নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: শুধু বাউলই নয়, আন্তর্জাতিক গোসাঁই পরবে ভিড় টানছে হস্তশিল্পও। শিল্পীরা নিজেদের হাতে স্টলে বসেই তৈরি করছেন নানা সামগ্রী। ঘর সাজানো শো-পিস থেকে জামাকাপড়, মেয়েদের নানা লোকায়ত গয়নাও মিলছে আরামবাগের তেঘরিতে গোসাঁই পরবের মাঠে। রয়েছে ধাত্রীগ্রামের পিঠেপুলিও। ছোটদের বিনোদনে বসেছে নাগরদোলাও। বৃহস্পতিবার ছিল আন্তর্জাতিক গোসাঁই পরবের দ্বিতীয় দিন। আখড়ায় বাউল শুনতে ভিড় জমছে অনুরাগীদের। বিকেলে হস্তশিল্পের স্টলগুলিতেও থিকথিকে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এতে হস্তশিল্পীদের মুখেও হাসি ফুটছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রায় ১৯টি জেলা থেকে হস্তশিল্পীরা এসেছেন। খোয়াই, সোনাঝুরির পাশাপাশি রয়েছেন আরামবাগ মহকুমার স্থানীয় হস্তশিল্পীদেরও স্টল। গোসাঁই পরবের মাঠ যেন বাউলের গ্রাম। তাই মাঠ সেজেছে বাউলের আঙ্গিকেই। একতারা, দোতারার কাট আউটের পাশাপাশি মূল মঞ্চ ছাড়াও রয়েছে ধুনিঘর ও দু’টি আখড়া। অবিরাম সেখানে বাউলে মেতেছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিল্পীরা। গোসাঁই পরব টিমের অন্যতম সদস্য শরিফুল ইসলাম বলছিলেন, ছ’বছরের এই গোসাঁই পরবের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে ফেরে। আমন্ত্রিত শিল্পীদের পাশাপাশি অনেক মনের মানুষই ভালোবাসার টানে আসছেন। তাঁরা বাউল শোনাচ্ছেন।
গোসাঁই পরবের মাঠে সাজানো হয়েছে বাউলের প্রতীকী মূর্তি দিয়ে। সেগুলি তৈরি করেছেন শিল্পী লোকনাথ মহান্ত। এছাড়া সদানন্দ মালিক, শুভদীপ নন্দীরা বাঁশপাতা, ঝুড়ি, কুলো দিয়ে বানিয়েছেন গোসাঁই পরবের সারিবদ্ধ স্টল। গোসাঁই পরবে দু’বছর ধরে আসছেন পূর্ব বর্ধমানের অগ্রদীপের শিল্পী সন্ন্যাসী ভাস্কর। তিনি ফোল্ডিং, বাবুই দড়ির টুল, কাঠের টেবিল চেয়ার, শো পিসের স্টল করেছেন। তিনি বলেন, এখানে আয়োজন ভালো হয়। বিক্রিবাটাও শুরু হয়েছে আমাদের। বাড়ি থেকে কাঠামো বানিয়ে এনে এখানেই রঙের কাজ করছি। মুর্শিদাবাদের ইসলামপুর থেকে জুটের তৈরি নানা হাতের কাজ নিয়ে এসেছেন জামিনা বিবি। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে আসছি। বিক্রিবাটাও হচ্ছে। থাকার ব্যবস্থাও ভালো। এদিন গোসাঁই পরবের স্টলে এসেছিলেন আরামবাগের বাসিন্দা মধুমিতা কোনার, অতসী রায়রা। তাঁরা বলেন, ফেব্রিক, কাঁথাস্টিচের নানা পাঞ্জাবি, কুর্তি এসেছে। এছাড়া রয়েছে নানা গয়নাও। সেগুলি দেখছি। কিছু কিনছিও। গোসাঁই পরবের টিমে পুরুষদের মতো মহিলারাও নানা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা, সৌমি, শতাব্দীরা বলেন, সারা বছর ধরেই আমরা গোসাঁই পরবের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। পরবের আগে প্রচার থেকে মাঠ পরিষ্কার, রং করা, গাছের পরিচর্যা, অতিথি আপ্যায়ন, সবই থাকে আমাদের কাঁধে। -নিজস্ব চিত্র