বিশেষ নিবন্ধ

শুধুই এক টুকরো ত্রিবর্ণের আবেগ?
মৃণালকান্তি দাস

তিষশাস্ত্রবিদরা বলেছিলেন, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দিনটা নাকি শুভ নয়!
তাই ১৪ তারিখ রাত এগারোটা বাজার আগেই দিল্লিতে গণপরিষদের সভা বসেছিল। সভার কাজ শেষ হতে হতেই রাত বারোটা। ১৫ তারিখ দিনটা সত্যিই শুভ ছিল না। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছাড়া কারও মুখে সেদিন খুশির ঝলক দেখা যায়নি। সেদিন সাড়ে দশটায় যখন সদ্য স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকা উড়তে শুরু করেছে সংসদ ভবনে, তখনও সকলের মনে মনে অজানা আশঙ্কা— পর দিন বোধ হয় আবার আরম্ভ হবে রক্তবন্যা। তাই ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা হল, গোটা শহরে প্রায় তিনশো পতাকা তোলা হল, কিন্তু উৎসবের রেশ চোখে পড়েনি।
১৪ আগস্ট বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দি গান্ধীজিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, পর দিন কী অনুষ্ঠান হবে। গান্ধীজির সপাট উত্তর: চার দিকে মৃত্যুলীলা, এর মধ্যে অনুষ্ঠান? মহাত্মা গান্ধী ১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা উৎসবে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি কলকাতায় উপবাস ও প্রার্থনা করে দিনটা কাটিয়েছিলেন। ঈশ্বর-আল্লা নিশ্চয়ই তাঁর প্রার্থনা শুনেছিলেন। স্বাধীনতার দিন কলকাতায় অন্তত শান্তি বিরাজ করেছিল। হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গেই সেদিন ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনি দিয়েছিল। পরদিন ‘মির‌্যাকল অর অ্যাক্সিডেন্ট’ শীর্ষক এক সম্পাদকীয়তে গান্ধীজি লিখেছিলেন, ‘পারস্পরিক ঘৃণার গরল আমরা পান করেছি, তাই ভ্রাতৃভাবের এই অমৃত এত মধুর লাগছে। এ মধুরতা যেন অক্ষয় হয়ে থাকে।’ বাংলার মানুষ তাঁকে কথা দিয়েছিল...।
স্বাধীনতা দিবসের নতুন সকালটিতেও কোটি কোটি মানুষ বুঝতে পারলেন না, আনন্দ করতে চাইলে কোন দেশের হয়ে আনন্দ করবে ‘পাঞ্জাব’। বাংলার বিভাজন-রেখা র‌্যাডক্লিফ লাইনটি আঁকতে তখনও আরও দুই দিন বাকি। আর সেই দু’দিনে দেশের মাটি বিষিয়ে উঠল পনেরো লক্ষ মানুষের নিহত-আহত-ধর্ষিত-উৎখাতে। একমাত্র আনন্দে আত্মহারা তখন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। সাফল্যের আবেশে বিহ্বল: ‘পৃথিবীর ইতিহাসের বৃহত্তম প্রশাসনিক কাজটি’ সমাধা করতে পারলেন বুঝি তিনিই। ১৯৪৭-এর দেশভাগ পরিকল্পনা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ৩ জুন যিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে, এটি ছিল ‘স্ট্যাগারিং ব্লো’। বিস্ময়কর আঘাত!
সেদিন জ্যোতিষশাস্ত্রবিদদের কথাই মিলে গিয়েছিল। আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে দিল্লিতে পরের দিনই শুরু হানাহানি। বম্বে আর কলকাতায় দোদুল্যমান অনিশ্চয়তা। তেরঙা-লাঞ্ছিত স্লোগান-আনন্দের ফাঁকে ফাঁকে থমথমে ভয়ের পকেট-অঞ্চল। দিল্লি-বম্বে-কলকাতা তবু হিন্দু-মুসলিম, মুসলিম-শিখ হানাহানি থেকে কিছুটা রক্ষে পেল। নোয়াখালি-লাহোর-অমৃতসর ভেসে গেল রক্তে। হত্যালীলায় অসংখ্য প্রাণ গেল সে দিনও।
১৯৪৭-র ১৫ আগস্ট দিল্লিই ছিল উত্তেজনার প্রাণকেন্দ্র। দিল্লিতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ স্বাধীনতার উৎসবে মেতেছিলেন। তারপর থেকে দুর্ভাগা দেশের উত্তরাধিকার পালন করেছে দিল্লি। এই দিনটিতে আলগা গাম্ভীর্যের আবরণে ঢাকা থেকেছে শুভ-অশুভের ঐতিহাসিক মেলবন্ধন। লালকেল্লার বক্তৃতা, জনসমাগম, ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি, সবই থেকেছে। কিন্তু আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার গর্জন কিংবা উচ্ছ্বাস আকাশ-বাতাস কাঁপায়নি এই দিনটিতে। আমাদের সে কালের নেতারা এই ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করে যেতে পেরেছিলেন। শিখিয়ে গিয়েছেন, ১৫ আগস্ট রক্তাক্ত ছেদনের স্মৃতি। রক্তসম্পর্ক ছেদনের স্মৃতি। এই দিন রাষ্ট্রীয় অহঙ্কার দেখানোর নয়!
নথি বলছে, দেশভাগে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ১.৪ কোটি, প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। সে দিনের স্কুলপড়ুয়া ছেলের দল, কলেজের দুই-বিনুনি মেয়েরা অনেকেই ভেসে গিয়েছেন। ভিটেছাড়া হওয়ার জ্বালা আর স্বাধীন দেশ দেখার শিহরণ বুকে নিয়ে। এখনও জীবিত যাঁরা— আশির কোঠায়, নবতিপর বা একশো-অতিক্রান্ত— বলে যান পুরানো সেই দিনের কথা। সত্যিই, কী দুর্ভাগা এই দেশ! কত দেশ তাদের স্বাধীনতার দিনটি কত আনন্দে কাটায়, কিন্তু যে ভারতীয় প্রজন্ম ১৯৪৭ জেনেছেন বা বুঝেছেন, তাঁদের কাছে ‘১৫ আগস্ট’ উচ্চারণের আনন্দ গলা দিয়ে বেরনোর আগেই বেদনায় রুদ্ধ হয়ে যায়। এ দেশে এমন মানুষও ছিলেন যিনি আজীবন ১৫ আগস্টে ১৯৪৭-এর স্মৃতিতে অরন্ধন-অনশন পালন করেছেন। গান্ধীবাদী না হয়েও গান্ধীর পথেই স্বাধীনতা দিবস কাটিয়েছেন। সেই স্মৃতি যাঁদের কণ্ঠরোধ করে না, হয় তাঁরা ইতিহাস-বোধরহিত সংকীর্ণমনা স্বার্থপর, নয়তো তাঁরা সম্পূর্ণ ভিন-ভারতের মানুষ, যে ভারত ১৫ আগস্টকে জানেনি কিংবা বোঝেনি।
***
ভারতের স্বাধীনতার দিনে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু স্বাধীনতাকে বলেছিলেন, ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ (ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি)। সাধারণ পরিস্থিতিতে এই ‘অভিসার’ বা ‘ট্রিস্ট’ শব্দটির অর্থ বা উৎপত্তির গভীরে প্রবেশ না করলেও চলত। কিন্তু আজ যা পরিস্থিতি, তাতে একবার ফিরে দেখা দরকার, কী অর্থে নেহরু কথাটি বলেছিলেন। ইংরেজি অভিধানে ‘ট্রিস্ট’ শব্দটির মানে গোপন সাক্ষাৎ, সাধারণত দুই প্রেমিকের। দেখে প্রশ্ন জাগে, কোন পরিপ্রেক্ষিতে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন নেহরু? সম্ভবত তা এই অর্থে যে, ভারতের মানুষ এক গোপন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হল যে ভাগ্যের সঙ্গে, তা ক্রমে আত্মপ্রকাশ করবে এক স্বাধীন দেশে। স্বাধীনতার জন্মলগ্নে সাক্ষাৎ মিলেছিল যে নিয়তির, তা ক্রমে প্রকাশিত হবে ভারতের মানুষের যূথবদ্ধ কাজের মধ্যে দিয়ে, যেখানে পরস্পর শ্রদ্ধার দ্বারা তারা আবদ্ধ, আর যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের মর্যাদা সুনিশ্চিত। নেহরু তাঁর ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ ভাষণে কোটি কোটি ভারতবাসীকে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছিলেন, যাঁরা ব্রিটিশ সরকারের হাতে নির্যাতন সয়ে এসেছেন। যাঁরা আদর্শে বিশ্বাস করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, তাঁদের শোকার্ত পরিবারকে নেহরু সান্ত্বনা দিতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পরে আজ আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে? নিয়তির সঙ্গে নিভৃত অভিসারের সেই অঙ্গীকার আজ ভঙ্গ হয়েছে। আজ দেশের শাসক দলের কাছ থেকেই নির্দেশ এসেছে, ভারতের ইতিহাস পুনর্লিখন করতে হবে। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিবৃত্ত। দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার পক্ষে সেটা বিশেষ জরুরি।
অবশ্য সঙ্ঘ পরিবারের তরফ থেকে এই প্রস্তাব নতুন নয়। বাজপেয়ি-আদবানি জমানায় এই প্রকল্প অনেক দূর গড়িয়েছিল। তখনও হিন্দুত্বের আলোয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি বিস্তৃত পুনর্মূল্যায়ন হয়েছিল। স্কুলে থাকতে আমরা শিখেছিলাম যে, জাতির জনক হলেন মহাত্মা গান্ধী, আর তাঁর দুই শিষ্য নেহরু ও প্যাটেল প্রথম ভারত সরকারের নেতা হন, মৌলানা আজাদকে সঙ্গে নিয়েই। আর এখন কিন্তু নতুন করে আমাদের বোঝানো হচ্ছে, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সারির নেতা হলেন বিনায়ক দামোদর সাভারকর এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আর হিন্দুত্বের পরম্পরাগত প্রতিষ্ঠান হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, জনসঙ্ঘ ও ভারতীয় জনতা পার্টি হল আসল ন্যাশনালিজম-এর প্রবক্তা। শুধু তাই-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিটি পদক্ষেপে আজ মনের মধ্যে একটা গহন শঙ্কা জাগে। মনে হয়, আমাদের আসল বিপদ অসাধুতা নয়, এ বিপদ গভীরতর, এ বিপদ স্বাধীনতা হারানোর। এটা সোজাসুজি ঘটছে না। নগ্ন ভাবেও ঘটছে না। ঘটছে ছলে ও কৌশলে। এ খেলায় বিরোধী-বিপক্ষের অসাধুতা প্রতিপন্ন করাটাই প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধীর ‘ইমার্জেন্সি’ ছিল সরাসরি ঘোষিত জরুরি অবস্থা। লুকোছাপা ছিল না। আজকের জরুরি অবস্থা কিন্তু তা নয়, এ হল সংবিধান-বিরুদ্ধ গুপ্ত ইমার্জেন্সি। এর মূলমন্ত্র জোর নয়, এর মন্ত্র প্রতারণা। তার চেয়েও বড় বিপদ হল এই ইমার্জেন্সি শুধু রাষ্ট্রকেন্দ্রিক নয়, সমাজ-রূপান্তরও এর অন্যতম লক্ষ্য। গান্ধী-নেহরু-প‌্যাটেল-আজাদের জাতীয়তাবাদের বদলে আসছে হিন্দুত্ববাদী, সংখ্যাগুরুবাদী, জাতীয়তাবাদ। গড়ে তোলার চেষ্টা এক নতুন রাষ্ট্রের। যার সামাজিক ভিত্তি হবে এক ত্রিকোণ শক্তি— হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থান। আসলে ভারতের খণ্ড-স্বাধীনতার বীজ থেকে যে-ফল ফলার কথা, সেই ফলই ফলছে। কারও কারও রুচিতে সে-ফল মাকালেরই মতো সুন্দর!
***
মহাত্মা গান্ধীর ‘স্বরাজ’ ভাবনাই হোক, অথবা রবীন্দ্রনাথের ‘স্বদেশ’ চেতনা, দেশবন্ধুর ত্যাগের আহ্বানই হোক, অথবা নেতাজি সুভাষচন্দ্রের আজাদ হিন্দ-এর স্বপ্ন, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কিংবা খান আবদুল গফফর খানের আজীবন স্বাধীনতার সাধনা, বারবারই ধ্বনিত হয়েছে দেশের নামে মানুষের জয়গান, বিভিন্ন মত ও পথের স্বীকৃতি। অথচ সেই ভারতে স্বাধীনতা কাকে বলে, সেই যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনায় বসার অবকাশ ক্রমশই সীমিত হয়ে আসছে। প্রতিবাদ বা প্রতিস্পর্ধা তো অনেক পরের কথা, রাষ্ট্রশক্তির অন্যায় নিয়ে প্রশ্ন তুললেও নাগরিককে রাজরোষে পড়তে হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির ভারতে স্বাধীনতার অর্থ কি তবে অনুগত এবং ভক্ত প্রজার স্বাধীনতা? প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় যখন ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা সগর্বে আকাশের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, আমরা শিহরিত হয়ে উঠি। আর শিহরনের প্রচ্ছন্নতায় আশঙ্কিত হয়ে ভাবি, এই স্বাধীনতা পালনের জন্যই কি নেহরু মধ্যরাতে নিয়তির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথা বলেছিলেন? ভাবি, স্বাধীনতার প্রসারিত অঙ্গন শুধু কি আড়ম্বরের শিহরণের অপেক্ষাতেই থাকে? না কি তার আর্তি ‘স্বাধীন’ নাগরিকের জন্য? আজ ভারতে এই আর্তি ভয়ানক হয়ে উঠেছে, স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের সামনে এই সব প্রশ্ন নীরব ভর্ৎসনায় যেন বধির করে দেওয়ার উপক্রম করছে। প্রশ্ন ওঠে, ‘বহু’কে মেরে ‘এক’ করার অপচেষ্টায় শেষকালে বৈচিত্র্য কি টিকে থাকে, একতাকেও কি সুরক্ষিত রাখা যায়? উত্তর মেলে না মোদির। বদলে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় বলেন, ‘হম তোড় রহে হৈঁ জঞ্জিরেঁ, হম বদল রহে হৈঁ তসবিরেঁ’। ‘আমরা সব শিকল ভেঙে ফেলছি, সব ছবি বদলে দিচ্ছি।’ মোদি জমানায় সত্যিই ভারতের ছবি বদলে যাচ্ছে, শেকল ভেঙে দানব বেরিয়ে এসেছে।
এই ভয়ঙ্কর সময়ে অসহায়তা, মলিন মুখখানি নিয়ে এক অজানা ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষায় আরও একজন: ‘স্বাধীনতা’ নিজেই। যাঁর এক টুকরো ত্রিবর্ণের আবেগের সঙ্গে মিশে রয়েছে শুধুই যন্ত্রণা...।
29d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

বহু প্রচেষ্টার পর আটকে থাকা কাজের জটিলতা মুক্তি। কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি। আয় বাড়বে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৭.৭৯ টাকা১১১.৩৩ টাকা
ইউরো৯০.৯৫ টাকা৯৪.১৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা