বিকিকিনি

দীঘার কাছাকাছি, লুকানো মুক্তাবাজি

অফবিট পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গত কয়েকবছরে পর্যটকদের কাছে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে জুনপুট, বাঁকিপুট। বিস্তারিত লিখেছেন সৌমিত্র দাস।

কখনও উচ্ছ্বল, কখনও শান্ত সমুদ্র। চিকচিক করা সোনালি বেলাভূমির উপর মুহূর্মুহূ আছড়ে পড়ছে ফেনিল ঢেউ। বালিতে ইতিউতি অসংখ্য লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি। ছুটে গেলেই গর্তে ঢুকে যায় তারা। পাশাপাশি ঝাউ ও অন্য গাছগাছালির নৈসর্গিক শোভা যে কোনও মানুষকে আকৃষ্ট করবেই। দীঘা-মন্দারমণি-তাজপুরের মতো অতি পরিচিত সাগরসৈকতে যদি বারবার যাওয়ার পর ওই জায়গাগুলি নিয়ে একঘেয়েমি চলে আসে, তাহলে নিঃসন্দেহে আপনার পরবর্তী উইকএন্ড ডেস্টিনেশন হতেই পারে কাঁথির বাঁকিপুট। এই সৈকত এখনও অনেকের কাছে অজানা। 
তবে গত কয়েকবছরে কাঁথি সহ আশপাশের এলাকার ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে বাঁকিপুট।  
বাঁকিপুট
এখানে খুব বেশি হোটেল­-লজ গড়ে ওঠেনি। তবে সেচদপ্তর নির্মিত কংক্রিটের চাতালে বসে যেমন প্রাকৃতিক হাওয়ায় সমুদ্রশোভা উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্নানেরও সুযোগ। আবার রয়েছে ঝাউবনে পিকনিক করার সুযোগ। চাইলেই হাতের কাছে রান্নার সমস্ত বাসনপত্র স্থানীয় দোকানগুলি থেকে কম ভাড়ায় পেয়ে যাবেন। 
তবে সবচেয়ে বড় কথা হল, এই এলাকাটি বিমূর্ত নির্জনতায় ভরা। তাই ভিড় এড়িয়ে অনেকেই বাঁকিপুটে বেড়াতে কিংবা ছুটি কাটাতে চলে আসেন। আসলে যাঁরা নির্জনে, নিরিবিলিতে সৈকতে বেড়ানো পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে কাঁথির বাঁকিপুট নিঃসন্দেহেই আদর্শ। যেখানে একান্তে রোমান্টিকতার আবেশ গায়ে মেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটানো যায়। এভাবেই অফবিট পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট হিসেবে গত কয়েকবছরে পর্যটকদের কাছে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে বাঁকিপুট। সবুজে ভরা চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোরম আবহাওয়া, নিরিবিলি পরিবেশ এবং আর সুন্দর সৈকত হল এই পর্যটন কেন্দ্রের মূল চাবিকাঠি। শীতকাল হোক বা গরমকাল, ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই পর্যটন কেন্দ্রটি। এখানে যেমন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ছুটি কাটাতে আসেন, তেমনি রোজ সকালে কিংবা বিকেলে বহু ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ভিড় জমে যায়। অনেকে ঝাউবনে দল বেঁধে পিকনিকও করেন। শীতকালে বিশেষ করে ডিসেম্বরে পর্যটন মরশুমে বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষের ওই সময়টা বাঁকিপুটে যেন পিকনিকের মেলা বসে যায়। কার্যত তিল ধারণের জায়গা থাকে না। যদিও বাঁকিপুটে এখনও পর্যন্ত সেভাবে কোনও পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তবে প্রশাসন সর্বদা এই পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছে। প্রশাসনিক উদ্যোগে পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচালয় হয়েছে। বাঁকিপুটের কাছে কানাইচট্টায় প্রশাসনিক উদ্যোগে একটি রিসর্ট গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আগামীদিনে এলাকার পর্যটনের উন্নয়নে প্রশাসনের আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।  তবে পর্যটকদের দাবি, এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য পার্ক সহ অন্যান্য ঩বিনোদন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হলে খুবই ভালো হয়। এতে এই এলাকার  গুরুত্ব অনেকখানি বেড়ে যাবে। আরও বেশি করে মানুষ এই এলাকায় বেড়াতে আসবেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের তদন্তের গ্রাম— দারিয়াপুর   
বাঁকিপুটের কাছেপিঠে ঘোরার জায়গা বলতে রয়েছে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিধন্য দারিয়াপুর গ্রাম। বাঁকিপুট থেকে এক কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই পড়বে দায়িরাপুর। যেখানে ইতিহাস ও প্রাচীনত্ব যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। সাহিত্যসম্রাট অবিভক্ত কাঁথি মহকুমার(তৎকালীন নেগুয়া মহকুমা) ডেপুটি ম্যা঩জিস্ট্রেট থাকাকালীন একটি ডাকাতির ঘটনার তদন্তে দারিয়াপুরে এসেছিলেন। তাঁর শুভাগমনের নানা স্মৃতি এলাকায় বিদ্যমান রয়েছে। দারিয়াপুরে গেলেই চোখে পড়বে সাহিত্যসম্রাটের আবক্ষ মূর্তি। গ্রামের মধ্যে একটু এগিয়ে গেলেই রয়েছে হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত ‘কপালকুণ্ডলা’ মন্দির। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মানসকন্যা কপালকুণ্ডলার নামাঙ্কিত এই মন্দির দেখতে রোজই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরা এবং ইতিহাসপ্রেমী মানুষ ভিড় জমান। রয়েছে প্রাচীন একটি শিবমন্দিরও। এছাড়া সাহিত্যসম্রাটের স্মৃতির অনেককিছু নিদর্শন ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে দারিয়াপুরে। কয়েক পা এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে, রাস্তার পাশেই রয়েছে লাইট হাউস বা বাতিঘর।  ৫০ বছরের বেশি পুরনো এই বাতিঘরটি আজও স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল এবং মাইলস্টোন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা পর্যটক ও ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয়। দারিয়াপুরে এসেছেন আর লাইট হাউস দর্শন করেননি, এমন মানুষ খুব কমই আছেন। লাইট হাউসের চূড়োয় লাল রঙের আলো সন্ধ্যা হ঩লেই জ্বলে ওঠে। আর দূর সমুদ্রে জাহাজের নাবিকদের দিক নির্দেশ করে। লাইট হাউস দর্শনের পাশাপাশি তার মাথায় উঠে প্রকৃতির অপূর্ব শোভা দর্শনেরও সুযোগ রয়েছে। সেখান থেকে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর এবং মোহময়ী বলে মনে হবে। 
পেটুয়াঘাট
আরও একটু এগিয়ে রসুলপুর নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় রয়েছে পেটুয়াঘাট দেশপ্রাণ মৎস্যবন্দর। এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মৎস্যবন্দরে এলে অনেককিছুই দেখা যাবে। সদা কর্ম্যব্যস্ত বন্দরের নানা ইউনিটের কর্মকাণ্ড যেমন দেখা যাবে, তেমনি মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বললে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার হবে সমৃদ্ধ। রসুলপুর নদীর ওপারেই নিজকসবায় রয়েছে ৫০০ বছরের প্রাচীন হিজলির ‘মসনদ-ই-আলার’ মাজার। পেটুয়াঘাট থেকে ভেসেলে নিজকসবায় যাওয়া যায়। হিজলি মসনদ-ই-আলার মাজারে গিয়ে প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে বয়স্কদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারবেন এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। শুধু তাই নয়, মসনদ-ই-আলা একটি মনোরম সৈকতও বটে। মাজার দর্শনের পাশাপাশি সৈকতে ঘুরে বেড়ানো এবং সময় কাটানোর সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। সেখানেও রয়েছে লাল কাঁকড়ার মেলা এবং ম্যানগ্রোভের সারি। পর্যটকদের ভিড়ে ওই সৈকত সবসময় জমজমাট হয়ে থাকে। এখানে এলে মসনদ-ই-আলা সহ খেজুরির বিভিন্ন এলাকার অজানা ইতিহাস আপনার কমবেশি জানা হয়ে যাবে। 
জুনপুট
বাঁকিপুট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে জুনপুটে মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ্র ও গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে মাছ চাষ ও মাছের চারা তৈরি সহ নানা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাবে। রয়েছে আরও অনেককিছু। বাঁকিপুটের কাছে জুনপুট তো বটেই, কানাইচট্টা, কাদুয়া, জুনপুট, হরিপুরের মতোও বিচ রয়েছে। চাইলে ওই সমস্ত নিরিবিলি বিচে গিয়ে সময় কাটানো এবং সমুদ্রের জলে গা ভেজানো হল উপরি পাওনা। সব মিলিয়ে বাঁকিপুটে এলে আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার যে পূর্ণ হবে, তা বলাই বাহুল্য। সারাটা দিন যে কোথা থেকে কেটে যাবে, তা বোঝাই যাবে না। মোটকথা খণ্ড ছুটির পূর্ণ আনন্দ উপভোগের ঠিকানা হল বাঁকিপুট!
পথনির্দেশ— 
কলকাতা থেকে দীঘাগামী যে কোনও বাসে উঠে কিংবা ট্রেনে এসে কাঁথিতে নামতে হবে। কাঁথির জুনপুট মোড় দিয়ে ট্রেকার কিংবা অটোয় জুনপুট হয়ে বাঁকিপুটে আসা যায়। আবার রসুলপুর মোড় থেকে অটো কিংবা ট্রেকারে মুকুন্দপুর হয়ে বাঁকিপুটে আসা যায়। বাঁকিপুট চলে এলে সেখান থেকে দারিয়াপুরের বঙ্কিম স্মৃতিধন্য এলাকা, পেটুয়াঘাট বন্দর কিংবা হিজলির মসনদ-ই-আলার মাজার, সব জায়গায় যাওয়া যাবে।
কাছেপিঠে থাকার জায়গা— 
বাঁকিপুট থেকে সামান্য দূরে গোপালপুর এলাকায় সৈকতেই রয়েছে একটি প্রা‌ইভেট রিসর্ট। জুনপুটে রয়েছে একটি গেস্ট হাউস। কাদুয়াতেও থাকার জায়গা রয়েছে। দীঘা-মন্দারমণির মতো কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যে নয়, এইসব থাকার জায়গা, হোটেল, রিসর্টগুলি রয়েছে প্রকৃতির কোলে এবং সবুজে ঘেরা এলাকার মধ্যে। মূল রাস্তার পাশেই। এই সমস্ত জায়গায় থাকা এবং খাওয়া দুটিরই সুন্দর বন্দোবস্ত রয়েছে। তবে দীঘায় যা খরচ হয়, তার থেকে রেস্ত একটু বেশি লাগবে। যেমন জুনপুটের গেস্টহাউসে থাকা এবং চারবেলা খাওয়া নিয়ে মাথাপিছু এক থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে খরচ পড়বে। বাকিগুলিতে খরচ একটু বেশিই পড়বে। এর মধ্যে রয়েছে লাঞ্চ, ইভনিং স্ন্যাক্স, ডিনার এবং পরদিন সকালের ব্রেকফাস্ট। সবক’টিতে থাকার জন্য অনলাইন এবং স্পট বুকিং­-দু’টিরই সুবিধা রয়েছে। শুধু হোটেলে থাকা নয়, সংলগ্ন বাগানে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও রয়েছে। তবে যে ক’টা দিন থাকবেন, নিরিবিলিতে আনন্দে কাটবে, একথা হলফ করেই বলা যায়। এক-দু’দিনের হাওয়া বদলের জন্য ঘুরে আসতেই পারেন বাঁকিপুট থেকে। তাহলে আর দেরি কেন? এই ভরা বাদরে বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তেই পারেন নরম বালির আদরে পা ভেজাতে।
 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা