগ্নিকাণ্ডের খবর। এই কর্মকাণ্ডের এক উদ্যোক্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি জানায়, আমরা রাষ্ট্রপতিকে দেখাতে বদ্ধপরিকর যে, আমরা কাজ করতে চাই, এবং সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন জঙ্গলবিহীন এলাকাগুলিকে আগুন লাগিয়ে পরিষ্কার করে দিতে পারব আমরা। কিন্তু, সেই আগুন এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে জঙ্গলের জনবসতিহীন এলাকায় যেমন বেলাগাম ছড়িয়ে পড়ছে, তেমনই হাত বাড়াচ্ছে উত্তর ব্রাজিলের জনবহুল এলাকাগুলির দিকেও। বিশেষভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দেশের দুটি রাজ্য—রোনদোনিয়া এবং আক্রে। ইতিমধ্যে মানুষের প্রাণহানির কোনও খবর না-পাওয়া গেলেও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক হাজার হেক্টর জঙ্গল, মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য পশুপাখির।
সমালোচকরা বলছেন, বোলসোনারোর নীতির ফলে সাহস বেড়েছে কাঠের কারবারি, কৃষক, এবং খনিজীবীদের, যাঁরা অবৈধভাবে জঙ্গল সাফ করার পক্ষে। আন্তর্জাতিক মহলের মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও নেভানো যায়নি হাজার হাজার অগ্নিকুণ্ড। আমাজনের এই দুর্দিনে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশ আজ নড়েচড়ে বসছে। কিন্তু দক্ষিণপন্থী এই নেতা এখনও পর্যন্ত আগুন নেভানোর জন্য সবরকম জরুরি আন্তর্জাতিক সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছেন। ইতিমধ্যেই বোলসোনারোর শিথিল পরিবেশ নীতির কারণে আমাজনের জঙ্গল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গঠিত ফান্ডে অর্থ প্রদান করা বন্ধ দিয়েছে নরওয়ে এবং জার্মানি। আমাজনের এই সেলভা অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা শুধুমাত্র ব্রাজিল বা লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রগুলির জন্যই নয়। আমাজন জঙ্গল বিনাশ হলে বিশ্বের উষ্ণতা চিরতরে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। শিল্পোন্নত দেশগুলি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। ভারত বা চীনের মতো অত্যধিক জনসংখ্যার দেশগুলিও বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির জন্য সমপরিমাণ দায়ী বলা যায়। ফলে, বিশ্ব উষ্ণায়ন ইতিমধ্যেই যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে আমরা নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারছি উষ্ণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বদলে যাচ্ছে আবহাওয়াও। ২০১৭ সালের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, আমাজন অববাহিকা যে পরিমাণ কার্বন গ্রহণ করে, তা অববাহিকার দেশগুলির নির্গত কার্বনের সমান। ফলে বনভূমি পুড়ে গেলে অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমাজনের রেন ফরেস্ট শুধু ওই এলাকার জলচক্রকেই প্রভাবিত করে না, সারা পৃথিবীর জলচক্রকেও প্রভাবিত করে। কে না জানে, এখনও বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিহত করতে অন্যতম ভরসা আমাজন অরণ্যই। আমাজন জ্বলা মানেই আমাদের ভবিষ্যৎও পুড়ে খাক হওয়া। কারণ, বায়ুদূষণ দেশকালের বেড়াজাল মানে না। কিন্তু কী আশ্চর্য—রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো নাকি বেহালা বাজাচ্ছিলেন; এখন আমাজন অরণ্য যখন পুড়ছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো নাকি দেখছেন কমেডি শো!