শরীর ও স্বাস্থ্য

বাঁধাকপি নাকি ফুলকপি পুষ্টিগুণে এগিয়ে কে?

উত্তর দিলেন  আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডাঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য।

ঠান্ডা এখনও তেমন ভাবে পড়েনি। হালকা চাদর জড়াতে হলেও লেপ, কম্বল আলিঙ্গনের সময় এখনও অধরা। তবে বাজারজুড়ে বসে গিয়েছে হরেক সব্জির মেলা। জমিয়ে মরশুমি সব্জির স্বাদ উপভোগ করছেন আমজনতা। রান্নাঘর অধিকার করেছে ফুলকপি, বাঁধাকপিরা। পুষ্টিগুণ ও স্বাদ— সবেতেই এরা অতুলনীয়। তবে অনেক সময় মাথায় প্রশ্ন ঘোরে ফুলকপি নাকি বাঁধাকপি, কে বেশি উপকারী? কে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন? চলুন আজ সেই উত্তর খুঁজে নিই। 

ফুলকপি 
শীতকালীন সব্জির নাম মনে করতে গেলেই শুরুতেই মাথায় আসে ফুলকপির কথা। খিচুড়ি, তরকারি, চপ, ভাজা— যে কোনও রূপে পাতে ফুলকপি পড়লে জমে যায়। তবে কেবল স্বাদ নয়, স্বাস্থ্যের যত্ন নিতেও ফুলকপির জুড়ি মেলা ভার। 

পুষ্টিগুণে ফুলকপি
১. ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তবে এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীরা শাকসব্জি কাঁচা খায়। যেহেতু আমরা ফুলকপি কাঁচা খাই না, তাই এর ভিটামিন সি আমাদের শরীরে তেমন কোনও কাজে লাগে না। আসলে জলে ধুলে বা গরমে রান্না করলে ভিটামিন সি অবশিষ্ট থাকে না। এই কারণে ফুলকপির ভিটামিন সি আমাদের কোনও উপকারে লাগে না। আবার ফুলকপি কাঁচা খাওয়াও উচিত নয়। তাই ভালো করে গরম জলে ধুয়ে খেতে হবে। চিন্তার কোনও কারণ নেই, এছাড়াও আরও অনেক গুণ রয়েছে ফুলকপির। 
 ২. ফুলকপিতে ভিটামিন বি, কে, এ ভরপুর পরিমাণে রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি আরও অনেক শারীরিক সমস্যার নিমেষে সমাধান করে এগুলি। এছাড়াও চোখের জন্য খুব উপকারী ফুলকপি। 
৩. সালফোরাফেন নামক একটি পদার্থ রয়েছে ফুলকপিতে যা হৃদরোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যান্সার, টিউমারের সেলের বিরুদ্ধেও লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে এর। 
৪. সোডিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে ফুলকপিতে। 
৫. ফ্যাট না থাকায় যাঁরা ডায়েট করছেন বা ডায়াবেটিসের রোগী, তাঁরা নিঃসংকোচে ফুলকপি খেতে পারেন। বরং ফুলকপিতে বেশ কিছুটা প্রোটিন রয়েছে। এছাড়াও প্রচুর ডায়টারি ফাইবার আছে। এগুলি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
৬. এই আনাজে অনেক ফাইবার রয়েছে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এটি। 
৭. ফুলকপিতে কোলিন থাকে। এই কারণে ইংরেজিতে এর নাম কলি ফ্লাওয়ার। অ্যালঝাইমার্সের মতো স্নায়ুর অসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে। খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ফুলকপি রাখা হলে নার্ভের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে, স্মৃতিশক্তি বাড়ে, মানসিক অবস্থাও ভালো থাকে। 
৮. যাঁদের থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কম, তাঁরা নিয়মিত ফুলকপি খেলে উপকার পাবেন। 
৯. ফুলকপিতে রয়েছে, ক্যারোটিনয়েড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলির ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে।
১০. ফুলকপির প্রসঙ্গে ব্রকোলির কথাও বলা প্রয়োজন। দেখতে প্রায় একরকম হলেও ফুলকপির তুলনায় ব্রকোলির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। 

বাঁধাকপি
মাছের মাথা দিয়ে বা তরকারিতে— শীতকালে বাঁধা কপির তুলনা নেই। ফুলকপির মতোই বাঁধাকপিও পুষ্টিগুণে ভরপুর। 

স্বাস্থ্যগুণে বাঁধাকপি
১. ফুলকপির প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ক্যালশিয়াম থাকে বাঁধাকপিতে। হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এই আনাজ।
২. যাঁদের শরীরে ভিটামিন কে-এর অভাব রয়েছে, ব্লিডিংয়ের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খেতে পারেন। 
৩. ফুলকপির মতো বাঁধাকপি খোলা অবস্থায় থাকে না। প্রকৃতি ওর জন্য আলাদা একটি খোলসের ব্যবস্থা করে রেখেছে। তার জন্য স্বল্প পরিমাণে থাকলেও বাঁধাকপি থেকে আমরা ভিটামিন সি পাব। কারণ রান্না না করেও স্যালাড হিসেবে বাঁধাকপি খাওয়া যায়। তবে কাটার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বাঁধাকপি খেয়ে নিতে হবে। নইলে ভিটামিন সি পাওয়া যায় না। 
৪. বাঁধাকপিতে খুব সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও আছে। ওজন কমাতে চাইলে, বাঁধাকপি কার্যকরী ভূমিকা নেবে। স্যালাডে বাঁধাকপি থাকলে ক্যালরি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে সব্জিটি। 
৫. হার্টের জন্য ভীষণ উপকারী বাঁধাকপি। নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।  
৬. অন্ত্রে অনেক ভালো ব্যাকটেরিয়াও থাকে, যেগুলি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বাঁধাকপি সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করে। 
৭. যেহেতু এই সব্জিটি প্রাকৃতিক উপায়ে সুরক্ষিত থাকে পাতা দিয়ে, তাই বাইরের কৃত্রিম সার, রাসায়নিক এর ক্ষতি করতে পারে না। নির্ভয়ে খাওয়া যায়। 
৮. হজম করার জন্য খুব উপকারী বাঁধাকপি। 
পরিশেষে বলা যায়, উপরের বৈশিষ্ট্যগুলির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, ফুলকপিতে অনেক খনিজ উপাদান থাকলেও বাঁধাকপিতে সেগুলি তুলনায় কম। আবার ভিটামিন কে, সি, ক্যালশিয়াম— এগুলির উপকার আপনি বাঁধাকপি থেকেই পাবেন। তাই কোনওটিই কারও পরিপূরক নয়। দু’টি সব্জিই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দু’টি মধ্যেই ক্যালোরি বেশি নেই, তাই যাঁরা ডায়েট কনশাস, ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁরা খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। সুস্থ থাকুন, জমিয়ে শীতের সব্জি উপভোগ করুন।
লিখেছেন শান্তনু দত্ত
 
8Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা