বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

রূপকথার উত্থান ফুটবলার কান্তের
প্লাস্টিক কুড়ানি থেকে বিশ্বকাপ জয়ী
সৌগত গঙ্গোপাধ্যায় 

১৯৯৮-এর বিশ্বকাপ! ঘরের মাঠে একের পর এক ম্যাচে রূপকথার গল্প লিখে ফরাসিদের বিশ্বজয়ের স্বাদ দিয়েছেন জিনেদিন জিদান। বলাই বাহুল্য, প্রতিটি ম্যাচেই গ্যালারি কানায় কানায় ভর্তি। ফাইনালে স্টেডিয়ামের বাইরে প্রচণ্ড ভিড়। প্লাস্টিক, বোতল ছড়িয়ে রয়েছে যত্রতত্র। বছর সাতেকের ছোট্ট ছেলেটিও প্রাণপণে সেইসব আবর্জনা থলিতে ভরছে। এমন সুযোগ তো বারবার আসবে না। মূল্যবান বর্জ্য পুনর্ব্যবহার সংস্থার মালিককে বিক্রি করলে পারলে কিছু অর্থ সংস্থান হবে। বিধবা মায়ের হাতে তা তুলে দিলে সংসারের অনটন দিন কয়েকের জন্য মিটবে। কিন্তু হঠাত্ই সে থেমে গেল জিদানের মস্ত বড় এক হোর্ডিং দেখে। কানে এল পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির কথা। তিনি তাঁর বন্ধুকে বলছিলেন, ‘দেখেছিস, চেষ্টা থাকলে কি না হয়। আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত জিদান কীভাবে আমাদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠল।’ সেই কথাগুলো ওই সাত বছরের ছেলেটির হৃদয়ে যেন তিরের মতো বিঁধেছিল। সেদিনই সে প্রতিজ্ঞা করে, ‘জিদান পারলে, আমাকেও পারতে হবে।’
এরপর টাইম মেশিনে ২০টা বছর এগিয়ে যাওয়া যাক। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ। সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করল সেদিনের আবর্জনা কুড়নো ছেলেটা। তিনি আর কেউ নন, এনগোলো কান্তে। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডিও। রাশিয়ায় মেগা আসরে মাঝমাঠে পল পোগবার সঙ্গে জুটি বেঁধে ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিশ্বজয়ে অসামান্য ভূমিকা রাখেন তিনি। কান্তে এতই লাজুক আর সরল যে, সবাই একে একে ক্যামেরার সামনে বিশ্বকাপ নিয়ে পোজ দিলেও তিনি এক কোণে দাঁড়িয়ে! আবর্জনা কুড়িয়ে পেট চালানো মানুষটি বিশ্বজয়ের দিনেও নীরব। সতীর্থরা একপ্রকার জোর করেই তাঁর হাতে ট্রফি তুলে দিলেন। কান্তের মুখে অমলিন হাসি। আরে এই মুহূর্তটার জন্যই তো এত পরিশ্রম, সাধনা।
স্বপ্ন তাহলে সত্যি হয়! এনগোলো কান্তে তো করে দেখিয়েছেন। সেদিন কী কেউ ঠাহর করতে পেরেছিল, সেই ময়লা কুড়নো ছেলেটা একদিন বিশ্ব ফুটবলে রাজত্ব করবে! কান্তে অবশ্যই করেছিলেন। তাই তো স্বাভাবিক জীবনযাপনের তাগিদে ১৯৮০ সালে মালি ছেড়ে ফ্রান্সে চলে এসেছিলেন কান্তে পরিবার। ১৯৯১ সালে পৃথিবীর আলো দেখেন এনগোলো। তবে জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই পিতৃহারা হন। চার ভাইবোনের মধ্যে কান্তেই যে সবার বড়। মা সাফাইকর্মীর কাজ করতেন। আর কান্তে আবর্জনা কুড়োনোর। তবে ১৯৯৮ ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয় তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল। পরের বছরই যুব ক্লাব জেএস সুরেশনেসে যোগ দেন তিনি। সেখানে শুরুর দিকে তাঁকে তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হতো। ফুটবলার হতে যে উচ্চতা, পেশির জোর, শিল্প বা ক্ষমতা লাগে, ছেলেটার তেমন কোনও গুণ সেভাবে ছিল না। তবে অদম্য জেদ, ইচ্ছা, আর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাই তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। তাই তো কিছুদিনের মধ্যেই কঠোর পরিশ্রম করে ক্লাবের সেরা প্লেয়ার হয়ে ওঠেন। এরপর ২০১০ সালে ফরাসি ক্লাব বুলোনিয়া সই করায় তাঁকে। এরপর ২০১৩ থেকে দু’বছর তিনি খেলেন কাইনে। তবে ২০১৫ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটিতে সই করার পর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেবছরই ইতিহাসে প্রথমবার লেস্টার সিটিকে প্রিমিয়ার লিগে জেতাতে সাহায্য করেন তিনি। কান্তেকে দলে নিতে ইউরোপের ক্লাবগুলির মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ বেঁধে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি তাঁকে রেকর্ড অর্থের বিনিময়ে সই করায়। স্টামফোর্ড ব্রিজেও ফের একবার ম্যাজিক দেখান কান্তে। আন্তোনিও কন্তের দলকেও প্রিমিয়ার লিগের খেতাব জেতান। ইউরোপে এই ফরাসি মিডিও সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘পৃথিবীর তিনভাগ জল, একভাগ কান্তে।’

30th     April,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ