বিকিকিনি

মাইথন থেকে কল্যাণেশ্বরী

শহুরে কোলাহল ছেড়ে একটু শান্ত প্রকৃতির খোঁজে যেতে পারেন মাইথন। পাশেই কল্যা঩ণেশ্বরী মন্দির। প্যাকেজ ট্যুরে ঘুরে নিতে পারেন দু’টি জায়গাই।

গ্রীষ্মের দাবদাহ আর চোখরাঙানির পর এতদিনে বর্ষণসিক্ত আবহাওয়ায় চঞ্চল হয়ে উঠেছে মন। কিন্তু যাই কোথায় বলুন তো? চলুন আজ আপনাদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি মাইথনের উদ্দেশে। 
মায়ের থান থেকেই মাইথন নামের উৎপত্তি। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বৃহত্তম জলাধার এই মাইথন। পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে দামোদর ও বরাকর নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত মাইথন জলাধার। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করেছে এটি। বিস্তৃত এই জলাধারের উপর অবস্থিত সেতু ধরে প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে করতে হেঁটে যেতে মন্দ লাগে না। চারপাশে ছোট বড় অজস্র পাহাড়। চারদিকে শুধুই সবুজ শ্যামলিমার মোহময় আচ্ছাদন। দৈনন্দিন শহুরে কোলাহলে অভ্যস্ত মন এখানে পৌঁছে সব ভুলে মুহূর্তেই যেন মিশে গেল পাগলপারা মেঘলা প্রকৃতির সঙ্গে। জলাধারের মাঝেমাঝে অনতিউচ্চ টিলাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন পৌঁছে গিয়েছি 
বিচ্ছিন্ন কোনও দ্বীপপুঞ্জে। ঠিক যেন একটুকরো মিনি আন্দামান। আসলে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বৃহত্তম এই জলাধার একসময় নির্মিত হয়েছিল বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য।     
আকাশ জুড়ে কৃষ্ণ-কাজল মেঘের ঘনঘটা। দিগন্ত বিস্তৃত জলাধারের মুখে তার প্রতিচ্ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। পাড়ে বাঁধা নৌকা নিয়ে মাঝির সঙ্গে ভেসে ভেসে চললাম দূর, দূর, বহুদূরের দ্বীপগুলিতে। মেঘ আর জলের কৃষ্ণকালো মিতালি দেখে নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠলাম, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি/কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক/মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে/কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ।’ ভারি নয়নাভিরাম এই দৃশ্য। অনুভব করা আর মনক্যামেরায় বন্দি করে হৃদয়ের নিভৃত কোণে বাঁধিয়ে রাখার মতো। এখানে পর্যটকদের একটা কথা জানিয়ে রাখা দরকার। মাইথনে মাথা তুলে দাঁড়ানো দ্বীপগুলোর সৌন্দর্য নৌকাযোগে অবশ্যই উপভোগ করা যায়। তবে মাত্র তিনটি দ্বীপে নামার ছাড়পত্র মেলে। কিছুটা দূরেই সবুজ দ্বীপ। মন ভালো করতে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। ভাগ্য ভালো থাকলে নাম না জানা পক্ষীকুলের দেখাও মিলতে পারে। মাইথান জলাধার থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্যও অসাধারণ।
মাইথন জলাধারের অদূরে মাইথন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। তবে সেখানে ভ্রমণ করতে চাইলে অবশ্যই জলবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি প্রয়োজন। জলাধারের কাছে আরও রয়েছে ডিয়ার পার্ক। সপরিবার সেখানেও সময় কাটাতে পারেন। 
এখানকার প্রকৃতি এতই শান্ত যে রাত নামলে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক, জোনাকির আলো আপনাকে সঙ্গ দেবে। আকাশ জুড়ে তারার মেলা। আর জলাধারের শান্ত জলে তার প্রতিফলন; দেখলে মনে হয় সোনা গলে যেন ফুলের মতো ফুটে আছে চারপাশে।
মাইথন থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মা কল্যাণেশ্বরীর মন্দির। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই দেবালয়। বর্তমানে যে মন্দির আমরা দর্শন করি তা পঞ্চকোট রাজাদের তৈরি। 
জনশ্রুতি অনুসারে, কাশীপুরের এক রাজা বিবাহে যৌতুক হিসেবে দেবী কল্যাণেশ্বরীকে পান। শ্রবণপুর নামে একটি জায়গায় বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে তিনি পুজো শুরু করেন। পরবর্তীকালে দেবী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন ও নির্দিষ্ট স্থান উল্লেখ করে তাঁর মন্দির স্থাপন করার আদেশ দেন। স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত রাজা তখন জঙ্গলাকীর্ণ নির্জন স্থানে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। অদ্ভুত ব্যাপার এমন জঙ্গলে ঢাকা অঞ্চল তবু ভক্তের ভিড়ে কোনও ত্রুটি ঘটেনি কখনও। দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত সমাগম হতো জাগ্রত এই সিদ্ধপিঠে। 
স্থানীয় অধিবাসীরা আজও বিশ্বাস করেন মা কল্যাণেশ্বরী সকল ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন এবং সন্তানহীন দম্পতির কোলে সন্তান দেন। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার এবং শনিবার মায়ের বিশেষ পুজো সম্পন্ন হয়।
দেবীর কৃত্রিম গুহামন্দির। গুহার দ্বার রুদ্ধ, সেখানে একটি পাথর আটকানো। গুহামুখে অষ্টধাতুর দক্ষিণাকালী মূর্তি। এই কালী মূর্তি এখানে মা কল্যাণেশ্বরী রূপে পূজিতা। ভিতরে সোনার তৈরি দেবীর মূল মূর্তি। সেখানে পাষাণ বেদীর উপর দেবীর পদচিহ্ন রয়েছে। মন্দিরের পিছন দিকে কলকল ধারায় নেমে আসা ঝরনা আপনার মনকে শান্ত করবে এ কথা বলা যেতেই পারে। 
ইচ্ছা থাকলে এবং হাতে সময় থাকলে আগ্রহী পর্যটকরা পাঞ্চেত জলাধারটিকেও ভ্রমণ তালিকায় যোগ করতে পারেন। নির্জনতা যদি আপনার পছন্দ হয়, তাহলে এটি কোনওমতেই মিস করবেন না। 
কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ট্রেনযোগে পৌঁছে যান আসানসোল বা কুমারডুবি। সেখান থেকে মাইথন খুবই কাছে। 
থাকার জন্য আশপাশে অনেক ট্যুরিস্ট লজ এবং অতিথি নিবাস রয়েছে। তবে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই শ্রেয়।
ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়: জুলাই মাস থেকে ফেব্রুয়ারি এই স্থানে যাওয়ার আদর্শ সময়। এক এক সময় প্রকৃতি এখানে এক একরকমভাবে ধরা দেয়। 
অরিন্দম ঘোষ
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা