বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

স্টেন্টের জন্ম

ব্যাঙ্ক থেকে সদ্য বাড়ি ফিরেছেন সোমনাথবাবু। চেয়ারে বসতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেলেন। ছুটে এলেন ষাটোর্ধ্ব প্রতিমাদেবী। স্বামীর এমন অবস্থা দেখে খানিক ঘাবড়ে গিয়েও সামলে নিলেন। ছুটলেন প্রতিবেশীদের কাছে। সকলে মিলে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। ডাক্তার বললেন, হার্ট অ্যাটাক। ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে সেখানে স্টেন্ট বসল। কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরলেন সোমনাথবাবু। একদিন অলস দুপুরে তাঁকে ওষুধ দিয়ে ‘কাজ আছে’ বলে উঠে যাচ্ছিলেন প্রতিমা। শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরলেন বৃদ্ধ। আদরমাখা গলায় বললেন, ‘একটু বসো না কাছে। সারাক্ষণ তো কাজই করছো।’ স্বামীর আব্দার ফেলতে না পেরে বসলেন প্রতিমা। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন করলেন, ‘হ্যাঁ গো, তোমার শরীরে টেন্ট না কী বসল, ওটা কী?’ হো হো করে হেসে উঠলেন সোমনাথ। বললেন, ‘স্টেন্ট। হার্টের করোনারি ধমনিতে কোলেস্টেরল প্লাক জমে। ধমনির মধ্যে রক্ত সঞ্চালন হয়। প্লাক জমলে তা বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হয় অনেকক্ষেত্রে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সাহায্যে ধমনির মধ্যে জমা প্লাক বের করা হয়। এরপর ওই অংশে বসানো হয় স্টেন্ট। ধমনীকে বাইরের এই ক্ষুদ্র স্টেন্টের সাহায্যে চওড়া করে আবার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়। বুঝলে গিন্নি?’ ঘাড় নাড়ালেন প্রতিমা। সোমনাথ বললেন, ‘এই যে আমি সুস্থ হলাম, এর জন্য জ্যাক পুয়েল এবং উলরিচ সিগওয়ার্টকে ধন্যবাদ দাও।’ মাথা চুলকে বৃদ্ধা বললেন, ‘এঁরা কারা গো?’ সোমনাথবাবু বলেন, ‘মানুষর শরীরে স্টেন্ট প্রথম বসিয়েছিলেন এঁরা। 
একটু শুরু থেকে বলি। স্টেন্ট শব্দটি এসেছে দন্ত চিকিৎসক চার্লস স্টেন্টের নাম থেকে। চার্লস ডটার নামের একজন চিকিৎসক ছিলেন। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাদ না দিয়ে ধমনীর ব্লকেজ খোলার কৌশল দেখিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এই পদ্ধতিকে বলা হতো ডটারিং। পরবর্তীতে আন্দ্রেয়াস গ্রুয়েন্টজিগ নামক আরও একজন চিকিৎসক বুঝেছিলেন, ডটারিং অসাধারণ পদ্ধতি হলেও এর পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনি পরিবর্তন আনলেন। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সূচনালগ্ন বলা চলে এটিকে। ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল এই চিকিৎসাপদ্ধতি। কার্ডিওলজিস্টরা একসময় অনুভব করলেন, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার কিছু সময় পর থেকে ধমনী ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হল। এমন সময় জ্যাক পুয়েল এবং উলরিচ সিগওয়ার্ট একটি ক্ষুদ্র বস্তু বসিয়ে দিলেন। এর ফলে আর্টারি স্বাভাবিক রইল। তার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল করল। ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সে এক রোগীর শরীরে প্রথম এমন স্টেন্ট বসল। গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলল এই প্রক্রিয়া। এর একবছর পর ১৯৮৭ সালে জুলিও পালমাজ ও রিচার্ড শ্যাটজ জার্মানিতে এর চেয়ে উন্নত প্রসারণযোগ্য স্টেন্ট বসালেন রোগীর শরীরে। ধমনীর সংকোচনের ঘটনা আরও কমাতে ড্রাগ-ইলিউটিং স্টেন্ট চালু হয়। এখনও স্টেন্ট নিয়ে নানান পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে।’ প্রতিমাদেবী বললেন, ‘এই স্টেন্টের তো অনেক খরচ না?’ সোমনাথবাবু জবাব দেন, ‘এই জন্যই তো এপিজে আব্দুল কালাম ও তাঁর বন্ধু ড. সোমা রাজু কম খরচের স্টেন্ট বাজারে এনেছিলেন। কালাম-রাজু স্টেন্ট নামে পরিচিত এটি।’
শান্তনু দত্ত

11th     April,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ