পার্বণী মেনু থেকে মাছের দু’টি অনন্য রেসিপি জানালেন ৬ বালিগঞ্জ প্লেসের কর্ণধার শেফ সুশান্ত সেনগুপ্ত।
বঙ্গরসায় মাছের কদর চিরকালের। ১৩০০ শতাব্দী থেকেই নাকি মাছ খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছিল বাঙালিদের মধ্যে। তার একটা বড় কারণ অবশ্যই আমাদের দেশের নদীমাতৃক অবস্থান। শোনা যায়, প্রথমদিকে মাছ ভেজে খাওয়ার চল ছিল। পরবর্তীকালে মাছের ঝোল, ঝাল ও অন্যান্য পদের প্রচলন ঘটে। এই বিষয়ে ৬ বালিগঞ্জ প্লেস রেস্তরাঁর অন্যতম কর্ণধার শেফ সুশান্ত সেনগুপ্ত বলেন তিনি তাঁর রেস্তরাঁয় মোটামুটি গতানুগতিক মাছের পদই পরিবেশন করেন। কিছু জিনিস রয়েছে যার গাতনুগতিকতার মধ্যেই তার সৌন্দর্য ধরা থাকে। বাঙালি রান্নাও অনেকটাই তাই। ফিউশন রন্ধন প্রণালী যেমন তার জায়গায় ঠিক আছে, কিন্তু তাতে বাঙালি ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই বিশেষত পুজো পার্বণের দিনে বাঙালি পদ সেই স্টাইলে রান্না করাই শ্রেয় বলে মনে করেন শেফ। পাবর্ণী মেনুতে রাঁধার মতো দু’টি মাছের রেসিপি জানালেন তিনি। এই রেসিপিগুলো এমন উপকরণ দিয়ে তৈরি যা বাজারেও সহজলোভ্য, আর রান্নার পদ্ধতিও অনায়াস। সারাবছর কাজে গলদঘর্ম গৃহিনীদের যাতে বচ্ছরকার দিনে রাঁধা বাড়ার আয়োজনে সব সময় কেটে না যায় সেই কারণেই আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছেন শেফ এই রান্নায়। তবে স্বাদে গতানুগতিকতার ত্রুটি রাখেননি তিনি। বরং রেস্তরাঁ থেকে দু’টি এমন রেসিপি আজ আপনাদের পাতে তুলে দিতে চান যা বাড়িতে বানানোও অনায়াসেই সম্ভব।
ডাব চিংড়ি
উপকরণ: ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া চিংড়ি ১০টা, সাদা সর্ষে বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো স্বাদ মতো, নুন আন্দাজ অনুযায়ী, নারকেলের দুধ কাপ, সর্ষের তেল ৪ চামচ, ডাব ১টা, লেবুর রস টা।
পদ্ধতি: চিংড়ি মাছ নুন, হলুদ, সর্ষে বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, লেবুর রস, নারকেলের দুধ ও সর্ষের তেল দিয়ে ম্যারিনেট করে রেখে দিন। মোটামুটি আধ ঘণ্টা এইভাবে রেখে দিন। এরপর ডাবটা কেটে নিন। এমানভাবে কাটবেন যাতে মুখের কাছটা বেশ বড় করে ফাঁক হয়। এরপর খানিকটা জল আলাদা করে সরিয়ে রাখুন। অর্ধেক পরিমাণ জল ডাবের ভেতর থাকবে, এই অবস্থায় ম্যারিনেট করা চিংড়িগুলো ডাবের ভেতর ভরে দিন। এরপর ডাবের মুখটা আটা দিয়ে সিল করে দিন। এবার তা প্রিহিট করা আভেনে ঢুকিয়ে ২৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৪০ মিনিট বেক করুন। হয়ে গেলে আভেনের ভিতর মিনিট দশেক রেখে দিন। তাতে মাছ ডাবের জলে মজে যাবে। তারপর তা বের করে পরিবেশন করবেন।
ভেটকি পাতুরি
উপকরণ: ভেটকি মাছের ফিলে ৫০০ গ্রাম, কালো সর্ষে বাটা ১ টেবিল চামচ, নারকেল কোরা ১ টেবিল চামচ, সর্ষের তেল ৪ টেবিল চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা ১ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো, লেবুর রস সামান্য, হলুদ গুঁড়ো চা চামচ, চিনি স্বাদ অনুযায়ী, যতগুলো মাছের ফিলে ততগুলো কলাপাতার টুকরো।
পদ্ধতি: ভেটকি মাছের ফিলে কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর তা ন্যাপকিন দিয়ে মুছে শুকনো করে নিন। এবার এই ফিলেগুলো নুন ও লেবুর রস দিয়ে ম্যারিনেট করে রেখে দিন অন্তত আধ ঘণ্টা। এরপর তাতে সর্ষে বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, হলুদ গুঁড়ো, সর্ষের তেল নারকেল কোরা ও সামান্য চিনি দিয়ে আবারও ম্যারিনেট করুন। দশ মিনিট রেখে দিন। ইতিমধ্যে কলাপাতা টুকরো করে কেটে নিন। তাতে তেল ব্রাশ করে নিন। এরপর একটা করে কলাপাতা নিয়ে তার মাঝে মাছের একটা ম্যারিনেট করা ফিলে রাখুন। অল্প একটু গ্রেভি উপরে দিয়ে কলাপাতা মুড়িয়ে দিন। সুতো বা টুথপিক দিয়ে গেঁথে দিন যাতে কলাপাতার মোড়ক খুলে না যায়। এইভাবে সব মাছের ফিলেতে কলাপাতা মুড়িয়ে নিন। তারপর ননস্টিক তাওয়া গ্যাসে বসিয়ে তাতে অল্প তেল ব্রাশ করে নিন। তেল গরম হলে পাতুরিগুলো তাওয়ায় সাজান। ঢিমে আঁচে ঢাকা দিয়ে অন্তত আধ ঘণ্টা রাঁধুন। মিনিট পনেরো বাদে পাতুড়ি উল্টে দিন। এক পিঠ হলে অন্য পিঠ উল্টে ভাজতে হবে। আধ ঘণ্টা বাদে গ্যাস বন্ধ করে খানিকক্ষণ পাতুড়িগুলো তাওয়াতে রেখে দিন। তারপর পরিবেশন করুন।
ছবি: প্রদীপ পাত্র
শ্যুটিংস্থল : চন্দ্রকোণ স্টুডিও