আমরা মেয়েরা

হুমায়ুনকে রাখি পাঠানোর গল্প

মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে চিতোরের রানি কর্ণাবতীর রাখি পাঠানোর একটি বহুলপ্রচলিত কাহিনি রয়েছে। সে কাহিনি কতটা ঐতিহাসিক আর কতটা রাজস্থানের লোককাহিনি?

ইতিহাসবিদদের মতে, মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে রানি কর্ণাবতীর রাখি পাঠানোর কাহিনিটি রাজস্থানের লোককাহিনির অংশ, এর কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। গবেষকদের মতে, এই কাহিনির উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় কর্নেল টডের ‘অ্যানালস অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটিজ অব রাজস্থান’ গ্রন্থে। টড অবশ্য রাখিও বলেননি, রক্ষাবন্ধনও বলেননি, বলেছেন ‘ব্রেসলেট উৎসব’। হুমায়ুনকে একজন ‘সত্যিকারের যোদ্ধা’ বলে মনে করতেন টড। কারণ, চিতোর আক্রমণকারী বাহাদুর শাহকে পরাজিত করে তিনিই চিতোরের রাজা বিক্রমাদিত্যকে তাঁর পুরনো রাজ্য ফিরিয়ে দেন। টড হাজারো কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছেন যার মধ্যে যোধাবাই ও আকবরের কাহিনি সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ হয়। এস কে বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘হুমায়ুন বাদশা’ বইয়ে লিখছেন, ‘রানি কর্ণাবতী হুমায়ুনের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু রাজার গোয়ালিয়রে অগ্রসর হওয়া ও সেখানে দু’মাস অবস্থান করা ছাড়া আর কোনও সাড়া আসেনি।’ 
রানি কর্ণাবতী ছিলেন চিতোরের রাজা রানা সংগ্রাম সিং ওরফে রানা সাঙ্গার স্ত্রী। জন্মসূত্রে রানি কর্ণাবতী ছিলেন বুন্দির রাজকন্যা। বাবরের সঙ্গে রাজপুতদের যুদ্ধে রানা সাঙ্গা আহত হন এবং পরে মারা যান। পুত্র বিক্রমাদিত্য তখন নাবালক। ফলে কর্ণাবতীর হাতে যায় রাজ্যের শাসনভার।
পরে রাজ্যের দায়িত্ব রানি কর্ণাবতী পুত্র বিক্রমাদিত্যের হাতে তুলে দেন। অল্প বয়সে সিংহাসনে বসায় তিনি ক্ষমতালোভী হয়ে পড়েন। শাসক হিসেবেও ছিলেন অদক্ষ। তাঁর দুর্ব্যবহারে বেশিরভাগ সভাসদ এবং পার্শ্ববর্তী অন্য রাজারা রুষ্ট হয়ে পড়েন। এরই সুযোগ নেন গুজরাটের রাজা বাহাদুর শাহ। বাহাদুর শাহ চিতোর আক্রমণ করেন।
এমতাবস্থায় রানি কর্ণাবতী রাজপুত রাজাদের কাছে সাহায্য চাইলে বেশিরভাগ রাজাই বিক্রমাদিত্যকে সাহায্য করতে রাজি ছিলেন না। অসহায় কর্ণাবতী উপায় না পেয়ে শেঠ পদ্মশাহের মাধ্যমে হুমায়ুনের কাছে একটি রাখি ও চিঠি পাঠান। রানি দিল্লির তৎকালীন সম্রাট হুমায়ুনকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে লেখেন, ‘রক্ষাবন্ধন সকল প্রকার শত্রুতা ও ধর্মের উর্ধ্বে। আমায় সাহায্য করুন। এক বোন আপনার প্রতীক্ষায় রইল।’ যদিও এই চিঠি এবং রাখির কোনও প্রমাণ ঐতিহাসিকরা পাননি!
চলে আসি কাহিনিতে। হুমায়ুন রানি কর্ণাবতীর রাখির মূল্য বুঝে প্রচুর উপহার পাঠালেন বোনকে। রাজপুতদের প্রতি আলাদা সম্মান ছিল হুমায়ুনের। কারণ, তাঁর স্ত্রী অমরকোটে যখন আকবরের জন্ম দেন তখন হুমায়ুন নির্বাসিত সম্রাট। সেসময় অমরকোট মানে আজকের পাকিস্তানের রাজা ছিলেন রানা বীরশাল। তিনি হুমায়ুনকে আশ্রয় দেন ও সাহায্য করেন। হুমায়ুন প্রতিদানে আজীবন রাজপুতদের সম্মান করতেন। কর্ণাবতীকে সাহায্য করবেন বলে ঠিক করলেন হুমায়ুন। বোনকে বাঁচাতে গোয়ালিয়র থেকে সৈন্য সহ চিতোর অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু মাঝপথে, গোয়ালিয়রে, তিনি বাহাদুর শাহের চিঠি পান যেখানে বাহাদুর শাহ জোর দিয়ে লেখেন, ‘কাফের তথা বিধর্মীদের উদ্ধারে আপনার আসা উচিত নয়।’ শোনা যায়, এই চিঠি হুমায়ুনকে চিন্তায় ফেলেছিল। 
যুদ্ধ চলতে থাকে চিতোরে। রাজপুত রাজারা এক হয়ে বাহাদুর শাহের সঙ্গে প্রাণপণ যুদ্ধ করেন। কিন্তু পরাজিত হন। হার নিশ্চিত জেনে সম্ভ্রম বাঁচাতে রানি কর্ণাবতী অন্দরমহলের ১৩ হাজার রমণী সহ ‘জওহর ব্রত’ পালনে বিশাল অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপিয়ে আত্মাহুতি দেন।
চিতোর পৌঁছাতে হুমায়ুনের প্রায় পনেরো দিন দেরি হয়। বাহাদুর শাহ চিতোরের সিংহাসন দখল করেন। শোনা যায়, পথিমধ্যে রানির আত্মাহুতির কথা শুনে হুমায়ুন কষ্ট পান এবং বাহাদুর শাহের ওপর আক্রোশে ফেটে পড়েন। তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেন। বাহাদুর শাহ তখন মাণ্ডুতে। ইতিহাস বলছে তিনি হুমায়ুনের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করেন এবং পরে পর্তুগিজদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে পর্তুগিজরা তাঁকে বন্দি করে পর্তুগিজ অধিকৃত দিউয়ে পাঠিয়ে দেয়। সেখানেই বাহাদুর শাহকে হত্যা করা হয়।
রানি কর্ণাবতীর রাখি পাঠানোর কাহিনি প্রসঙ্গে একদল ঐতিহাসিক লিখছেন, ‘হুমায়ুনের এই সাহায্যের নেপথ্যে ছিল রাজনৈতিক অভিসন্ধি। তিনি রাজপুতদের কাজে লাগাতে চাইছিলেন আবার বাহাদুর শাহকেও চটাতে চাননি। কারণ, হুমায়ুনের একজন সেনাপতি মোহাম্মদ জামা সেসময় গুজরাটে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হুমায়ুনের অনুরোধে বাহাদুর শাহ তাঁকে ছাড়তে রাজি হননি। তখন হুমায়ুন গুজরাট আক্রমণ করেন। বাহাদুর শাহ চিতোর যুদ্ধে জয়লাভ করেন সৈন্য সহ মান্ডু চলে যান যেখানে মোগলরা ইতিমধ্যেই তার জন্য অপেক্ষা করছিল। আর তখনই হুমায়ুনের নির্দেশে আক্রমণ করে মোগল সেনা। পরাজিত হন বাহাদুর শাহের সেনাপতি তাতার খান। চিতোরের রাজা বিক্রমাদিত্য তখন ছিলেন বুন্দিতে। সম্রাট হুমায়ুন কর্ণাবতীকে বাঁচাতে না পারলেও রানা বিক্রমাদিত্যকে পুনরায় সিংহাসনে বসান এবং নিজ রাজ্যে ফেরত যান।’ 
রাজস্থান, বিশেষ করে চিতোর গেলে হুমায়ুন কর্ণাবতীর এই রক্ষাবন্ধনের কাহিনি শুনতে পাবেন। যা আজও স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে ফেরে। লোককাহিনি হিসেবে রাজস্থানের বহু এলাকায় একে নিয়ে পুতুলনাচ হয়।
অনিরুদ্ধ সরকার
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা