বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
প্রচ্ছদ নিবন্ধ

‘না’ বলার সুযোগ ছিল না
পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

আটের দশকের কথা। ডোভার লেনে বাজাবেন উস্তাদ জাকির হুসেন। কিন্তু কোনও কারণে আসতে পারেননি উনি। এদিকে অনুষ্ঠানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। তিন ঘণ্টা আগে বাড়িতে হাজির উদ্যোক্তারা। ‘না’ বলার কোনও সুযোগ ছিল না। গাড়ি করে নিয়ে গেলেন। সেদিন বেহালায় ছিলেন এম এস রাধাকৃষ্ণণ, বাঁশিতে এন রামানি। উস্তাদকে মিস করলেও অনুষ্ঠানটি ভালো হয়েছিল। খুব মজা করে বাজিয়েছিলাম।
ডোভার লেন। শিল্পীদের স্বপ্নের চারণভূমি। এখানে অনুষ্ঠান করার আকাঙ্খা ছিল আজন্ম। হবে নাই বা কেন! ছোটবেলা থেকে এই সঙ্গীত সম্মেলনের কথা শুনেছি। প্রথম অনুষ্ঠান ১৯৭৮-৭৯ সালে। পণ্ডিত মনিরার নাগের সঙ্গে। সেতার-তবলার যুগলবন্দি। তখন আমি সবে নিজেকে তৈরি করছি। খুব উৎসাহ নিয়ে সেদিন অনুষ্ঠান করেছিলাম। আজও যখন মঞ্চে উঠি, একইরকম আবেগ অনুভব করি। শুধু আমি নয়, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রত্যেক শিল্পী এই মঞ্চে সুযোগ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। এই জায়গাটাই আলাদা। তাই শিল্পীরাও প্রস্তুতির কোনও ত্রুটি রাখেন না।
তবলা-লহরার পাশাপাশি বহু শিল্পীর সঙ্গে অনুষ্ঠান করেছি। পণ্ডিত দীপক চৌধুরী, পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, বেগম পারভিন সুলতানার মতো বিশিষ্ট শিল্পীদের সঙ্গে সঙ্গত করার সুযোগ পেয়েছি। নানান অভিজ্ঞতা হয়েছে।
সিংহি পার্ক, বিবেকানন্দ পার্ক থেকে শুরু করে আজকের নজরুল মঞ্চ। ডোভার লেনের অনুষ্ঠান বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে। তবে বিবেকানন্দ পার্ক বা সিংহি পার্কে খোলা আকাশের নীচে প্যান্ডেলে অনুষ্ঠানের মজাটা ছিল একদম আলাদা। সেটার অভাব অনুভব করি আজও। সিংহি পার্কে পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেম ললিত ও ললিত পঞ্চম আজও মনে আছে। খুব সিরিয়াস ছিলেন। অনুষ্ঠানের আধঘণ্টা আগে গ্ৰিনরুমে একা থাকতেন। এই ডোভার লেনেই জীবনের শেষ অনুষ্ঠান করেছিলেন তিনি। সিংহি পার্কে একবার উস্তাদ আমজাদ আলি খান ও বেগম পারভিন সুলতানা—একই দিনে দু’জনের অনুষ্ঠান। আমি পারভিনদির সঙ্গে বাজাব। এক সময় দুই শিল্পীই বলতে লাগলেন, ভোরের ফ্লাইট থাকার কারণে একটু আগে সুযোগ দিতে হবে। উদ্যোক্তারা পড়লেন মহা সমস্যায়। মঞ্চের দু’প্রান্তে দু’জন দাঁড়িয়ে। স্টেজে বসার অপেক্ষা শুধু। আগের অনুষ্ঠান শেষ হতেই আমজাদ আলি খান সাহেব সোজা সরোদ নিয়ে মঞ্চে উঠে গেলেন। পারভিনদি পরে গাইলেন। 
বিবেকানন্দ পার্কের গ্ৰিনরুমের একটা মজার ঘটনা বলি। সারারাত অনুষ্ঠান চলছে। শিল্পীদের জন্য চা, কচুরি সহ নানান মুখরোচক খাবার আসছে স্টল থেকে। একবার কিশোরী আমনকর গান করবেন। ভোরবেলায় শেষ অনুষ্ঠান। গ্ৰিনরুমে বসে রয়েছেন। হঠাৎ আব্দার করলেন, চা-পকোড়া দিতে হবে। সেটা না খেয়ে গাইতে উঠবেন না। চা পাওয়া যাবে। কিন্তু পকোড়া? এদিকে মঞ্চ খালি পড়ে। শ্রোতারা অপেক্ষায়। শেষমেষ একজনের বাড়ি থেকে পকোড়া ভেজে নিয়ে আসা হল। খেয়ে খুব খুশি হলেন শিল্পী। মঞ্চে উঠে গান শুরু করতেই শ্রোতারা সবকিছু ভুলে গেলেন। স্বর্গীয় এক অনুভূতি।
ভালো-খারাপ মিলিয়েই জীবন। একবার পণ্ডিত যশরাজের সঙ্গে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু আমি যে বাজাব, সেটা উনি জানতেন না। রাত বারোটা নাগাদ অনুষ্ঠান। আমি তো সময়মতো তবলা নিয়ে হাজির। পণ্ডিতজি এসে বললেন, আমার সঙ্গে এর আগে উনি অনুষ্ঠান করেননি। এত কম সময়ে তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। সেই রাতে যশরাজজির সঙ্গে তবলায় ছিলেন পণ্ডিত মহাপুরুষ মিশ্র। আমায় ফিরে আসতে হয়েছিল।
শিল্পীরা অনুষ্ঠানের জন্য কিছু রাগ বেছে রাখেন। একবার পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সঙ্গে বাজাব। গ্ৰিনরুমে বসে আছি। পণ্ডিতজি ঠিক করলেন রাগ কৌশিকধ্বনি বাজাবেন সন্তুরে। আমাদের একজন কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, তিনিও ওই একই রাগ গাইছেন। এবার ঠিক করলেন, রাগেশ্রী পরিবেশন করবেন। সেটাও গেয়ে ফেলেছেন আগের শিল্পী। শেষে নিজের তৈরি একটি রাগ বাজালেন।
শীতের মরশুম ডোভার লেন অনুষ্ঠান ছাড়া অসম্পূর্ণ। এ যেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি গ্ৰহ। যতদিন চন্দ্র-সূর্য থাকবে, ততদিন এই সঙ্গীত সম্মেলন থাকবে।
1d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

শেয়ার প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে অর্থাগমের সম্ভাবনা।  সন্তানের কর্ম প্রাপ্তির সুখবর পেতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে জটিলতা কিছুটা...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৩.৬৮ টাকা১০৭.৩৮ টাকা
ইউরো৮৭.৬০ টাকা৯০.৯৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
19th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা