বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

চিকিৎসকের প্রতি অগাধ
বিশ্বাসে কি অসুখ সারে?

চিকিৎসকের প্রতি বিশ্বাসেই কি অর্ধেক রোগ সারে? নাকি শুধুমাত্র সঠিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাতেই মেলে আরোগ্য। এইবারের স্বাস্থ্যকর বিতর্ক এ নিয়েই। আলোচনায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ রঞ্জন ভট্টাচার্য।

একটি কল্পিত কথোপকথন
ডাক্তারবাবুকে দেখলেই অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যাবে। বুঝলেন চক্রবর্তীবাবু’। ‘ডাক্তার তো নয় স্বয়ং ভগবান। মাটির ভাঁড়ে গরম চায়ে ফুঁ দিতে দিতে বললেন লোকনাথ মণ্ডল’। প্রতিবেশী রমেশ চক্রবর্তী হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন। দোসর বদহজম। হাফ ডজন ডাক্তারের কাছে ঘুরেছেন গত দু’বছরে। নিটফল শূন্য। বিমর্ষ মুখে লিকার চায়ে চুমুক দিচ্ছেন পাড়ার মোড়ে। শীতের সকাল। এক্সপার্ট ওপিনিয়নে গমগম করছে দমদমের বকুলতলা। কাকদ্বীপের কালু নস্কর বসেছিলেন শ্যামবাজারে এক চিকিৎসকের চেম্বারে। কথায় কথায় পাশে বসা রোগীকে বললেন, ‘ঠিক জায়গায় এসেছেন। আমি ব্রেন স্ট্রোকে মরতে বসেছিলান। যমরাজের মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন ডাক্তার সেন। এমন ডাক্তার হয় না। কী ব্যবহার! কথা বললেই অর্ধেক রোগ সেরে যায়’। 

এবার দেখা যাক এমন কি সত্যিই হয়? 

রোগীর সঙ্গে র‌্যাপো
রোগী যখন প্রথমবার ডাক্তারের কাছে আসেন, প্রথম বাক্যালাপ শুরু হয়, তখন একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির চেষ্টা হয়। অর্থাৎ রোগী ও চিকিৎসকের সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি হয়। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলা হয় র‌্যাপো। এক্ষেত্রে দুটো টার্ম ব্যবহার করা হয় ‘ট্রান্সফারেন্স রিঅ্যাকশন’ ও ‘কাউন্টার ট্যান্সফারেন্স রিঅ্যাকশান’। ট্রান্সফারেন্স রিঅ্যাকশনের অর্থ হল, ডাক্তারের মুখোমুখি হয়ে তাঁর সম্পর্কে রোগীর একটি ধারণা তৈরি হওয়া। কাউন্টার রিঅ্যাকশনের অর্থ হল, রোগীর কথা শুনে তাঁর প্রতি ডাক্তারেরও একটা ধারণা তৈরি হওয়া। এখানেই এক জন চিকিৎসককে সাবধান থাকতে হয়। রোগীর প্রতি দুর্বল হলেই বিপদ। রোগীর প্রতি সহমর্মিতা দেখানো যায়। কিন্তু সহানুভূতি দেখালেই তা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে। তাই চিকিৎসককে সাবধান থাকতে হয় তিনি যেন রোগীর প্রতি দুর্বল হয়ে না পড়েন। বরং তাঁকে বুঝতে হবে, রোগী ঠিক কী চাইছেন চিকিৎসকের কাছে। অর্থাৎ রোগীর প্রত্যাশা কী। সেই মতো বিজ্ঞানের গণ্ডীর মধ্যে থেকে চিকিৎসা করলে তা অনেক বেশি কার্যকর হয়। ডাক্তার-রোগীর অঘোষিত বোঝাপড়া চিকিৎসায় সাফল্যের পথ দেখায়।  
 
প্লাসিবো রেসপন্স
বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু। চিকিৎসা পরিভাষায় একেই বলে ‘প্লাসিবো রেসপন্স’। অর্থাৎ চিকিৎসা পদ্ধতি বা ওষুধে রোগীর বিশ্বাস তৈরি হওয়া। বিদেশে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্লাসিবো রেসপন্স-এ আরোগ্যের হার যথেষ্ট ভালো। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া গিয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চিকিৎসক রোগীকে যত বেশি সময় দেন, সেখানে ট্রান্সফারেন্স রেসপন্স ও প্লাসিবো রেসপন্স ভালোভাবে কার্যকরী হয়। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক— অনেকসময়ই আমরা দেখি, কম সময়েই রোগীকে দেখে পরবর্তী রোগীকে ডাকা হয়। মানে আগের রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারণ, চিকিৎসক হয়তো সহজেই রোগ ধরতে পেরেছেন। সেইমতো ওষুধও দিয়েছেন। বাড়তি সময় দেওয়ার দরকার পড়েনি। কিন্তু, এতে অনেকসময় হিতে বিপরীতও হয়। যেহেতু রোগীকে বেশি সময় দেওয়া হয়নি, দেখা গেল ডাক্তারবাবুর যত ভালোই রোগ ধরুন না কেন, চিকিৎসা ততটা কার্যকর হল না। এখানেও কাজ করে সেই প্লাসিবো রেসপন্স!  উল্টোদিকে, একই রোগে চিকিৎসক যখন রোগীকে বেশি সময় দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে আরোগ্যের হার বেশি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে রোগী সঙ্গে চিকিৎসকের আত্মিক যোগ তৈরি হওয়ায় সুফল পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া আমি ভালো আছি বা ভালো হচ্ছি, এই ভাবনাও রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট
রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। তাহলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল। দিনে ৩০টা রোগী দেখলে ৭-৮ জনকে প্রয়োজন অনুযায়ী একটু বেশি সময় দিতে হয়। বাকিদের কিছুটা কম সময় দিলেও হল। এর কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। অভিজ্ঞতার ফলে চিকিৎসক সেটি বুঝতে পারেন। রোগীর মানসিকতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারণ রোগীর অনেক কিছুই বলার থাকে। 

সঠিক চিকিৎসক নির্ণয়
রোগী সঠিক সময়ে সঠিক ডাক্তারের কাছে গেলে চিকিৎসায় সাফল্যের হার বাড়ে। সেই সঙ্গে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ। তাই সঠিক ডাক্তার নির্বাচন করার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। 
মোদ্দা কথা হল, শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানই নয়, চিকিৎসক মানুষটি সম্পর্কে ধারণা বা বিশ্বাসও রোগীকে আরোগ্যের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। 
লিখেছেন মৃদুলকান্তি ঘোষ

12th     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ