শরীর ও স্বাস্থ্য

কোন ধাতুর পাত্রে
খেলে ফিরবে স্বাস্থ্য?

গৃহস্থবাড়িতে নানা ধরনের পাত্রের ব্যবহার দেখা যায়। এর মধ্যে কোন পাত্রে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে বিপদ, কোন পাত্র আদতে উপকারী? পরামর্শে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও উপাধ্যক্ষ ডাঃ অঞ্জন অধিকারী।
 
১৯৭৯ সালে লীলা মজুমদার তাঁর ‘রান্নার বই’ গ্রন্থে কাঁসার এবং অ্যালুমিনিয়ামের বাসনের পরিবর্তে গৃহস্থলীর কাজে কাচ, সেরামিক, পাথর, স্টেনলেস স্টিল এবং হিন্ডেলিয়ামের বাসন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকী সেসব বাসন ব্যবহারের কার্যকারণও টুকটাক ব্যাখ্যা করেছেন। আসলে খাওয়াদাওয়ার সময় হেঁশেলের কোন বাসনকে আপন করতে হবে তা নিয়ে ধন্দ নতুন নয়। ইদানীং আবার বাজারে নকশাদার সেরামিক ও কাঠের বাসনপত্র পাওয়া যায়। কোনটা ছেড়ে কোনটা ব্যবহার করবেন, কোন বাসনে খাবার খেলে স্বাস্থ্যের উপকার হবে সে নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।

প্রচলিত বাসন
মানবসভ্যতার ইতিহাস পরিক্রমা করলে দেখা যায়, এক এক যুগে মানুষ এক একটি ধাতুর ব্যবহার শিখেছে ও সেই ধাতু দিয়ে তৈরি পাত্রকে ব্যবহার করেছে গোষ্ঠীর প্রয়োজনে। লোহার ব্যবহার শিখে লোহার পাত্র, সোনা আবিষ্কারের পর স্বর্ণপাত্র ইত্যাদি। বর্তমানে আমাদের চারপাশে নানা ধাতুর বাসনপত্র দেখা যায়। খুব অভিজাত পরিবারে সোনা বা রুপোর বাসন থাকলেও মধ্যবিত্ত ঘরে কাঁসা, পিতল, তামা, কাচ, ও স্টেনলেস স্টিলের বাসন বেশি দেখা যায়। একটু নিম্নবিত্ত পরিবারে অ্যালুমিনিয়ামের বাসনও ব্যবহার করা হয়।

কোন বাসন স্বাস্থ্যকর
প্লাস্টিক ও থার্মোকল: ইদানীং নানা বাড়িতে একটু মোটা নকশাদার প্লাস্টিকের বাটিতে খাবার রাখা বা প্লাস্টিকের বোতলে জল রাখার চল হয়েছে। নিমন্ত্রণ বাড়িতে অনেকে থার্মোকলে খেতে দেন। এই অভ্যেস অত্যন্ত ক্ষতিকর। দু’রকমের প্লাস্টিকের বাসন হয়। ১) পলিকার্বনেট ২) পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) এদের মধ্যে দু’টি অত্যন্ত ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। তাদের নাম বিসফেনল-এ (বিপিএ) এবং থ্যালেট। দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের পাত্রে খাবার রাখলে শিশুদের হরমোনের সমস্যা হয়। এছাড়া প্লাস্টিক ও থার্মোকল বায়োডিগ্রেডেবল নয়। তাই পরিবেশ থেকে একে দূর করা অসম্ভব। এই প্লাস্টিকের বাসনপত্রে খাওয়ার অভ্যেস তাই নানাবিধ অসুখ ডেকে আনে।
ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা, ওবেসিটি, সুগারের মতো সমস্যা এই থার্মোকল, পলিকার্বনেট ও পিভিসি-তে রাখা খাদ্য থেকে হতে পারে। অনেক অভিভাবক শিশুদের টিফিন দেন প্লাস্টিক বা ফাইবারের কৌটায়। সেক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এই পাত্র থেকে শিশুর হরমোনের অসুখ হতে পারে। 
সোনা-রুপোর বাসন: শিশু জন্মালে অনেক পরিবারে সোনার চামচ, রুপোর চামচ, ঝিনুক এসব ব্যবহার করা হয়। এমনিতে বর্তমান সময়ে সোনার যা দাম মধ্যবিত্ত বা বনেদি অভিজাত পরিবারেও সোনার পাত্রে খাওয়ার কথা কেউই খুব একটা ভাবেন না। বরং রুপোর পাত্রের চল এখনও রয়েছে। খুব গরম খাবারও রুপোর বাসনে রাখা যায়। অনেকে মনে করেন এই বাসনে জীবাণু সংক্রমণ হয় না। তবে এই ধারণা সবটুকু ঠিক নয়। ডিম বা সালফার জাতীয় খাদ্য এই ধরনের পাত্রে রাখলে তাতে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। তাই রুপোর বাসনও যে সব ধরনের খাদ্যের জন্য নিরাপদ এমন নয়। 
লোহা ও তামার পাত্র: এই দুই পাত্রে খুব গরম খাবার সহজে রাখা যায়। তাপের সুপরিবাহী হওয়ায় খাবার রাখার ক্ষেত্রে এই ধরনের পাত্র অনেকে ব্যবহার করেন। লোহার বাসনে রান্না করাও স্বাস্থ্যকর। তাপের সুপরিবহণ এতে হয়। তবে এসব পাত্রে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে রাসায়নিক বিক্রিয়ার একটা ভয় থাকে। যেমন মাছের ঝোল বা মাংসের ঝোল যেহেতু নিজেই একটি রাসায়নিক মিশ্রণ যা প্রোটিনের সঙ্গে তেল মশলার মিশ্রণে তৈরি। তাই এর সঙ্গে তামার বা লোহার পাত্রের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। সেই কারণে তামার বা লোহার পাত্রে খাবার খাওয়া খুব একটা উপকারী নয়। তবে তামার পাত্রে জল রাখলে তার কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না। বরং জলকে দীর্ঘ সময় ঠান্ডা ও দূষণমুক্ত রাখার ক্ষমতা তামার আছে। তাই তামার পাত্রে জল রাখলে তা শরীরের জন্য উপকারী। 
কাঁসার বাসন: অনেক বাড়িতেই কাঁসার থালায় খাওয়ার চল আছে। বিভিন্ন দামী রেস্তরাঁ ও হোটেলে কাঁসার বাসনে খাবার দেওয়া হয়। কাঁসার বাসনের নানা উপকারী দিক থাকলেও এই বাসনেও খাবারের নানা রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। কাঁসা পিতল এগুলো সংকর ধাতু হলেও এরা বিক্রিয়াপ্রবণ তাই খাবার খাওয়ার জন্য এটিও খুব উত্তম বিকল্প নয়।

তাহলে উপায়?
খাবার খাওয়ার সেরা বাসন স্টেনলেস স্টিল অথবা কাচ। গৃহস্থ বাড়িতে কাচের বাসন রক্ষণাবেক্ষণ করার নানা সমস্যা থাকে। তাই অতিথি এলে একমাত্র এই বাসন ব্যবহৃত হয়। নতুবা খাবার অন্যতম সেরা বাসন স্টেনলেস স্টিল। স্টিল সংকর ধাতু তবে এর সহনক্ষমতা অন্য অনেক সংকর ধাতুর চেয়ে বেশি। এমনকী এই ধাতু বিক্রিয়াশীলও নয়। ধোয়ামাজারও সহজ। তাই খাবার খাওয়ার জন্য স্টেনলেস স্টিলকে বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। পোড়ামাটির পাত্রও খাবার রান্না করা ও খাওয়ার জন্য উত্তম। তবে এক্ষেত্রেও বাসন ব্যবহার ও রক্ষায় সতর্ক থাকতে হবে।  আজকাল কাঠ পাথর ইত্যাদি নানা উপকরণে পাত্র মেলে। পাথর ভারী। তাই রোজকার খাওয়াদাওয়া এতে সারা সমস্যার। তবে পাথর একেবারেই রাসায়নিকমুক্ত স্বাস্থ্যকর। তবে এই ধরনের বাসন ব্যবহারের আগে কয়েকদিন তেল হলুদ মাখিয়ে রাখতে হয়। আজকের ব্যস্ত জীবনে যা মুশকিলের। তাই আদর্শ বাসন বলতে স্টেনলেস স্টিল-ই বোঝায়।
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়
14Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা