হ য ব র ল

পর্বতশৃঙ্গের বিভীষিকা

অন্নপূর্ণা, কে-২, নাঙ্গা পর্বতের মতো শৃঙ্গগুলি অভিযাত্রীদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের। তবুও সাহসে ভর করে বেরিয়ে পড়েন পর্বতারোহীরা। সেই গল্পই শোনালেন বিশ্বজিৎ দাস।

আজ তোমাদের শোনাব একজন মায়ের গল্প। আর সেই সঙ্গে থাকবে বেশ কয়েকটি পর্বতের কাহিনি। তিব্বতের (চীন নিয়ন্ত্রণাধীন) কৈলাস পর্বতে নাকি স্বয়ং মহাদেবের বাস। আর সুকুমার রায়ের দৌলতে তো তোমরা জেনেই গিয়েছ, ‘শিব ঠাকুরের আপন দেশে, আইন-কানুন সর্বনেশে...’। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম জিজ্ঞেস করলে তোমরা সমস্বরে বলবে, ‘এভারেস্ট, মাউন্ট এভারেস্ট’। হিমালয়ের এই উচ্চতম শৃঙ্গটি নেপাল-চীন সীমান্তে অবস্থিত। প্রথম এভারেস্ট জয়ী তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারির নামও তোমাদের জানা। কিন্তু যদি প্রশ্নটা ঘুরিয়ে করা হয়— ‘আচ্ছা, বল তো পৃথিবীর কোন পর্বতশৃঙ্গ আজও পর্বতারোহীদের কাছে রীতিমতো ভয় আর উদ্বেগের কারণ?’ কি ফ্যাসাদে পড়ে গেলে তো? কোনটা ছেড়ে কোন শৃঙ্গের নাম বলবে ভেবে পাচ্ছ না নিশ্চয়ই। যেটা ভাবছ, ঠিকই ভাবছ, এক্ষেত্রে অনেকগুলি নাম বলতে হবে। প্রথমেই আসবে অন্নপূর্ণার (৮ হাজার ৯১ মিটার) নাম। এরপর কে-২(৮ হাজার ৬১১ মিটার)। তারপর নাঙ্গা পর্বত (৮ হাজার ১২৬ মিটার)। এমনকী বহু পর্বতারোহী শৃঙ্গে উঠলেও কাঞ্চনজঙ্ঘাও (৮ হাজার ৫৮৬ মিটার) কম যায় না।
এখন চ্যাটজিপিটির যুগ। তথ্য আর তত্ত্বের অভাব নেই। তাই এই পর্বতশৃঙ্গগুলির মধ্যে যদি সবচেয়ে রহস্যময় ও প্রাণঘাতী শৃঙ্গের কথা ওঠে, তাহলে সবার প্রথমে আসবে কে-২-এর নাম। অনেকে অবশ্য অন্নপূর্ণাকে প্রথম স্থানে রাখেন। পরিসখ্যান বলছে, যদি তিনজন পর্বতারোহী অন্নপূর্ণায় ওঠার চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁদের মধ্যে একজনের বিয়োগান্তক পরিণতি হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে তিনজনের মধ্যে দু’জন পর্বতারোহণে সফল হন। মৃত্যুহার প্রায় ৩২ শতাংশ। সেদিক থেকে তুলনা করলে কে-২ একটু কম বিপজ্জনক। কারাকোরাম পর্বতমালার গডউইন অস্টিন হিমাবাহের কাছে এই শৃঙ্গ জয় করার জন্য অভিযান চালালে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ব্যর্থ হন। এতক্ষণ যেসব পর্বতশৃঙ্গের কথা হচ্ছে সেগুলি সবই কমবেশি চারটি দেশকে ঘিরে রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, চীন ও নেপাল। ইউরোপ ও আমেরিকার দুটো পাহাড়ের কথাও এক্ষেত্রে বলতেই হয়। সেগুলিও আছে পর্বতারোহীদের ‘ব্যাড বুকে’। একটি হল সুইজারল্যান্ডের ম্যাটারহর্ন। অন্যটি আমেরিকার আলাস্কার ডেনালি। কিন্তু সবগুলো মিলিয়ে ধারেভারে বিপজ্জনক পর্বতশৃঙ্গের তালিকায় কে-২-কে এক নম্বরেই রাখতে চান বেশিরভাগ অভিযাত্রীরা। ১৯৫৩ সালে পর্বতারোহী জর্জ বেল কে-২ সম্পর্কে একটি মারাত্মক কথা বলেছিলেন, ‘its a savage mountain that tries to kill you’। অর্থাৎ ‘কে-২ এমন একটি বন্য হিংস্র পর্বত যে কি না পর্বতারোহীকে মৃত্যুর কোলে পাঠিয়ে দিতে চায়!’ গুচ্ছগুচ্ছ সিনেমা, ডকুমেন্টারি হয়েছে কারাকোরামের এই পর্বতশৃঙ্গকে নিয়ে। কোনও কোনও পর্বতারোহী পৃথিবীর এই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে বলেছেন, ‘কিং অব মাউন্টেনস’। কেউ আবার বলেছেন ‘দ্য মাউন্টেনিয়ার্স মাউন্টেন’!
এবার সেই মায়ের গল্পে আসা যাক। টম আর কেট নামে সেই মহিলার দুটো মিষ্টি বাচ্চা ছিল। আমরা অ্যালিসন হারগ্রিবসের কথা বলছি। ব্রিটেনের এই বিখ্যাত পর্বতারোহী কোনও শেরপা ও অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই প্রথম মহিলা হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিলেন। হার না মানা এই মহিলা ঠিক করেছিলেন একই বছরে পরপর তিনটে পর্বতশৃঙ্গ জয় করবেন। মাউন্ট এভারেস্ট, কে-২ ও মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা। সালটা ছিল ১৯৯৫। এভারেস্ট জয়ের পরপরই তিনি কে-২-এর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। স্যাভেজ মাউন্টেনকে জয়ও করেছিলেন নিজের অদম্য প্রাণশক্তিকে সম্বল করে। কিন্তু নামার সময় অ্যালিসন সহ ছ’জন পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়। সাঙ্ঘাতিক তুষার ঝড়ের কবলে পড়ে ওই অভিযাত্রীদের মৃত্যু হয়। ওই অভিযানে এডমন্ড হিলারির পুত্র পিটারেরও অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের এই পর্বতারোহী। যাইহোক, টম আর কেটকে বাড়িতে রেখেই নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে বেরিয়ে পড়েছিলেন তাঁদের মা। সংসারের পিছুটানে বাঁধা পড়েননি।  নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অসম্ভব বলে কিছু হয় না। আসল অমরত্ব এটাই! তাই আজও পর্বতারোহণের ইতিহাসে অ্যালিসনের নাম অমর হয়ে রয়েছে। কিন্তু গল্প এখানে শেষ হল না। টম ব্যালার্ড বড় হয়ে মায়ের মতোই পর্বত অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। আল্পস পর্বতমালার বিভিন্ন শৃঙ্গ জয় করেন। ২০১৯ সালে নাঙ্গা পর্বত জয় করতে গিয়ে মায়ের মতোই পর্বতের কোলে তাঁর মৃত্যু হয়।
তোমরা কি জান, পর্বত অভিযানে বেরিয়ে কী কী ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয় অভিযাত্রীদের? প্রথমেই আসবে সান ব্লাইন্ডনেসের কথা। সরাসরি সূর্যের আলো চোখে এসে পড়ে। কিছু দেখা যায় না। এরপরই আসে পালমোনারি ইডিমা। এক ধরনের ফুসফুসের মারাত্মক সমস্যা। হার্টের বিপদ। অতি উচ্চতায় হৃদযন্ত্রকে বেশি কাজ করতে হয়। তাই দুর্বল হৃদয় নিয়ে পর্বতারোহণ করা যায় না। ফ্রর্স্ট বাইট। প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে যায় হাত-পা। বিশেষত আঙুলগুলো। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করলে বাদ দিতে হতে পারে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
3Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৬ টাকা১১১.৮৬ টাকা
ইউরো৮৯.৯১ টাকা৯৩.৩২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা