শরীর ও স্বাস্থ্য

ভবিষ্যতে জিন থেরাপিই কি সব জটিল রোগের সমাধান

লিখেছেন গুরুদাস কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডঃ অনিন্দ্য ভট্টাচার্য।

জিন কী?
আমাদের দেহে বংশগতির ধারক এবং বাহক একটি দ্বিতন্ত্রী অণু বিদ্যমান যার নাম ডি.এন.এ। এই ডি.এন-এর অংশ যা বংশগত বৈশিষ্ট্যের একক সদৃশ্য, তাকে জিন বলে। জিন ক্রোমোজোমের একটি নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থাকে এবং সাধারণত একটি প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে। যদিও এর কিছু ব্যত্যয় আছে।

জিন থেরাপির সংজ্ঞা কী? জিন থেরাপি কি জিন বদলে দেয়?
সাধারণত বংশগত রোগের ক্ষেত্রে, সমস্যাবহুল জিনকে প্রাকৃতিক জিন দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে, রোগের নিরাময়ের পদ্ধতিকে জিন থেরাপি বলে।  চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জিন থেরাপি প্রয়োগের অনেক সুবিধা আছে। যেমন ধরুন কেমোথেরাপি ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কেমোথেরাপি এমন এক পদ্ধতি যা নির্দিষ্ট কোষ ছাড়াও অন্য পারিপার্শ্বিক কোষকে বিনষ্ট করে। জিন থেরাপির মাধ্যমে অনেক  নিখুঁত এবং কম যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতিতে চিকিৎসা সম্ভব। তাই আগামী সময়ে আশা করা হচ্ছে জিন থেরাপি বিপ্লব সংঘটিত করবে।

আগামীদিনে কি সব চিকিৎসাই জিন থেরাপির মাধ্যমেই হবে? ওষুধ ও অপারেশনের কি আর প্রয়োজন হবে না?
ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধ বা অপারেশনের প্রয়োজন থাকলেও জিন থেরাপি চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছে।

জিন থেরাপির পদ্ধতি সম্পর্কে যদি জানান?
জিন থেরাপির পদ্ধতির বর্ণন এই ক্ষুদ্র পরিসরে অসম্ভব। তবে পদ্ধতিটি ত্রিবিধ। প্রথমত, জিন সাইলেন্সিং যা স্মল ইন্টারফেরিং আরএনএ, মাইক্রোআরএনএ বা শর্ট হেয়ার পিন আরএনএ-এর সাহায্যে করা হয়। দ্বিতীয়ত, জিন রিপ্লেসমেন্ট যা মূলত প্লাসমিড বা ভাইরাল ভেক্টর-এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। আর তৃতীয়ত নিউক্লিজ-এর সাহায্যে। এই তৃতীয় পদ্ধতিটির অবতারণার মাধ্যমে জেনিফার ডুডনা এবং এমানুয়েল কারপেন্টিয়ার নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই পদ্ধতি সমূহের প্রয়োগ  দেহকোষ বা রিপ্রোডাকটিভ সেল উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে। যখন রিপ্রোডাকটিভ সেলকে পরিবর্তিত করা হয়, তখন পদ্ধতিটিকে জার্ম লাইন বা হেরিটেবল জিন থেরাপি বলে। দেহকোষে এর ব্যবহারকে সোমাটিক-সেল বা ননইনহেরিটেবল জিন থেরাপি বলা হয়। 

কোন কোন অসুখে জিন থেরাপি করা যেতে পারে? 
মেটাবলিক ডিজঅর্ডার, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, জেনেটিক ডিজঅর্ডার (যেমন ধরুন সিস্টিক ফাইব্রোসিস এবং থ্যালাসিমিয়া), কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার (পার্কিনসনস ডিজিজ বা অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ), সর্বোপরি ইমিউন ডিজঅর্ডার (যেমন এইডস)-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে জিন থেরাপি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে জিন থেরাপি সূচনা লগ্নে আছে বলা চলে। আগামী সময়ে এর ব্যাপ্তি হবে তা বলাই শ্রেয়। তবে কিছু শর্ত আছে। জিন থেরাপি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। জিন থেরাপির জন্য প্রাথমিক কাউন্সিলিং এবং জিনগত পরীক্ষা আবশ্যিক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বয়স, রোগের তীব্রতা এবং অন্য কোন রোগ আছে কিনা তাও জানা জরুরি। রোগীর শরীর যদি ইমিউনোকমপ্রোমাইজড হয়, তবে ভাইরাস ভেক্টর ব্যবহার করা অনুচিত। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্মতিও আবশ্যক। 

রোগ প্রতিরোধ করা কি সম্ভব হতে পারে? শোনা যায় গর্ভস্থ শিশুরও জিনের বদল ঘটানো সম্ভব?
জিন থেরাপির মাধ্যমে রোগ নিরাময় অবশ্যই সম্ভব। তবে এখন পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি সীমিত। গর্ভস্থ শিশুদের জিনের পরিবর্তনও সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে নৈতিক সমস্যা থাকতে পারে। 

কোন বয়স পর্যন্ত জিন থেরাপি করা যেতে পারে?
তত্ত্বগত ভাবে ভ্রূণ অবস্থা থেকে বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও জিন থেরাপি করা যায়। 

জিন থেরাপির কী কী ঝুঁকি আছে?
ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভাইরাস ভেক্টর এর মাধ্যমে জিন থেরাপি করতে গেলে, তা বিপদ-বহুল হতে পারে। জিন যদি প্লিওট্রপিক হয় তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়া কোমর্বিডিটি থাকলে, তখনও জিন থেরাপি বিপজ্জনক হতে পারে। 

জিন থেরাপি ও আইভিএফ-এর মাধ্যমে শুধুই ছেলে সন্তান উৎপাদন করা হবে— এমন ঘটনা কি ঘটতে পারে?
এখনও পর্যন্ত ব্যবহারিক স্তরে ‘সেক্স সিলেকশন’ অসম্ভব। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং নৈতিকভাবে বিতর্কিত। 

জিন থেরাপি কি শেষ পর্যন্ত হাইব্রিড মানবজাতি তৈরি করতে পারে?
হাইব্রিড মানুষ এখনও কল্পবিজ্ঞানের স্তরে বিদ্যমান। তবে জিন থেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে তা বলাই বাহুল্য। আগামী দিনে রিজেনারেটিভ মেডিসিন বা কম্বিনেশন থেরাপিতে জিন থেরাপি ভীষণ ভাবে কাজে লাগবে। বিজ্ঞানের অন্য শাখার মতোই জিন থেরাপি আশীর্বাদ বা অভিশাপ হিসেবে প্রতিপন্ন হতে পারে। মানুষ কীভাবে তার ব্যবহার করে সেটাই দ্রষ্টব্য।
লিখেছেন সুদীপ্ত রায়চৌধুরী
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা