বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

ধর্মগুরুর বিজ্ঞানচর্চা
মৃণাল শীল

‘পৃথিবী স্থির আর সূর্য তার চারদিকে ঘুরছে’— এটি একটি মধ্যযুগীয় ভ্রান্ত ধারণা। এই ভ্রান্ত তত্ত্ব দূর করে সঠিক ধারণা প্রবর্তনে যে ক’জন বিজ্ঞানী অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে নিকোলাস কোপারনিকাস ছিলেন অন্যতম। কোপারনিকাসের জন্ম ১৪৭৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ডে। শোনা যায় যে, পোল্যান্ডের যে গ্রামে তাঁর জন্ম হয়, সেই গ্রামের নাম ছিল ‘কোপারনিকি’। পোলিশ ভাষায় যার অর্থ কপার অর্থাৎ তাম্র ব্যবসায়ীদের গ্রাম। বস্তুত কোপারনিকাসের বাবাও ছিলেন একজন সফল তামা ব্যবসায়ী। কিন্তু মাত্র দশ বছর বয়সেই পিতৃহারা হন এই মহান বিজ্ঞানী।
এই অবস্থায় তাঁর যাবতীয় দায়িত্ব নেন মামা লুকাস ওয়াজেনরোড। কোপারনিকাস পোল্যান্ডের ক্রাকোতে পড়াশোনা শুরু করেন। এই সময়ই তিনি লাতিন, গ্রিক, জার্মানি সহ প্রায় পাঁচটি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কোপারনিকাসের মামা চাইতেন যে, ভাগ্নে যেন পড়াশোনা করে চার্চের ক্যানন পদে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু গণিত, মহাকাশ বিদ্যার মতো বিষয় কোপারনিকাসকে বেশি আকর্ষণ করত। যদিও শেষ পর্যন্ত মামার ইচ্ছাও পূরণ করেছিলেন তিনি।
সারা বিশ্বে কোপারনিকাস একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিত হলেও অর্থনীতিতেও ছিল তাঁর সমান পারদর্শিতা। ১৫১৭ সাল নাগাদ অর্থনীতি বিষয়ক প্রবন্ধও প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি পোল্যান্ডের মুদ্রাস্ফীতি, প্রচলিত মুদ্রা ব্যবস্থার সরলীকরণ, বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য পূর্ব নির্ধারিত করা সহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন। বস্তুত অর্থনীতির বেশ কিছু বিখ্যাত তত্ত্ব যেমন ‘গ্রেশামের সূত্র’ কিংবা ‘টাকার পরিমাণ তত্ত্ব’— এগুলো সবই এসেছে কোপারনিকাসের ধারণা থেকেই।
কোপারনিকাস ডাক্তারিবিদ্যাতেও ছিলেন পারদর্শী। যদিও এ ব্যাপারে তাঁর কোনও ডিগ্রি ছিল না। আসলে কোপারনিকাসের মামা ওয়াজেনরোড ছিলেন অসুস্থ। ওয়াজেনরোড নিজের চিকিৎসা নিজেই করতেন। তাঁর এই মামাকে সাহায্য করার জন্যই কোপারনিকাস ইতালির পাদোয়াতে প্রায় দুই বছর শারীরবিদ্যা অধ্যয়ন করেন। কিন্তু নিয়মমাফিক ডিগ্রি লাভের আগেই পড়া ছেড়ে দেন। যদিও শোনা যায় যে, তাঁর অসুস্থ মামা কিংবা যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে প্রত্যেকের চিকিৎসাই কোপারনিকাস খুব সুন্দর ভাবে করেছিলেন।
১৫১৪ সাল নাগাদ কোপারনিকাস মহাকাশে গ্রহগুলির গতি সম্পর্কিত তাঁর ধারণাগুলো বইয়ের আকারে লিখে তাঁর কয়েকজন পরিচিতদের মধ্যে বিতরণ করেন। এরপর প্রায় ১৮ বছর পরে ‘পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে’ সেই তত্ত্ব সম্বলিত একটা পাণ্ডুলিপির খসড়া করেন। কিন্তু নিজে সেই বই প্রকাশ করার সাহস পাননি সেই সময়কার ধর্মযাজকদের ভয়ে। শেষে তাঁর মৃত্যুর দুই মাস আগে ১৫৪৩ সাল নাগাদ সেই পাণ্ডুলিপিটি অত্যন্ত সজ্ঞানেই উৎসর্গ করেন পোপ তৃতীয় পলকে। কারণ তিনি জানতেন যে, সেই সময়কার ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধাচরণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সঠিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করার সামর্থ্য তাঁর নেই। কোপারনিকাস তাঁর গোটা জীবনে আইন, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন করলেও কোনও বিষয়েই কিন্তু প্রথাগত কোনও ডিগ্রি লাভ করেননি। শোনা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিগ্রি লাভের ঠিক আগের মুহূর্তে তিনি শিক্ষা ক্ষেত্র ত্যাগ করতেন। কিন্তু কোনও বিষয়েই তাঁর পাণ্ডিত্যের কোনও অভাব ছিল না। ৭০ বছর বয়সে ১৫৪৩ সালের ২৪ মে  এই মহান বিজ্ঞানী প্রয়াত হন।

19th     February,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ