বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি

স্বরূপ কুলভী: মৌমাছি, মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি,  দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’ ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের এই কবিতাটি পড়েছ।  সত্যি সত্যি মৌমাছিরা খুবই ব্যস্তসমস্ত আর কর্মঠ পতঙ্গ।  গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে মানুষের থেকেও অনেক আগে থেকে টিকে রয়েছে ওরা। আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ধরনের কীটপতঙ্গ। মৌমাছি ও প্রজাপতির মতো কীটপতঙ্গ গাছে গাছে পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য করে। সেইজন্যই ফুল থেকে ফল হয়। নতুন গাছের জন্ম হয়। মৌমাছির মতো কীটপতঙ্গরা না থাকলে কিন্তু এই প্রক্রিয়া চলত না। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ত প্রাণীজগৎ। তাই মৌমাছির গুরুত্ব পরিবেশে অপরিসীম। সেজন্য প্রতি বছর ২০ মে বিশ্ব মৌমাছি দিবস পালন করা হয়। তাহলে এসো, মৌমাছি সম্পর্কে বেশ কয়েকটা মজাদার তথ্য জেনে নিই। 
মৌমাছিরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। এজন্য মৌচাক বেঁধে থাকে তারা। প্রতিটি চাকে থাকে তিন ধরনের মৌমাছি। রানি মৌমাছি, পুরুষ মৌমাছি আর কর্মী মৌমাছি। আর পুরো দলটাই কাজ করে রানি মৌমাছিকে ঘিরে। ওই মৌমাছিই দলের নেত্রী। আকারেও সবার চেয়ে বড়। শ্রমিক মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। চাক তৈরি করে। ওদেরই আমরা বাইরে উড়ে বেড়াতে দেখি। আর পুরুষ মৌমাছির কাজ রানিকে পাহারা দেওয়া। 
আমরা সবাই জানি, মৌচাকে মধু থাকে। সেই চাক থেকেই আমরা মধু সংগ্রহ করি। এই মধু নিজেদের জন্যই সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। তাদের শীতের রসদ। প্রয়োজনের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি মধু ওরা উৎপাদন করে রাখে। 
রানি মৌমাছি মারা গেলে কী হয়? তখন দলের নতুন নেতা হিসেবে শ্রমিক শ্রেণি সদ্য জন্ম নেওয়া আর একটি রানি মৌমাছিকে বেছে নেয়। চাকের কুঠুরিগুলিতে রানি মৌমাছি ডিম পাড়ে। সেই ডিম ফুটলে শ্রমিকরা তাদের শরীর থেকে উৎপন্ন একপ্রকার ঘন তরল পদার্থের সঙ্গে ফুলের রেণু মিশিয়ে তাদের খেতে দেয়। একেই বলা হয় রয়্যাল জেলি। এই খাবার খেয়ে দ্রুত বড় হতে থাকে মৌমাছি। নতুন রানি মৌমাছিকেও এই খাবার খাওয়ানো হয়। তারপর সে বড় হলে চাকের রানির জায়গা নেয়। আর একটা কথা বলে রাখি, শ্রমিক মৌমাছিরাও মেয়ে। ডিম ফুটে বের হওয়ার পর তারা প্রতিপালিত হয় চাকের ছোট কুঠুরিগুলিতে। সেখানে খুব বেশি রয়্যাল জেলি ধরে না। অন্যদিকে, রানির কুঠুরি অনেক বড়। তাতে বেশি খাদ্য ধরে। ফলে ছোট থেকেই প্রচুর পরিমাণ রয়্যাল জেলি পায় রানি মৌমাছি। বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়ায় রানি মৌমাছি আকারে অন্যদের থেকে অনেক বড়সড় হয়।  শ্রমিক মৌমাছি গড়ে এক থেকে দেড় মাস বাঁচে। তবে রানি মৌমাছি ৩ থেকে ৫ বছর বাঁচতে পারে।
মৌমাছি ঘণ্টায় গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কিমি বেগে উড়তে পারে। এদের শরীরের দুই পাশে দু’টি করে মোট চারটি ডানা। প্রতি সেকেন্ডে ২৪০ বার ডানা ঝাপটাতে পারে। সারা দিনে চাকের ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। তবে প্রয়োজন হলে শ্রমিক মৌমাছি ১০ কিমি পর্যন্তও পাড়ি দিতে পারে। একটি মৌমাছি এক একবারে ৫০ থেকে ১০০টি ফুলের মধু সংগ্রহ করতে পারে। ফুলের মধ্যে এক ধরনের মিষ্টি তরল পদার্থ থাকে। সেটি হল নেক্টার (মকরন্দ)। মৌমাছিরা ফুল থেকে সেই তরল নিজেরা পান করে দেহের মধু থলিতে ভরে মৌচাকে নিয়ে যায়। চাকে ঢেলে দেওয়ার পর নেক্টারের মিষ্টি বা শর্করা বিক্রিয়া করে। এর মধ্যে থাকা জলকণা বাষ্পে পরিণত হয়। এজন্য চাকের মধু দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
ফুল খোঁজা, তারপর চাকে ফেরা। এসব কাজ মৌমাছি পারে কীভাবে? আসলে ওদের প্রায় ১৭০টি গন্ধ চেনার রিসেপ্টর রয়েছে। এর সাহায্যেই ওরা গন্ধ শুঁকে চাকে ফিরতে পারে। আবার ফুলও চিনতে পারে। 
আর মৌমাছিরা কিন্তু অঙ্কও জানে! ওদের চাক ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলেও তা বোঝা যায়। চাকের ভেতরে মধু রাখার কুঠুরিগুলি খুব ছোট ছোট। কিন্তু সেগুলি ষড়ভুজ হয়। এধরনের জ্যামিতিক আকারে তৈরি কুঠুরিগুলিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মধু রাখা যায়। গোলাকার বা চারকোনা হলে এত বেশি মধু ধরত না।

5th     May,   2024
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ