শরীর ও স্বাস্থ্য

বন্যার বিপদ: ডায়ারিয়া ও সর্পাঘাত: চটজলদি কী করবেন?

বিপদ যখন পেটের অসুখ
বান-বন্যায় ডায়ারিয়া তো বটেই, তার সঙ্গে অন্যান্য পেটের সংক্রমণ থেকেও বাঁচার একাধিক উপায় আছে। পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট চিকিত্‍সক ডাঃ সত্যপ্রিয় দে সরকার।

বন্যাকবলিত অঞ্চলে ডায়ারিয়া
জলবাহিত রোগের অন্যতম ডায়ারিয়া। বন্যাকবলিত অঞ্চলে বা অতিবৃষ্টিতে এই ব্যাকটেরিয়া-ঘটিত অসুখের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এটি প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনকেও সতর্ক থাকতে হবে। এসময় জল জমে পুকুরঘাট, নদীনালার জলস্তর একাকার হয়ে যায়। অনেক জায়গায় খাওয়ার জলের পাইপের মধ্যে রাস্তার নোংরা জমা জল মিশে যায়। বাধ্য হয়েই সেই নোংরা, ঘোলাটে জলে ঘর-গেরস্থালির সব কাজ সারতে হয়। এমনকী, সবচেয়ে বড় অসহায়তা, এই জলেই শৌচকর্ম সারতে হয়। পানের উপযুক্ত জলটুকুও থাকে না। ফলে বন্যাকবলিত এলাকায় নিজের বর্জ্যেই নিজে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। শরীরে বিষ মেশার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয় মানববর্জ্য। হানা দেয় ডায়রিয়ার মতো অসুখ। এই অসুখে ঠিক সময়ে চিকিৎসা ও যত্ন না পেলে বারংবার শরীর থেকে জল ও মিউকাস বেরতে থাকে। ফলে একটা সময় শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটে ভারসাম্য নষ্ট হয়। পটাশিয়ামের পরিমাণ শিশু ও বয়স্কদের শরীরে বেশি মাত্রায় কমে। সময়ে চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এই ধরনের ডায়ারিয়ায় জ্বর, গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা, মাথা ধরা, জিভ শুকিয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকতে পারে।  
এসব জায়গায় ডায়ারিয়া রুখতে বিশেষ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলুন।
 কী ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে ডায়ারিয়া হল, তার প্রকৃতি কী, এত কিছু খতিয়ে দেখার ও পরীক্ষা করার উপায় বন্যাকবলিত অঞ্চলে থাকে না। তাই ওআরএস-এর পর্যাপ্ত জোগান থাকতেই হবে। বন্যাবিধ্বস্ত অঞ্চলে মানুষজনের ডায়ারিয়ার উপসর্গ থাক বা না থাক, প্রত্যেকে যেন ওআরএস নিয়মিত খান। 
 ওআরএসের মতো জিওলিনেরও বিশেষ গুরুত্ব আছে। জিওলিন মেশানো জল এই সময় বন্যার্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত। এক লিটার জলে কতটুকু জিওলিন লাগবে তা জিওলিনের কৌটোর গায়ে লেখা থাকে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে একটু পরিষ্কার জলে মেশাতে হবে জিওলিন। বন্যাকবলিত অঞ্চলের অধিবাসীরাও এই সময় সতেচন হোন। বাড়ির সবচেয়ে উঁচু জায়গায় কয়েক লিটার জল মজুত করে রাখুন বন্যাপরিস্থিতি তৈরির আগে থেকেই। প্রয়োজনে জলকে ফিল্টার করে জিওলিন মিশিয়ে রাখুন। ত্রানশিবিরেও মজুত থাক জিওলিন দেওয়া জল। তবে অবশ্যই জিওলিনের মাত্রা বুঝে ব্যবহার করতে হবে। 
 বন্যাকবলিত অঞ্চলের কাছে একটি হাসপাতালকে সংক্রামক অসুখের জন্য বিশেষ পরিকাঠামোযুক্ত হাসপাতাল হিসেবে তৈরি রাখা প্রয়োজন। আমাদের রাজ্যে বেশ কিছু অঞ্চল প্রতি বছরই বৃষ্টি ও বাঁধের জল ছাড়ার কারণে বন্যাকবলিত হয়। তাই জল ছাড়ার খবর প্রকাশ্যে আসামাত্রই এই হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত রাখতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে পরিস্থিতি বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই রোগীকে সেখানে পাঠিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রয়োজনীয় ওআরএস, জিওলিন মেশানো জল, অ্যান্টিবায়োটিক, স্যালাইন ও ইঞ্জেকশন সেখানে আগে থেকেই মজুত রাখা উচিত। 
 কিছু ত্রাণশিবিরে ৩০০-৪০০ জন মানুষ আশ্রয় নেন। কোথাও আবার ১০০-১৫০ জন। ৮-১০ জনের জন্য ১টি বায়োটয়লেট বরাদ্দ হওয়া উচিত। তাই মানুষের সংখ্যা বুঝে বরাদ্দ করতে হবে বায়োটয়লেট। 
 ত্রাণশিবিরে খাবার হিসেবে বেশি ফ্লুইড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ খিচুড়ি রাখুন।

বন্যাকবলিত নয়, তবু ডায়রিয়া! কী করব?
 জল অবশ্যই ফুটিয়ে ঠান্ডা করে বা জিওলিন দিয়ে পরিশুদ্ধ করে ব্যবহার করুন। 
 ওআরএস দিতে হবে রোগীকে। তিন লিটার জলের মধ্যে অন্তত এক লিটার জল খাবেন ওআরএস মিশ্রিত অবস্থায়। 
 খাওয়াদাওয়ায় নজর দিতে হবে এই সময়ে। নিত্য জলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ভাজাভুজি, তেল মশলাদার খাবার খাওয়া একেবারেই চলবে না।
 এই সময় কোথাও কাঁচা শাকসব্জি খাবেন না। কয়েকটা দিন স্যালাড এড়িয়ে চলুন। 
 বাইরে থেকে ফল কিনে খেলে ভালো করে ধুয়ে নিন। রোগীকে কাঁচা ফলের বদলে আপেলসেদ্ধ দিন। শাকসব্জিও ভালো করে ধুয়ে সুসিদ্ধ করে রান্না করুন।
 ডায়ারিয়া হলে শরীরে পটাশিয়ামের ভাগ কমে। তাই কলা, লেবুর রস, স্যুপ, পেঁপে এসব রাখুন খাদ্যতালিকায়।
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়
 
সাপে কামড়ালে করণীয় কী? 
সাপে কাটা রোগীও ১০০ শতাংশ বাঁচবেন। কীভাবে? পরামর্শে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সক ডাঃ শুভেন্দু বাগ।

জলের তলায় আতঙ্ক!
নদীতে বান ডেকেছে আর বাঁধ ভেঙে গ্রামেগঞ্জে হুড়মুড়িয়ে জল সুনামির মতো! সংবাদ মাধ্যমে এই ছবি সকলের নজরে এসেছে নিশ্চয়। যে বাড়ি ছিল নিশ্চিত, নিরাপদ আশ্রয়স্থল— সেই ঘরেই এখন এক গলা জল। গৃহহীন কতশত লোক! বান-বন্যার জল যে শুধুই ভিটে হারা করে তাই নয়, তার সঙ্গে জলের সঙ্গে একাধিক সমস্যাও ডেকে আনে। রোজকার বাঁচার রসদ মেলে না সহজে। ওই গলা পর্যন্ত জল পেরিয়েশুকনো জায়গা থেকে আনতে হয় জল, সব্জি, চাল, ডাল! আর সেই সময়েই ঘটে যায় সর্পদংশনের মতো অঘটন। এমনিতে গাঁ-গ্রামে রাতবিরেতে মাঠে-ঘাটে হাঁটার সময়, মায় বাড়ির দাওয়ায় শুয়ে থাকার সময়েও অনেকে শীতল রক্তের প্রাণীটির ছোবল খান! তবে বন্যার সময় পরিস্থিতি ভিন্ন।
বন্যার জল ঘোলাটে। তার মধ্যে একজন লোক গলা বা কোমর অবধি ডুবিয়ে হাঁটছেন—  এমন অবস্থায় পায়ে সাপ কামড়ালেই চিত্তির! প্রথমত কোন সাপে কামড়ালো তা বোঝার উপায় নেই। ফলে সেই সাপের বিষ আছে নাকি নেই তা জানাও সম্ভব নয়! প্রশ্ন হল করবেন কী?

করণীয়
জলের বাইরেও যদি সাপ কামড়ায়, আর সেই সাপকে যদি চেনা সম্ভব নাও হয়, তাহলেও সাপের পিছনে দৌড়ে তাকে ধরার দরকার নেই। সাপ চেনারও কোনও প্রয়োজন নেই। এমনকী সাপের কামড়ের দাগও মোটেই চিকিত্সকদের কাছে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ দেখা গিয়েছে নির্বিষ সাপেরও কামড়ের দাগ থাকতে পারে। আবার এও দেখা গিয়েছে যে বিষধর সাপ কামড়েছে অথচ তার কোনও ক্লাসিক্যাল বাইট মার্ক নেই! সামান্য একটা কাটা ছেঁড়ার দাগও থাকতে পারে। ফলে আমরা একেবারেই দেখতে যাব না যে সাপটি বিষাক্ত নাকি নির্বিষ। সুতরাং জলের ভিতরে কিছু একটা পায়ে কামড় দিলে আমাদের প্রাথমিক কাজ একটাই হবে, তা হল যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। পায়ে কোনও সাপ কামড়েছে নাকি পোকা নাকি কোনও গাছের ডালে বা তীক্ষ্ণ ইটের খোঁচা লেগেছে তা বুঝতে পারবেন একমাত্র মেডিক্যাল অফিসার। কারণ সাপের কামড়ের উপসর্গ মেডিক্যাল অফিসাররাই ভালো বোঝেন। 

সর্প পরিচিতি
তবে হ্যাঁ, পশ্চিমবাংলায় যে সাপগুলি আছে তার মধ্যে চারটি সাপের কামড় বেশি খেতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকে। এই তালিকায় থাকবে চন্দ্রবোড়া। এরপর আসবে কালাচ বা কালচিতির (কেউ কেউ সাপটিকে ডোমনাচিতিও বলেন) নাম। এই দুই সাপের ফণা নেই। এই দু’টি ছাড়া তালিকায় যোগ করতে হবে দু’টি ফণাযুক্ত সাপের নাম। প্রথমটি হল গোখরো যার মাথার উপর রয়েছে গোরুর খুরের মতো দাগ। আর একটি সাপ হল কেউটে।
এদের মধ্যে ফণাহীন চন্দ্রবোড়া এবং ফণাযুক্ত গোখরো এবং কেউটে এই সাপগুলি কামড়ালে কামড়ানোর জায়গায় ফুলবে এবং ব্যথাও হবে। তবে কালাচ সাপের দংশনের জায়গাটি ফুলবেও না, ব্যথাও হবে না। এমনকী কামড়ের দাগটুকুও বোঝা যাবে না। এই কারণেই দাগ থাক আর নাই থাক, কোনও কিছু কামড়েছে টের পেলেই সরাসরি সরকারি হাসপাতালে যান। কারণ চন্দ্রবোড়া হচ্ছে রক্ততঞ্চন ধ্বংসকারী সাপ যা কিডনি নষ্ট করে দেয়। কালাচ, কালচিতি বা ফণাযুক্ত গোখরো কেউটে ভয়ঙ্কর নিউরোটক্সিক যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। ফলে রেসপিরেটরি ফেলিওর হয়ে রোগী মারা যায়।

কোথায় নিয়ে যাবেন?
কোনও ওঝা বা গুনিনের কাছে নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। সাপে কামড়ের পর প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর বন্যা পরিস্থিতিতে এমনিতেই রোগীকে উপযুক্ত পরিবহণ খুঁজে নিয়ে যেতেই সময় নষ্ট হয়। তাই কোনওভাবেই ঝুঁকি নেবেন না। রোগীকে সবসময় নিয়ে যেতে হবে সরকারি হাসপাতালে। মনে রাখবেন, বেসরকারি হাসপাতালে এভিএস (অ্যান্টিভেনম সিরাম) পাওয়া যায় না। একমাত্র সরকারি হাসপাতালেই এভিএস  মেলে। 

বাঁধন দেবেন?
না, বাঁধন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু যেখানে কামড়ালো, তার পরের জয়েন্ট এবং আগের জয়েন্টে একটা স্কেল বা গাছের ডালের মতো কিছু দিয়ে বেঁধে দিন। ঠিক যেভাবে কারও হাত কিংবা পা ভেঙে গেলে আমরা বাঁধন দিই সেভাবে দিতে হবে বাঁধন। এর ফলে সাপের কামড় খাওয়া অঙ্গটির নড়াচড়া যতখানি কম করা সম্ভব হবে। আর এভাবেই রোগীকে নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে।

অবশ্যই স্মরণে রাখুন
রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটা নিয়ম রয়েছে। তা হল, রুল অব হান্ড্রেড। অর্থাত্‍ সাপে কামড়ানোর ঠিক ১০০ মিনিটের মধ্যে ১০০ এমএল এভিএস রোগীর শরীরে ঢোকাতে পারা গেলেই ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী প্রাণ হারাবেন না।

পরিবহণ সচেতনতা
বন্যা দুর্গত এলাকায় সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতাল পর্য়ন্ত নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র প্রধান অন্তরায় হল পরিবহণ। সাধারণ পরিস্থিতিতে রোগীকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে মোটরবাইকে চাপিয়েও নিয়ে যাওয়া যায় হাসপাতালে। তবে বন্যাদুর্গত এলাকায় বাইক চলে না। তাই নৌকা করে নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। 

রোগীকে কীভাবে নিয়ে যাবেন?
রোগীকে শুইয়ে বা বসিয়ে যেভাবে সুবিধা নিয়ে যান। মূল লক্ষ্য রাখুন রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দিকে। সেক্ষেত্রে গ্রামে ত্রাণের ব্যবস্থায় নিযুক্ত নৌকা বা কোনও মাঝির নৌকা থাকলে তাকে আগে থেকে বলে রাখা যে, সমস্যা হলে সে যেন দ্রুত হাজির হতে পারে।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক
8d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

মেয়াদি সঞ্চয় বা পৈতৃক সম্পত্তি সূত্রে ধনাগম যোগ দেখা যায়। কাজকর্মের ক্ষেত্রে ও আর্থিক দিক...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৯ টাকা৮৪.৮৩ টাকা
পাউন্ড১০৯.৪৭ টাকা১১৩.০৪ টাকা
ইউরো৯১.০৬ টাকা৯৪.২৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা