উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
ধর্মঘট-পর্বে জুনিয়র ডাক্তারদের মূল দাবি ছিল, কর্মস্থলে নিরাপত্তা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলার ডাক্তাররা আমাদের কাছে গর্বের। তাঁদের নিগ্রহের ঘটনা কোনওভাবে বরদাস্ত করা হবে না। চিকিৎসক-হেনস্তার ঘটনা ঘটলেই তিনি কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন রাজ্য পুলিসের ডিজি বীরেন্দ্র এবং কলকাতার পুলিস কমিশনার অনুজ শর্মাকে। আন্দোলনকারীদের সামনেই তাঁদের নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হিসেবে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানান অতিরিক্ত মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।
মমতার সঙ্গে কথা বলে জুনিয়র ডাক্তাররা এতটাই খুশি ছিলেন যে, বৈঠক শেষে সম্মিলিতভাবে তঁাদের আর্জি ছিল, ম্যাডাম, আপনি দয়া করে এনআরএসে আসুন। আমরা স্বাগত জানাব। গোড়া থেকেই তাঁদের অনুরোধ ছিল, সেদিনের হামলায় গুরুতর আহত পরিবহকে একবার দেখে আসার। এদিনও সেকথা বললে, মমতাও হাসতে হাসতে মাস্টারস্ট্রোক দেন। বলেন, তোমাদের জন্যই তো যেতে পারছি না। তোমরা ধর্মঘট তুলছ না যে! সময় নষ্ট করো না। আমাকে ওকে দেখতে যেতে দাও। সন্ধ্যায় ধর্মঘট ওঠার পর মমতাও কালবিলম্ব না করে রওনা দেন পরিবহকে দেখতে।
মমতার সঙ্গে কথার শুরুতে কিছুটা অভিযোগের সুরে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা বলেন, ১০ জুন ঘটনার পরপরই ফের লোকজন নিয়ে এসে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল বাড়ির লোকজন। সেকথা পুলিসকে জানানোও হয়। তা সত্ত্বেও দু’শো লোক হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। এ কথা জেনে মমতা পুলিসকর্তাদের ভর্ৎসনা করে বলেন, এমন হল কেন? ঘটনার তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি। জুনিয়র ডাক্তারদের আশ্বস্ত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনও সমস্যায় তাঁদের পাশে আছেন তিনি। কোথাও তা না মিটলে তাঁরা যেন কালীঘাটে সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য দপ্তরের পরবর্তী বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে (স্বাস্থ্য)। যখন তখন হাসপাতালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঢুকে পড়া নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের ক্ষোভও ঠান্ডা মাথায় শুনে মমতা নিজেই স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্দেশে ভর্ৎসনার সুরে বলেছেন, দামি দামি যন্ত্রপাতি কিনে কেন ফেলে রেখেছেন? এরপর তো জং ধরে যাবে। শুনে করতালি মুখর হয় সভাগৃহ। সবমিলিয়ে জুনিয়র ডাক্তার এবং সরকারের দ্বৈরথ নিয়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনা ঠান্ডা মাথায় প্রশমিত করে এদিন দু’পক্ষই যথেষ্ট পরিণত বোধের পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বৈঠক শুরুর আগে পর্যন্তও যে রণংদেহি মেজাজে ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, নবান্নে তাঁর আঁচটুকুও ছিল না। উল্টে ‘আপনিই আমাদের অভিভাবক’, ‘আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি’, ‘আপনি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছেন’, ‘আপনাকে চাই, বিশ্বাস করি’— এমন স্তুতিতে ভরিয়ে দেন ঘণ্টাকয়েক আগেও আগুন ঝরানো ভাষণ দেওয়া জুনিয়র ডাক্তাররা। মমতাও ডাক্তারদের ৩১ জনের প্রতিনিধিদলের লাগাতার প্রশ্ন এবং অভিযোগের উত্তর দিয়ে গিয়েছেন ঠান্ডা মাথায় একবারের জন্যও মেজাজ না হারিয়েই। মমতার চটজলদি উত্তরে শুধু নবান্নের সভাগৃহই করতালিতে ভরে যায়নি, এনআরএস সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে টিভি এবং নিজেদের মোবাইলে ‘লাইভ সম্প্রচার’ দেখা জুনিয়র ডাক্তাররাও উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি।
এদিকে, সন্ধ্যায় ধর্মঘট তোলার আগে পর্যন্ত কিন্তু বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অন্যান্য দিনের মতো ভোগান্তির চিত্র দেখা যায়। মালদহে চিকিৎসা না পেয়ে সাপে কামড়ানো এক শিশুর মৃত্যু হয়। আইএমএ’র দেশব্যপী ধর্মঘটের জন্য ভোগান্তি আরও বাড়ে।