আমরা মেয়েরা

ঘুড়ি ওড়ানোর মজা থেকে বঞ্চিত এই প্রজন্ম

পক্ষে
ডঃ দীপায়ন প্রামাণিক, শিক্ষক 
সাদা মেঘের ভেলা আর শিউলি ফুলের আদর জানান দিত মা আসছেন। লোহার জিনিস ধুয়ে মুছে সাফ করতেন বাড়ির বড়রা। বুঝতাম সামনেই বিশ্বকর্মা পুজো। ছোটদের মধ্যে শুরু হয়ে যেত ঘুড়ি বানানোর বিরাট আয়োজন। আকাশের বুক জুড়ে শেষ বিকেলে চলত ঘুড়ি কাটাকুটির টানটান লড়াই। হঠাৎ দে ছুট। কেটে যাওয়া ঘুড়ি ধরার সেই আনন্দ আজ আর কোথায়? এখন প্রকৃতির কোল জুড়ে কেবল শূন্যতা আর হাহাকার। এখন শৈশব নতমস্তক। মুঠোফোনে আটকে আছে তাদের দৃষ্টি। আকাশ তাদের কাছে অচেনা। জীবন এখন বন্দি মুঠোফোনে। এ প্রজন্ম লাইক, শেয়ার আর কমেন্টেই খুঁজে চলেছে জীবনের মানে। ঘুড়ি ওড়ানোর মতো সৃজনশীল খেলার মজাটাই হারিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন থেকে। নকল প্রকৃতির খেলায় আসল আর নকলের প্রভেদটাই  ভুলে যেতে বসেছে তারা।

 সৈকত কর্মকার, সিভিক ভলান্টিয়ার 
ঘুড়ি ওড়ানোর কথা বললে প্রথমেই আমার চোখে একটা সুন্দর গ্রাম্য দৃশ্য ভেসে ওঠে। নিস্তরঙ্গ দুপুর। বাবা কাজে গিয়েছে। মা দুপুরে খাওয়ার পর বিশ্রাম নিচ্ছে। আর আমি আমাদের বাড়ির ঠিক পিছনেই বাগান লাগোয়া বিরাট মাঠটায় এসে‌ দাঁড়িয়েছি। সঙ্গে আমার সহপাঠী সুনু। দু’জনের হাতেই রঙিন ঘুড়ি আর লাটাই। এরপর দু’জনে মিলে সেই সোনালি দুপুরের রোদ গায়ে মেখে চলত ঘুড়ির লড়াই। কালের অমোঘ নিয়মে সেই সব জায়গা বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বিরাট অট্টালিকা মাথা তুলেছে। হারিয়ে গিয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর সেই বিকেলগুলো। প্রযুক্তির অগ্রগতির‌ সুবাদে এখনকার প্রজন্মের হাতে উঠেছে মুঠোফোন। হারিয়ে গিয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর সেই আনন্দ। মুঠোফোনের কৃত্রিমতা এবং নগরায়নের বাস্তবতা কেড়ে নিয়েছে বর্তমান প্রজন্মের সুন্দর শৈশব।‌ তাই ঘুড়ি ওড়ানোর মজা থেকে এরা সত্যিই বঞ্চিত। 

 কাবেরী ঘোষ, গৃহবধূ
ঘুড়ি শব্দটার মধ্যেই রয়েছে একটা উড়ানের গল্প। অর্থাৎ খোলা আকাশের নীচে অনাবিল আনন্দের মুহূর্ত কাটানোর এক রঙিন অভিজ্ঞতা। ভীষণ খোলামেলার পরিবেশে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া। অন্যধরনের এক আনন্দ উপভোগ করা।  ঘুড়ি ওড়ানোর আদর্শ সময় ছিল দুপুর আর সন্ধ্যের ঠিক মাঝের সময়টুকু। বিকেলের সবটুকু নির্যাস নিয়ে নেওয়া। কিন্তু এখনকার প্রজন্মের সেই সময়টা কাটে স্কুল, কলেজ অথবা কোনও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে। এক্ষেেত্রে  শুধুমাত্র তরুণদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ অভিভাবকরাও চান না যে, নতুন প্রজন্ম এই সময়টুকু খোলা মাঠে কাটিয়ে কোনও প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ুক। আর ব্যতিক্রমী কেউ যদি চেয়েও থাকেন, তাহলেও হয়তো পরিবেশ ও জায়গার অভাবে তা ফলপ্রসূ হয় না।

 শ্বেতা চট্টোপাধ্যায়, কলেজ ছাত্রী
ছোট থেকে দেখেছি শরতের আকাশে, গরমের বিকেলে আবার কখনও শীতের দুপুরেও আকাশে উড়ছে রঙিন সব ঘুড়ি। বিশ্বকর্মা পুজোয় আকাশ জুড়ে চলত ঘুড়ির মেলা। একে অপরের ঘুড়ি কাটার খেলা। বর্তমানে আর এই সব অতটা দেখা যায় না। কারণ এখন ছোটবেলা বন্দি মুঠোফোনে। আধুনিক সমাজে হারিয়ে যাচ্ছে ছোটবেলার মজার খেলাগুলো। ঘুড়ি তাই নতুন প্রজন্মের কাছে এখন বেশ অচেনা। ঘুড়ি ওড়ানোর ব্যাপারটা এই প্রজন্মের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। পাড়ায়, পাড়ায় বা ছাদে, ছাদে ঘুড়ির লড়াই আর দেখা যায় না তাই। নতুন প্রজন্মের অনেকেই ঘুড়ি ওড়াতে জানে না। আসলে কোনটা আসল মজা আর কোনটা নকল, সেটা ক্রমশ ভুলতে বসেছে নতুন প্রজন্ম। 

বিপক্ষে
সোহিনী রায়চৌধুরী, শিক্ষিকা
প্রায়শই দেখি কখনও জানলার কাছে, কখনও বা বাড়ির সামনের নিম গাছের ডালে কত রঙিন ঘুড়ি আটকে আছে। আশপাশের বাড়ির ছাদে নবীন-প্রবীণ দুই প্রজন্মই বিপুল উৎসাহে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। এটি তাদের খেলা ও বিনোদনের মাধ্যম। শরীর, মন ভালো রাখার অন্যতম উপায়। একঘেয়ে ক্লান্তিকর রোজনামচা থেকে মুক্তির উৎস। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ির প্রতিযোগিতায় দুই পক্ষের টানটান উত্তেজনা এখনও যথেষ্ট পরিমাণে দেখা যায়। এই যে প্রবীণ প্রজন্মের হাত ধরে নবীনরাও এগিয়ে এসেছে  ঘুড়ি ওড়ানোর পরম্পরাকে সযত্নে ধরে রাখার জন্য, এর থেকেই বোঝা যায় যুগের হাওয়া যতই বিবর্তিত হোক, ঘুড়ি ওড়ানোর গুরুত্ব কিন্তু হারিয়ে যায়নি। 

অরিজিৎ দাস অধিকারী, শিক্ষক
সময়ের দাবি সততই চিরন্তন। যে আর্থসামাজিক পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটে আমাদের শৈশব কৈশর কেটেছে তার থেকে আজকের সময় আলাদা। ফলে আমাদের সন্তানদের শৈশব ও কৈশোরকে চেনা ছকে ফেলার চেষ্টা শুধু অমূলক এবং অবান্তর। স্মার্টফোনের যুগে ঘুড়ি, ভোকাট্টারা অন্য রূপে দৃশ্যমান। মজার রকমফেরে রূপান্তর সময়ের স্রোতে পরিবর্তিত হচ্ছে বারবার। দিগন্ত খোলা মাঠও আজ নেই। তবুও ব্যবসায়িক হিসেবে, ঘুড়ি বিক্রির সমীক্ষা বলছে সময়ের স্রোতে তা বেড়েছে। তাই আমার মতে, ঘুড়ির মজা থেকে এই প্রজন্ম বঞ্চিত নয় বরং তা আরও বেশি আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে। নতুন প্রজন্ম স্মার্টফোন ও কম্পিউটার স্ক্রিনেও ঘুড়ির মজায় মশগুল থাকে। যা আমাদের সময় ছিল অকল্পনীয়।

দেবাজীব সরকার, বেসরকারি চাকুরে
ঘুড়ি ওড়ানোর মজা থেকে বঞ্চিত নয় এই প্রজন্ম। বরং ঘুড়ি ওড়ানো থেকে চোখের সমস্যা, মাথার যন্ত্রণা বা ঘুড়ির সুতোর মাঞ্জায় হাত কেটে যাওয়ার মতো ক্ষতিকর বিষয়গুলো সম্বন্ধে তারা অবহিত। আর সেই কারণেই তারা ঘুড়ি ওড়ানো থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। এই প্রজন্ম অনেক বেশি পরিকল্পিত জীবনে আগ্রহী। তাদের কাছে ঘুড়ি ওড়ানোর থেকেও অন্য বিনোদন বেশি প্রিয়। যেগুলো তারা কম ক্ষতিকর বলে মনে করে। বিনোদন বা মজার ধরনও এখন পাল্টেছে। স্বভাবতই নতুন প্রজন্মের কাছে ঘুড়ি ওড়ানোটা মজা নয়। 

 ঐশানী দত্ত, ছাত্রী 
আমার বাবা-কাকাদের ছেলেবেলার সময় চারপাশে খোলা মাঠ ছিল। তখনকার দিনে বেশিরভাগই একান্নবর্তী পরিবার ছিল। ফলে একসঙ্গে সুতোয় মাঞ্জা দেওয়া যেত হইহই করে। আজ বেশিরভাগ মানুষ নিজের মতো করে এক কামরা ফ্ল্যাটের চার দেয়ালে বন্দি। তবে এখনও বিশ্বকর্মা পুজোর মরশুমে পেটকাটি, ময়ূরপঙ্খীর লড়াই দেখতে পাওয়া যায়। শুনতে পাওয়া যায় হুল্লোড়ের মাঝে ‘ভোকাট্টা’ রব। ফ্ল্যাটের ছাদ থেকেও এই আনন্দে শামিল হয় নতুন প্রজন্ম। অনেক আবাসনে তো রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয় ঘুড়ির।
 ছবি: অভি ঘোষ
28d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা