শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
তবু সব ধর্মই শেষমেশ মানুষে মানুষে মিলনের বার্তা রেখেছে। বলেছে, ‘‘সবার উপরে মানুষ সত্য।’’ তবু ভারতবাসীর মনের গ্লানি দূর করা সম্ভব হয়নি। তখন স্বামী বিবেকানন্দ বললেন—‘‘হে ভারত, ... ভুলিও না—নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই! ... সদর্পে বল—আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই। বল—মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই। ... ভারতবাসী আমার প্রাণ, ...।’’ কিন্তু স্বামীজিও কি ভারতবাসীকে তাঁর স্বপ্নের মতো করে মিলিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন। না। পরে কবি নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করলেন—‘‘মানুষ নাই আজ, আছে শুধু জাত-শেয়ালের হুক্কাহুয়া।’’ তারপর গঙ্গা গোদাবরী কাবেরী ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কত জল বয়ে গেল, তবু রয়ে গেল—‘জাতের নামে বজ্জাতি’ আর ‘জাত জালিয়াৎ’-দের ‘জুয়া’ খেলা। ভারত মঙ্গলে, চাঁদে যান পাঠাচ্ছে। চাঁদে মানুষ পাঠাবার তোড়জোড় করছে। স্বপ্ন দেখছে এমনকী সূর্য অভিযান করারও। ঠিক সেইসময়ও আমরা অবাক হয়ে দেখছি, জাতের নামে বজ্জাতি একইভাবে চলেছে! যেমন বুধবারের কাগজে খবর বেরিয়েছে—‘‘নিচু জাতের লোক, তাই সাংসদকে ঢুকতে দেওয়া হল না কর্ণাটকের গ্রামে’’! ভাবা যায়! এই বজ্জাতির শিকার যে সে মানুষ নন। তিনি কেন্দ্রের এবং কর্ণাটক রাজ্যের শাসক দলের এমপি। সোমবার বিজেপি এমপি এ নারায়ণস্বামী গিয়েছিলেন তাঁর নির্বাচন ক্ষেত্র চিত্রদুর্গের অন্তর্গত গোল্লারাহাত্তি গ্রামে। উদ্দেশ্য একটি জলপ্রকল্পের উদ্বোধন। অমনি বেঁকে বসে সেখানকারই কিছু বাসিন্দা। তাদের বক্তব্য, এই গ্রামে নিচু জাতের কোনও মানুষকে ঢুকতে দেওয়ার রীতি নেই। এটাই তাদের ‘ঐতিহ্য’! প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কিছু মানুষের বাধা পেয়ে নারায়ণস্বামী গ্রাম ছেড়ে চলেই যান। তিনি এ নিয়ে জোর করেননি কিংবা পুলিসেও অভিযোগ জানাননি। কিন্তু কেন? নারায়ণস্বামী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আমি ঝামেলায় জড়াতে চাইনি।’’
এমপির উচিত ছিল, জোরালো প্রতিবাদ জানানো। এটা শুধু তাঁর সম্মান এবং অধিকারের প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটি গোটা সমাজের। তাঁর মতো একজন সচেতন ও ক্ষমতাধর মানুষ এই সামান্য প্রতিরোধের সামনে নতজানু হওয়ার ফলে সমাজে বিরূপ বার্তাই গেল। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সঙ্কীর্ণ মানুষগুলি ভেবে নিল যে তারা এখনও যা খুশি করতে পারে। তাদের রুখে দেওয়ার হিম্মত কারও নেই। শাসক দলের একজন এমপির যদি এই হাল হয় তো সাধারণ মানুষকে, সাধারণ প্রতিবাদীদের সঙ্গে ওই বদমাশরা কী আচরণ করে তা অনুমেয়। এমপি ঝামেলায় জড়াতে চাননি বলেছেন। কিন্তু সন্দেহ হয় যে তিনি ভোটব্যাঙ্ক ধাক্কা খাওয়ার ভয় পেয়েছিলেন—যেমনটা পায় আর পাঁচটা দল এবং রাজনীতির কারবারি। অথচ, তোষণ ও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির মুণ্ডপাত করাই বিজেপির ইউএসপি। সুখের কথা এই, স্থানীয় প্রশাসন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তির ব্যবস্থাও হবে বলে প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল—এই তদন্ত ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির গণ্ডি অতিক্রম করতে পারবে তো? দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল যতদিন না এই প্রশ্নে যথেষ্ট সাহসী নির্মোহ নিরপেক্ষ হয় ততদিন এই অভিশাপ থেকে মুক্তি নেই। আমরা সেই সোনালি দিনটিরই পথ চেয়ে থাকব।