বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

অচেনা দু’জন মানুষ, একইরকম দেখতে হয় কেন?

পৃথিবীর ভিন্ন প্রান্তে থাকা একজনের মুখের সঙ্গে অবিকল সাদৃশ্য থাকে অপর একজনের মুখের। কেন এমন হয়? লিখেছেন আধুনিক জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক অনির্বাণ মিত্র।
 
মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিদ্যা বালান, বা ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে জারিন খানের মুখশ্রীর যে আশ্চর্য সাদৃশ্য আছে সবাই জানে। প্রশ্ন হল—কী করে? বস্তুত, যখনই দুই অনাত্মীয়ের মধ্যে মুখশ্রী অনেকাংশে মিলে  যায় (এমনকী বিরল ক্ষেত্রে ‘কার্বন কপি’র মতো ‘প্রতিরূপ’ (ইংরিজিতে লুক-অ্যালাইক বা ডপলগাংগার) দেখা যায় তখনই মনে ধাঁধা লাগে। জানতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির কোন খেয়ালে  এমনটি সম্ভব হল? 
মুখশ্রীর গঠন যে বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এ তো সবাই জানে। অর্থাৎ, আধুনিক মলিকিউলার জেনেটিক্স-এর পরিভাষায়  এ সবই জিন বা ডিএনএ বাহিত। জিন, ডিএনএ— এসব কী? ডিএনএ হল তন্তুর মত একটি লম্বা জৈব অণু। মানবকোষের ‘হেড কোয়ার্টার’ নিউক্লিয়াসের মধ্যে যে ৪৬টি ক্রোমোজোম দেখা যায় সেগুলি এক-একটি ডিএনএ দিয়ে তৈরি। আর এই ক্যাসেট-টেপের মত লম্বা ডিএনএর বিভিন্ন অংশকে বলে ‘জিন’। এক-একটি জিনের মধ্যে ‘লেখা আছে’ এক-একটি প্রোটিন তৈরির ‘কোড’। সব মিলিয়ে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের ডিএনএতে থরে-থরে সাজানো রয়েছে প্রায় কুড়ি হাজার প্রোটিন-তৈরির জিন। তবে শুধু জিনের সমষ্টি নয়;  এছাড়াও সব ক্রোমোজোমের ডিএনএ-এর বেশ কিছুটা এই জিনগুলিকে চালিত করে। এইসব পরিচালক ডিএনএ-এর কারও নাম প্রোমোটার, কেউ বা এনহ্যান্সার। ভ্রূণের গঠন থেকে শুরু করে শিশুর বড় হয়ে ওঠা এবং প্রাপ্ত বয়স্কের শরীর-চালনার সব কিছুর কেন্দ্রে এই জিন-প্রোটিন-প্রমোটার-এনহ্যান্সারের খেলা। 
অবশ্য, মুখশ্রী গঠনে একাধিক জিন এবং কয়েক লক্ষ মিউটেশনের কারসাজি আছে। ফলে, এই রহস্য সমাধানে শুধু জেনেটিক্স নয়, রাশিবিজ্ঞান এবং কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার প্রয়োজন। তবে, এই রহস্যের সমাধানও মলিকিউলার বায়োলজিস্টরা বেশ কিছুটা করে ফেলেছেন।
যেমন, ফ্র্যাঙ্ক ব্রুনেল নামের এক কানাডিয় ফটোগ্রাফার ১৯৯৯ থেকে অনাত্মীয় লুক-অ্যালাইকদের ফটো জমিয়ে চলেছেন। গত বছর স্পেনের বিজ্ঞানীরা এইসব ফটো থেকে বেছে নিলেন ৩২টি অনাত্মীয় ‘মানিকজোড়’কে।  প্রথমে একাধিক ফেস রিকগনিশন সফটওয়্যার দিয়ে প্রত্যেকের ‘পাসপোর্ট ফটো’র’ ওপর ২৭ ধরনের মাপজোক করা হল। দেখা গেল ২৫টি ক্ষেত্রে মানিকজোড়ের মুখশ্রীর মধ্যে মিল এত বেশি যে সফটওয়্যারও ধোঁকা খেয়ে এঁদের যমজ ভাইবোন হিসেবে ‘চিনল’। তারপর, এঁদের প্রত্যেকের থেকে ডিএনএ নিয়ে মিউটেশন খোঁজা হল। 
ফলাফলে চমৎকৃত বিজ্ঞানীরা। ১৬টি ক্ষেত্রে দু’জন লুক-অ্যালাইকের মধ্যে মিউটেশন তালিকায় আশ্চর্য মিল। আর মিউটেশনগুলি হয়েছে এমন ১৫৮টি জিন, প্রমোটার, এনহ্যান্সারে যেগুলি ভ্রূণ অবস্থায়  খুলি সহ মুখশ্রীর মাংসপেশি, কার্টিলেজ, ত্বক কোষকলা গঠনকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ, অনাত্মীয় হলেও বিবর্তনের বিচিত্র পথ বেয়ে দু’জনের ডিএনএতে জমা পড়েছে একই মিউটেশন-রাশি এবং ১৫৮টি জিন-প্রমোটার-এনহ্যান্সারের কর্মদক্ষতায় এসেছে একইরকম তফাৎ। এই জন্যেই তাঁদের মুখশ্রী প্রায়-অভিন্ন। এমনকী তাদের, জীবনযাত্রা, অভ্যেসেও আশ্চর্য মিল! এসব ব্যাপারেও এই অনাত্মীয়-প্রতিরূপদের মধ্যে বেশ ভালো মিল আছে। সম্ভবত, এই জিনগুলি শুধু মুখশ্রী নয়, আরও বেশ কিছু শারীরিক-মানসিক বৈশিষ্ট্যকে  নিয়ন্ত্রণ করে। 
এ রহস্য ভেদ এখনও চলছে। আফ্রিকান, দক্ষিণ আমেরিকান জনগণের মুখশ্রী নিয়ে গবেষণায় আবিষ্কৃত হচ্ছে আরও সব জিনের খেলা। ভারতীয় উপমহাদেশ— যেখানে আর্য, অনার্য , দ্রাবিড়, চীন, শক, হুন পাঠান মোগলের—  অতুলনীয় সমাহার ঘটেছে সেখানেও এমন গবেষণা হবে আশা করা যায়।

31st     August,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ