বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

সব মতবাদকে হারিয়ে জিতছে আর্থিক ভাতা
সমৃদ্ধ দত্ত

ঠিক যখন মনে করা হচ্ছিল হিন্দুত্ব তথা ধর্মের রাজনীতি অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখনই অপ্রত্যাশিত একটি প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হয়ে ধর্মীয় আগ্রাসনের এই রাজনীতি পিছু হটতে শুরু করেছে। যা বিস্ময়কর এবং অকল্পনীয় ছিল কয়েক বছর আগেও। কিন্তু ভারতবাসীর চোখের সামনে অতি দক্ষিণপন্থী, উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং উগ্র হিন্দুত্বের রাজনীতিকে আপাত নিরীহ একটি ফ্যাক্টর পরাস্ত করে দেওয়ার প্রবল আভাস দেখাতে শুরু করেছে। কী সেই ফ্যাক্টর? আর্থিক অনুদান। কোথাও তার নাম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। কন্যাশ্রী। কোথাও নাম লাডলি লক্ষ্মী যোজনা। কোনও রাজ্যে বলা হয় মাঈয়া সম্মান যোজনা। কেউ বা বলে থাকে লাডলি বহেনা প্রকল্প।  আর তার বাস যাত্রা ফ্রি। কোথাও বলা হচ্ছে ফ্রি বিদ্যুৎ। ফ্রি ল্যাপটপ।  রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ফ্রি কিংবা অধের্ক দামে। বেকার ভাতা। বয়স্ক ভাতা। চাকরি না পেলে স্টাইপেন্ড। ২০২৫ সালের শুরুতেই দিল্লির ভোট এসে চোখে আঙুল দিয়ে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যাচ্ছে যে, ভারতীয় রাজনীতিতে ফের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। বামপন্থা, দক্ষিণপন্থা, সোশ্যালিজম, কমিউনিজম, জাতিসত্তা এবং ধর্মীয় মেরুকরণ, তাবৎ নীতি আদর্শকে হারিয়ে দিয়ে রমরম করে রাজ্যে রাজ্যে অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটাচ্ছে এখন একটিই আদর্শ। পপুলিজম! অর্থাৎ মানুষকে সরাসরি আর্থিক অনুদানসহ নানাবিধ প্রত্যক্ষ সুযোগ সুবিধা প্রদান। এই প্রতিশ্রুতির সামনে হিন্দুরাষ্ট্র অথবা কাস্ট সেন্সাস সব ইস্যু ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ২০২৫ সালে ভারতকে নতুন দিশায় চালিত করছে একমাত্র পপুলিজম। যে দল যত বেশি অর্থ ও পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠা দিতে পারছে, তাদেরই মানুষ ভোট দিচ্ছে। জয় পরাজয়ের নির্ণায়ক আর বামপন্থা, দক্ষিণপন্থা, জাতীয়তাবাদ কিংবা হিন্দু মুসলিম হচ্ছে না। হঠাৎ করে সব দল ঝাঁপিয়ে পড়েছে সব ছাপিয়ে জনতার ব্যাঙ্কে ডাইরেক্ট ক্যাশ ট্র্যান্সফার এবং জীবনের নানাবিধ পরিষেবা ফ্রিতে প্রদান করার ঝুলি নিয়ে। কাজ হচ্ছে হাতে হাতে। 
বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুত্ব প্রজেক্ট ভোটে জেতার ক্ষেত্রে আচমকা বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে। কোনও রাজ্যেই দেখা যাচ্ছে না যে, বিজেপি এই আর্থিক খয়রাতির সামনে নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখে হিন্দুত্বকেই একমাত্র প্রচার এবং ভোটের ইস্যুতে কায়েম থাকতে সমর্থ হয়েছে কিংবা হচ্ছে। পারছে না বিজেপি। বরং আত্মসমর্পণ করছে এই ফ্রি অনুদান দেওয়ার নীতির কাছে। হওয়ার কথা ছিল বিরোধীরা যদি আর্থিক অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের ময়দানে নামে, তাহলে বিজেপি ততোধিক উচ্চগ্রামে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরেই ধর্মের ভিত্তিতে ভোটের রাজনীতি করবে। কিন্তু কই! সেটা তো হচ্ছে না! মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকারকে ভোটের কয়েক মাস আগে ১৫০০ টাকার আর্থিক অনুদান চালু করতে হয়েছে। ঝাড়খণ্ড গরিব রাজ্য। সেখানে বিজেপি এক্সপেরিমেন্ট করেছে। হিন্দুত্বকেই চড়া সুরে প্রচারে ব্যবহার করেছে। কিন্তু হেমন্ত সোরেন তাঁর আর্থিক অনুদানের প্রকল্পকেই জোর দিয়েছেন। এবং বিজেপি পরাস্ত হয়েছে ঝাড়খণ্ডে। অর্থাৎ হেমন্ত সোরেনের মাঈয়া সম্মান যোজনার কাছে হেরে গিয়েছে বিজেপির হিন্দুত্ব। আর তারপরই দেখা যাচ্ছে বিজেপি হিন্দুত্বকে ব্যাকসিটে পাঠিয়ে দিয়েছে। অতএব ঝাড়খণ্ডের তুলনায় অনেক ধনী রাজ্য দেশের রাজধানী দিল্লির আসন্ন ভোটেও আম আদমি পার্টির দেখানো পথেই হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়পক্ষই। কেজরিওয়াল বলেছেন মহিলা সম্মান যোজনায় তিনি ক্ষমতায় এসে ২১০০ টাকা করে দেবেন মহিলাদের। কংগ্রেস ও বিজেপি নিলাম ডাকার মতো করে বলেছে, আমরা সরকারে এসে ২৫০০ টাকা করে দেব।  এরকম ফ্রি পরিষেবা এবং সরাসরি আর্থিক অনুদান দেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তাঁর বিরোধিতা ভেসে গিয়ে এখন বিজেপিও এই স্রোতে গা ভাসাতে বাধ্য হয়েছে। অর্থাৎ প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে বিজেপির একান্ত নিজস্ব হিন্দুত্ব এজেন্ডাও পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে এই নতুন পপুলিজমের রাজনীতিতে।
প্রবল লড়াই শুরু হয়েছে। সকলের চোখের সামনে। অথচ আসলে যেন আড়ালে। একদিকে মনে হচ্ছে ভারত নামক দেশে হিন্দুরাষ্ট্র নামক একটি প্রজেক্ট চলছে। উত্তরাখণ্ডের ন্যায়াসু নামক একটি গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল একটি ঘোষণা। ক্রমেই সেই ঘোষণা ছড়িয়েছে অন্য গ্রামে। গ্রামের প্রবেশদ্বারে একটি  বোর্ড লাগিয়ে বলা হয়েছে হিন্দু ছাড়া এই গ্রামে কেউ যেন না প্রবেশ করে। এই একই বোর্ড একে একে রুদ্রপ্রয়াগ জেলার অন্য গ্রামেও লাগানো হয়েছে। গুজরাতের বিভিন্ন জেলায় বহু গ্রামের প্রবেশপথে লেখা রয়েছে হিন্দুরাষ্ট্রে আপনাকে স্বাগত জানাই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক মসজিদের নীচে মন্দির আছে বলে রাজ্যে রাজ্যে চলছে প্রবল উত্তেজনা। হিন্দুত্বের আগ্রাসী প্রচার। রাজনীতির সাম্প্রতিক চলন প্রত্যক্ষ করে ধরেই নেওয়া হয়েছে যে, বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার বাকি রাজনৈতিক দলগুলিকে হারিয়ে দিয়েছে নীতি ও আদর্শে। কারণ,  বামপন্থা পিছিয়ে পড়েছে আগেই। জওহরলাল নেহরুর সমাজতন্ত্র ঘেঁষা অর্থনীতি কিংবা রাজনীতিও ক্রমেই হয়ে গিয়েছিল অতীত। নয়ের দশকে এসেছিল আইডেন্টিটি পলিটিক্স। অর্থাৎ জাতপাতের আইডেন্টিটি রাজনীতির হাত ধরে একে একে আবির্ভূত হয়েছিল নানাবিধ নতুন আঞ্চলিক দল। বিশেষ করে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে। অর্থাৎ হিন্দি হার্টল্যান্ডে। গোটা নয়ের দশক ধরেই চলেছিল যুযুধান দুই ধারা। একদিকে জাতপাতের আঞ্চলিক পলিটিক্স শক্তিশালী হয়েছে। আবার অন্যদিকে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর আগ্রাসীভাবে অগ্রসর হয়েছে ধর্মের রাজনীতি। সোজা কথায় হিন্দুত্ব পলিটিক্স। সুফলও পেয়েছে সেই রাজনীতি। বহু বছর ধরে চেষ্টা করার পর অবশেষে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতাসীন হয় বিজেপি জোটের সরকার। টিকে যায় পাঁচ বছর। এই গোটা পর্বে সবথেকে ক্ষতি হয়েছে কংগ্রেসের। তাদের ভোটব্যাঙ্ক চারদিক থেকে লুট হয়ে গিয়েছে। দলিত ভোট ছিনতাই করেছেন কাঁসিরাম, মায়াবতী। যাদব ভোট ছিনিয়ে নিয়েছেন মুলায়ম সিং যাদব, লালু প্রসাদ যাদবরা। উচ্চবর্ণের হিন্দু ভোট বিজেপির কাছে। মুসলিম ভোটেও যাদব কুলপতিরা ভাগ বসিয়েছে। কংগ্রেসের কাছে কোনও নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ক আর অবশিষ্ট ছিল না। 
এভাবেই আগমন নরেন্দ্র মোদির। ২০১৪ সালের পর থেকে বিজেপির জনপ্রিয়তা এবং হিন্দুত্ব রাজনীতির আকাশছোঁয়া অগ্রগমন ঘটেছে। যখন মনে করা হচ্ছিল মোদি অপ্রতিরোধ্য। ঠিক তখনই ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে মোদি ধাক্কা খেলেন। যে বছর রামমন্দির উদ্বোধন হল, ঠিক কয়েকমাসের মধ্যেই বিজেপির জয়যাত্রা থমকে গেল। হয়তো সেটাই ছিল পূর্বাভাস। অর্থাৎ বিজেপির শীর্ষস্তর ছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। 
প্রতি ২৫ বছর অন্তর পাল্টে যাচ্ছে ভারত। ১৯৫০ সালে ভারত নিজস্ব সংবিধান গ্রহণ করেছিল। অগ্রসর হয়েছিল এক নতুন ভারত নির্মাণের পথে।  যার চালিকাশক্তি এবং প্রধান শক্তি ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু ঠিক ২৫ বছর পর সেই ভারতে সবথেকে বড় আঘাত এসেছিল গণতন্ত্রেই। সংবিধান সংশোধন করে জরুরি অবস্থা জারি করা হয় ১৯৭৫ সালে। তার আবার ২৫ বছরের মাথায় ১৯৯৮-৯৯ সালে হিন্দুত্ব রাজনীতি প্রথম সিংহাসন দখল করে বুঝিয়ে দিল যে, এবার কংগ্রেসের আকার আয়তন কমবে। বাড়বে বিজেপি। তাই হল। কিন্তু আবার ম্যাজিক ভারতীয় গণতন্ত্রের। কারণ আবার ২৫ বছর পর ২০২৫ সালে এসে দেখা যাচ্ছে হিন্দুত্ব রাজনীতির প্রোপাগান্ডা পলিটিক্স আচমকা ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু কোনও বিকল্প রাজনীতির কাছে নয়। পপুলিস্ট পলিটিক্সের কাছে। অর্থাৎ এখন আর কোনও দলকে নির্দিষ্ট কোনও ইজমের হওয়ার দরকার নেই। কোনও দলের পৃথক কোনও অস্তিত্ব আর দেখা যাচ্ছে না। সকলেই ভোটে জেতার জন্য একটিই অস্ত্র হাতে নিচ্ছে। বেশি বেশি আর্থিক অনুদান ও নানারকম ফ্রি পরিষেবা। এসবের মধ্যে বিজেপি হিন্দুত্বকেও মিশিয়ে দিচ্ছে বটে, কিন্তু তারা নিজেরাই বুঝতে পারছে হিন্দুত্ব যথেষ্ট নয় আর। যথেষ্ট হলে তো অন্যদের নকল করে এইসব ফ্রি সার্ভিস কিংবা টাকা দেওয়ার প্রকল্প  বিজেপিকেও নিতে হতো না!  সোশ্যালিজম, কমিউনিজম, কাস্ট পলিটিক্স এবং ধর্মীয় মেরুকরণ ক্রমেই পিছনের সারিতে। ভারতের নতুন রাজনীতির নাম ডিবিটি। ডাইরেক্ট ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার! 
15d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্র থেকে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে। কর্মস্থলে উপরওয়ালার আস্থা লাভে সক্ষম হবেন। ব্যবসায় উন্নতি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.৬৩ টাকা৮৮.৩৭ টাকা
পাউন্ড১০৬.৯২ টাকা১১০.৬৭ টাকা
ইউরো৮৯.১৭ টাকা৯২.৫৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা