আমরা মেয়েরা

সন্তানের বয়ঃসন্ধির সমস্যা সামলাবেন কী করে?

টিনএজারদের ব্যবহারে অনেক সময়ই নানা ত্রুটি লক্ষ করা যায়। সেগুলো এড়িয়ে না গিয়ে তার মোকাবিলা করতে হবে বাবা মা-কে। পরামর্শ দিলেন শিশু মনস্তত্ত্ববিদ সুমিত মেহতা।

মোহনার বয়স চোদ্দো বছর। তার মা লক্ষ করলেন আপাত শান্ত, লাজুক মেয়েটার হঠাৎই স্বভাব পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। প্রতিটি কথায় প্রত্যুত্তর, অনেক সময় বাবা মায়ের বকুনিকে উপেক্ষা করা, মুখে মুখে তর্ক সবই করছে সে। বাড়িতে দাদু ঠাকুরমার প্রশ্রয়ের দোহাই দিয়ে কিছুদিন মেয়ের ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না বাবা মা। কিন্তু ক্রমশ সমস্যা হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে শুরু করল। 
মোটামুটি একই সমস্যায় ভুগছেন রোমিতের বাবা মা-ও। রোমিত এখন ষোলো। কথায় কথায় বিরক্ত হয় এবং তা প্রকাশ করে। কিছু বললেই রাগারাগি, ঝগড়া, চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করে। এমনকী বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে সে। মা তো ছেলেকে রীতিমতো ভয়ই পান। বাবার শাসনেরও তেমন তোয়াক্কা করে বলে মনে হয় না। 
তেরো থেকে উনিশ, বয়ঃসন্ধির এই সময়টা কিশোর কিশোরীদের পক্ষে একটু সমস্যাবহুল তাতে সন্দেহ নেই। অনেক সময়ই বাচ্চারা বাবা মায়ের শাসনকে উপেক্ষা করতে চায়। বাধাপ্রাপ্ত হলে চেঁচামেচি করে, মুখে মুখে তর্ক, রাগারাগি কোনও কিছুই বাদ যায় না। এই সময় তাই একটু সচেতনভাবে বাচ্চাদের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারলে বয়ঃসন্ধির সমস্যাগুলো খানিকটা এড়িয়ে যাওয়া যায়, বললেন শিশু মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ সুমিত মেহতা। তবে তার আগে জানতে হবে কেন বয়ঃসন্ধিতে বাচ্চারা হঠাৎ এমন বেয়াড়া হয়ে ওঠে? 
বিষয়টি নিয়ে উটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগে একটি গবেষণাও হয়েছে বলে জানালেন সুমিত মেহতা। সেই গবেষণা বলছে, বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের মনোভাব ও চালচলনগুলো পরিবেশ নির্ভর হলেও মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে অনেকটাই এক। ফলে এই বয়সের কিশোর কিশোরীর মানসিক পরিস্থিতিটা বাবা মাকে বুঝতে হবে। সুমিত বললেন, কয়েকটা ‘ট্রিগার’ থাকে এই ধরনের আচরণের। কিন্তু কেন বয়ঃসন্ধিতেই আচরণটা বদলায়? এই সময়টা একটা ‘ট্র্যানসিশনাল ফেজ’ (পরিবর্তনের সময়)। বাচ্চাদের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন হয় এই সময়। মনের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক মনোভাবগুলো বাড়তে শুরু করে। মনটা পরিণত হতে থাকে। আবার পুরোপুরি শিশুমনের কীর্তিকলাপগুলো ঝেড়ে ফেলতে পারে না। ফলে ব্যবহারটা একটু এলোমেলো হয়ে যায়। বাবা মায়ের শাসনটাকে খবরদারি মনে হয়, আবার সেটাকে এড়িয়ে যাওয়ার যুক্তিটাও পুরোপুরি খুঁজে পায় না মনে। তখনই বিরক্তি, রাগ ইত্যাদি হয়। আচরণটাও বেসামাল হয়ে যায়। 
বাড়ির পরিবেশ এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাবা মায়ের মধ্যে বনিবনা না থাকে, ঝগড়া হয় বেশি, বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে বাবা মায়ের সম্পর্ক খারাপ হয় তাহলে বয়ঃসন্ধিতে তা বাচ্চার মনে দ্বিগুণ প্রভাব ফেলে। শিশু মনে এই ধরনের পারিবারিক টানাপোড়েনগুলো দাগ কাটে না, কিন্তু বয়ঃসন্ধির অর্ধেক শিশু, অর্ধেক পরিণত মনে তার প্রভাব অতিরিক্ত হয়ে যায়।  
এই সময় যদি কোনও কিশোর কিশোরীকে নিয়ে স্কুলের সহপাঠীরা বা অন্যরা হাসাহাসি করে, তাদের নিয়ে ঠাট্টা করে তাহলেও তাদের মানসিক রাগ, বিরক্তি বেড়ে যায়। এবং অনেক সময়ই সেই বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাবা মায়ের উপর।
অনেক সময় বড় দাদা বা দিদির বিয়ে হয়ে গেলে বয়ঃসন্ধির বাচ্চার মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। তারা ভাবে দাদা বা দিদি দূরে চলে গেল। সেক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার পাল্টাতে থাকে। মনখারাপ, তা থেকে বিরক্তি, বউদি বা জামাইবাবুর প্রতি অকারণ বিরূপতা ইত্যাদি দেখা দেয়। 
বাড়িতে খুব ঝগড়া বা কথাকাটাকাটির পরিবেশ থাকলে বাচ্চারা অনেক সময় সেটাকেই স্বাভাবিক ভেবে সেইরকম আচরণ করে। তবে বাবা মায়ের সম্পর্কের প্রভাব এই সময় বাচ্চাদের মনে সবচেয়ে বেশি পড়ে। 
 
বয়ঃসন্ধির এলোমেলো আচরণের কারণগুলো বিশ্লেষণ করার পর তার কিছু সহজ সমাধানের পথও জানালেন সুমিত। তিনি বললেন বাবা মাকে কয়েকটা ক্ষেত্র একটু বিচার করে নিজেদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
 
 প্রথমত আপনার সন্তান যখন কৈশোরে পদার্পণ করবে তখন থেকেই তার সামনে নিজের ব্যবহার সংযত করুন। স্বামী স্ত্রীর প্রকাশ্যে ঝগড়া এই সময় একবারেই অনুচিত। এমনকী নিজের রাগ বিরক্তি ‌ইত্যাদিও নিয়ন্ত্রণে রাখুন। বাড়ির সবার সঙ্গেই একটা কাজ চালনোর মতো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। না পারলে বাচ্চার সঙ্গে সে বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলুন।

 দ্বিতীয়ত বাচ্চার বক্তব্য মন দিয়ে শুনুন। বাচ্চা যেন নিজেকে বাড়িতে অবহেলিত না ভাবে সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনার আচরণ দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিন যে তার ব্যবহার যদিও আপনি মেনে নিচ্ছেন না, তাই বলে তার সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এমন নয়। কিন্তু সেটা সামলানোর অন্য উপায় আছে। বাচ্চার সঙ্গে সেই উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। 
 অহেতুক বাচ্চার উপর খবরদারি করবেন না। তার কথাকে গুরুত্বহীন বলে উড়িয়ে দেবেন না। তার কৃতিত্বকে খাটো করবেন না। অন্য কারও সঙ্গে বাচ্চার অযথা তুলনা করবেন না। এই জিনিসগুলো বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে। 
 বয়ঃসন্ধির সন্তানের সঙ্গে বাচ্চার মতো আচরণ করবেন না। সর্বসমক্ষে তাকে শাসন করবেন না। বরং তার ব্যবহারের ত্রুটি ধরিয়ে দিন, শান্ত মেজাজে।
 সন্তানের সঙ্গে আপনার আচরণের সমীকরণটা বদলে ফেলুন। অনেক আলোচনা যেমন খোলাখুলি করতে হবে এই সময়, তেমনই একটা মাত্রাও রাখা দরকার। অনেক বাবা-মা সন্তানের বন্ধু হয়ে ওঠারে নেশায় এই সীমারেখাগুলো লঙ্ঘন করেন। এটা কখনওই ঠিক নয়।
 সন্তান আপনাকে অভিভাবক হিসেবেই দেখবে, বন্ধু হিসেবে নয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। ফলে সে বন্ধুদের সঙ্গে যেমন আচরণ করবে তেমন আচরণ কখনওই আপনার সঙ্গে যেন না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। যদি সীমা অতিক্রম করে তাহলে তাকে সতর্ক করে দিন। 
 সন্তানের টেম্পার ট্যান্ট্রাম বা অহেতুক রাগ যখন হবে তখন আপনিও তার সঙ্গে চিৎকার করবেন না। তাকে কঠিন কিন্তু শান্ত মেজাজে বোঝান সে যেটা করছে সেটা ভুল। তাহলে তাকে শান্ত করা অনেক সহজ হবে। আপনিও যদি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
   সন্তানকে বয়সের ছন্দে বড় হতে দিন। জীবনের সিদ্ধান্তগুলো ওকে নিতে দিন স্কুলের গণ্ডি পেরনোর পর। আপনি পাশে থাকুন। প্রয়োজনে ভালোমন্দ বুঝিয়ে দিন বা আলোচনা করুন।       
কমলিনী চক্রবর্তী
3Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায়...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.১৩ টাকা৮৫.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.২৭ টাকা১০৭.৯৮ টাকা
ইউরো৮৬.৪২ টাকা৮৯.৭৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা