আমরা মেয়েরা

সেলাই দিদিমণি

হাতের রকমারি কাজে দক্ষ অভিষিক্তা সেনগুপ্ত। কখনও গাছের পাতা, কখনও বা পাউরুটি তাঁর ক্যানভাস। কেমন সেই পথচলা?

ডাক পাড়ে ও ঔ
ভাত আনো বড় বৌ।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সহজপাঠ’-এ এই ‘বড় বৌ’-এর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। তাকে পাউরুটির উপর তুলে এনেছেন অভিষিক্তা সেনগুপ্ত। সে পাউরুটি কিন্তু সাজিয়ে রাখার নয়। ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাজিয়ে দিলে আপনি খেয়েও নেবেন। এহেন হাতের কাজ সচরাচর চোখে পড়ে না। শুধু তাই নয়, গাছের ঝরে পড়া পাতার উপর কখনও সেলাই করছেন এই মেয়ে। কখনও বা আপনমনে গড়ছেন কালীমূর্তি। বেলুড়ের বাসিন্দা অভিষিক্তা আপাতত বিবাহসূত্রে থাকেন আসানসোল। সেখান থেকেও তাঁর শিল্পকর্ম চলছে নিরন্তর।   
পাউরুটির উপর ‘সহজ পাঠ’ তৈরির ভাবনা কীভাবে এল? প্রশ্ন করতে অভিষিক্তা বললেন, ‘পাউরুটির উপর সহজপাঠ এবং বেড়াল দম্পতি তৈরি করেছিলাম। ইতালিতে অনেক রকমের পাউরুটি পাওয়া যায়। তার উপর সব্জি দিয়ে কারুকাজ করা হয়। ইউ টিউবে বিভিন্ন রান্নার শো-তে এগুলো আমি দেখেছি। হঠাৎই একদিন মনে হল পাউরুটির উপর এঁকে কিছু হয় কি না, দেখি। কোনও কেমিক্যাল ব্যবহার না করে এটা করা যায় কি না, সেটা দেখতে চেয়েছিলাম। আমি কোকো পাউডার ব্যবহার করেছিলাম। সাদা তেলের (গলানো মাখনও হতে পারে) সঙ্গে সামান্য কোকো পাউডার মিশিয়ে অর্গ্যানিক ভাবে একটা রং তৈরি করেছিলাম। পাউরুটি তৈরির আগে ময়দার মিশ্রণকে ভালো করে ফুলিয়ে তার উপর তুলি দিয়ে এঁকে সেটাকে আবার বেক করেছিলাম। কোকো পাউডার এমনিই বেকিংয়ে লাগে, আর রংটা পুড়ে বা জ্বলে যায় না। সেজন্য কোকো পাউডারের রংটা ব্যবহার করেছি।’ 
উত্তরপাড়া গার্লস হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং বরাহনগর ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজ থেকে জুলজি অনার্স পড়ার পর রবীন্দ্রভারতী থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতে মাস্টার্স করেছেন অভিষিক্তা। গান শিখেছেন ছোট থেকেই। কিন্তু হাতের কাজের তাঁর কোনও প্রথাগত ট্রেনিং নেই। তাঁর কথায়, ‘আমি কোথাও হাতের কাজ শিখিনি। মূর্তি গড়া বা আঁকা সবই নিজের চেষ্টায় করি। স্কুলে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি ছিল। বাবা ভালো আঁকেন। বাবাকে দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এছাড়া দিদা, মেজপিসি খুব ভালো হাতের কাজ জানে। ওদের দেখে শেখা।’
নিজের ইচ্ছেমতো কালীমূর্তি গড়েন অভিষিক্তা। তা প্রথাগত মূর্তির সঙ্গে না মিললেও তাঁর পুজোয় ভক্তির কোনও অভাব নেই। মূর্তি তৈরির আগে বাধারও সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। অভিষিক্তা বললেন, ‘আমি কালী মায়ের ভক্ত। আমাদের বাড়িতে মেয়েদের মূর্তি গড়া বারণ। বহু বাধা পেরিয়ে অনেক অশান্তি করে আমি মূর্তি তৈরি করা শুরু করি। কালীপুজোয় অনেক রীতি মানতে হয়। কিন্তু আমি সেসব করি না। আমার ছোট থেকে একটাই বক্তব্য ছিল, আমি তো মন থেকে ভালোবেসে মাকে ডাকছি। মা কারও ক্ষতি করেন না। আমি মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করি না। অর্থাৎ ঘট বসিয়ে পুজো করি না। আমার পুজো শ্যামাসঙ্গীত গেয়ে। ভোগ রান্না করে মাকে দিই। ঠিক যেভাবে বাড়িতে অতিথি এলে আমরা আতিথেয়তা করি, সেভাবে পুজো করি। বিভিন্ন রকম কালী মূর্তি বানাই। কন্যারূপে শিবহীন কালী তৈরি করি।’ 
সেই কালীকেই অভিষিক্তা ফুটিয়ে তুলেছেন গাছের পাতার উপর। অভিষিক্তা জানালেন, এই কাজে পাতা বাছাইয়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যে ধরনের পাতার উপর সূচ ফুটিয়ে সেলাই করা যায়, যে পাতা সুতো ধরে রাখতে পারবে তেমন ঝরে পড়া পাতা বেছে নিতে হয়। অশ্বথ, কাঁঠাল, মেহগনির মতো শক্ত পাতা এই কাজে উপযোগী। আবার মাথার ঝরে পড়া চুল দিয়ে তৈরি করেছেন কালীর পা। কেমন সেই শৈল্পিক ভাবনা? তিনি বলেন, ‘আমার হাঁটুর নীচ অবধি চুল। মাথার চুল এক সময় প্রচুর ঝরত। বড় সুতোর মতো লাগত ঝরে পড়া চুল। খুব কাঁদতাম চুল ঝরে যাচ্ছে বলে। ভেবেছিলাম চুল দিয়ে সেলাই করে যদি ঠাকুরের পা তৈরি করি। কালো বলতে আমার সবসময় কালীর কথাই মনে পড়ে। তিন বছর ধরে চুল জমিয়ে ওই সেলাইটা করি।’
রান্না করতে ভালোবাসেন অভিষিক্তা। সেটা সাজিয়ে পরিবেশন করা তাঁর শখ। খাবার জিনিসের উপর কিছু করতে হলে বিট, গাজর, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, অপরাজিতা ফুল এসব থেকে তৈরি ভেষজ রং ব্যবহার করেন। 
বিবিধ শিল্প মাধ্যমই তাঁকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতারও পথ দেখিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘ছোট থেকে আমার খুব সংসার করার শখ। তাই প্রথাগত চাকরির কথা ভাবিনি কখনও। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রয়োজন। সেজন্য শিল্পের মাধ্যমে আমি সেটাও অর্জন করেছি। মূলত ফ্রিল্যান্সিং করি। এমব্রয়ডারি, বিয়ের কার্ড, মিনিয়েচার, ফেব্রিকের কাজ— সামাজিক মাধ্যমে নানা অর্ডার পাই। সব সময়ই নতুন কিছু করার ইচ্ছে থাকে।’
স্কুলের ফেলে আসা সেলাই দিদিমণির ক্লাস। শীতের রোদ্দুরে পিঠ রেখে মায়ের উল বোনা। রুমালের উপর এমব্রয়ডারি করে বাংলাদেশে ফেলে আসা বান্ধবীর জন্য ঠাম্মার ‘তবু মনে রেখো’র রঙিন সুতোর নকশা। এসব ব্যস্ত দৈনন্দিনে চাপা পড়ে থাকে ন্যাপথলিন দেওয়া ট্রাঙ্কে। কিন্তু অভিষিক্তা মনন, মেধা, পরিশ্রম দিয়ে সেই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন প্রতিদিন। একটু একটু করে জমিয়ে রাখছেন হাতের কাজের গল্প। গানের তানে এভাবেই সেলাই দিদিমণির দিনযাপন। 
স্বরলিপি ভট্টাচার্য
4Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততা বৃদ্ধি। গৃহে কোনও শুভানুষ্ঠান উপলক্ষে অতিথি সমাগমে আনন্দ। দেহে আঘাত...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৭৩ টাকা৮৬.৪৭ টাকা
পাউন্ড১০৫.৩৭ টাকা১০৯.০৯ টাকা
ইউরো৮৭.৪৫ টাকা৯০.৮১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
28th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা