সম্পাদকীয়

‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’

একটা করে সকাল হচ্ছে, আর লজ্জার মেঘে ঢাকা পড়ছে ভারতের আকাশ! কিন্তু লজ্জা নেই একমাত্র দেশের শাসকের! টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের ১৪২ কোটি মানুষের সামনে ৭ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতির গাজর ঝুলিয়ে রেখেছেন। ২০৪৭ সালের মধ্যে এ দেশ নাকি ‘উন্নত’ দেশের তকমা পাবে বলে খোয়াব দেখাচ্ছেন। আবার ৫৬ ইঞ্চির ছাতি দেখিয়ে দাবি করছেন, তাঁর গত দশ বছরের শাসনে দেশের ২৫ কোটি মানুষের জীবন থেকে দারিদ্র্য শব্দটা মুছে গিয়েছে! অথচ ঘটনা হল, আজও দারিদ্র্য ও ক্ষুধার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি দেশ। প্রদীপের নীচে অন্ধকারে জীবন কাটাচ্ছেন কোটি কোটি মানুষ। মোদিবাহিনীর ‘কীর্তিতে’ ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বেড়ে চলেছে। ক্ষুধাসূচকে পড়শি দেশগুলো ভারতকে টপকে যাচ্ছে। এসব কারণে লজ্জিত হওয়া তো দূর অস্ত, উল্টে অসত্য, অর্ধসত্য তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে প্রতিনিয়ত দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। তবু শাক দিয়ে মাছ ঢাকা দেওয়া যাচ্ছে না। অস্থি-মজ্জা ভেদ করে শরীরের রক্ত যেন বেরিয়ে পড়ছে। 
যে কাজটা করার কথা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের, সেই কাজটাই করে দেখিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ, বিশ্বব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের এমনই এক সমীক্ষায় ভারতের সঙ্গে গোটা বিশ্বের ভয়াবহ দারিদ্র্যের ছবিটা উঠে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই ২০২৪-এ বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে শুধু ভারতেই রয়েছেন ২৪.৪০ কোটি মানুষ। বিশ্বের যে পাঁচটি দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দরিদ্র মানুষ বাস করেন সেই তালিকায় ভারত এক নম্বরে। বাকি চারটি দেশ হল পাকিস্তান (৯.৩০ কোটি), ইথিওপিয়া (৮.৬০ কোটি), নাইজেরিয়া (৭.৪০ কোটি) এবং কম্বো (৬.৬০ কোটি)। মোট দরিদ্র মানুষের অর্ধেকের বেশি শিশু ও কিশোর। ৮৩ শতাংশের বাস গ্রামাঞ্চলে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জীবনযাত্রার মান সহ মোট দশটি মাপকাঠিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এবছর ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষকে নিয়ে সমীক্ষা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। এই রিপোর্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, দারিদ্র্যের সংখ্যার বিচারে যে পাঁচটি দেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ তার মধ্যে চারটি কোনও বিচারেই ভারতের ধারেকাছে নেই। অথচ দারিদ্র্য দূরীকরণে ভারতের অবস্থা বাকি চারটি দেশের সঙ্গে একই বন্ধনীতে উচ্চারিত হচ্ছে! শুধু দারিদ্র্য নিয়ে উদ্বেগ নয়, মোদি সরকারের ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া’র নীতিতে দেশে যে ধনী-দরিদ্রের অসাম্য বেড়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছে খোদ নীতি আয়োগ। দেখা যাচ্ছে, সুস্থায়ী উন্নয়নের বিচার করতে যে মাপকাঠি তৈরি করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ তাতে ভারতের স্কোর হয়েছে ১০০-তে মাত্র ৬৫। আর্থিক বৈষম্য নিয়ে অক্সক্যামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এ দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিকানা ছিল এক শতাংশের হাতে। পাশাপাশি দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ। অসাম্যের এই ছবিটা ভারতে ব্রিটিশ জমানাকেও হার মানিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। 
লজ্জা শুধু দারিদ্র্যের বিচারে নয়, ক্ষুধাসূচকেও মুখ দেখানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত আইরিশ ও জার্মানির দুই সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশ, চলতি বছরে ক্ষুধাসূচকে বিশ্বের ১২৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হয়েছে ১০৫! গত বছরের চেয়ে সামান্য উন্নতি (ছিল ১১১তম স্থান) করেছে আমাদের দেশ। এই সূচকে পাকিস্তান ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের স্থান হয়েছে যথাক্রমে ১০৯ এবং ১১৬ নম্বরে। তবে ভারতের লজ্জা বাড়িয়েছে পড়শি বাংলাদেশ (৮৪), নেপাল (৬৮) এবং শ্রীলঙ্কা (৫৬)। অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের উচ্চতা, উচ্চতার অনুপাতে ওজন এবং মৃত্যুহার—ক্ষুধাসূচক নির্ধারণের মাপকাঠি হল এই চারটি। এই চারটি মাপকাঠিতে ভারতের স্কোর হয়েছে ১০০-তে ২৭.৩। ভারতে অপুষ্টির শিকার ১৩.৭ শতাংশ, পাঁচ বছরের আগে মৃত্যুর সংখ্যা ২.৯ শতাংশ, বয়সের তুলনায় বৃদ্ধি কম ৩৫.৫ শতাংশের এবং ২৮.৭ শতাংশের ওজন কম। ঘটনা হল, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এসব দেখতে ও শুনতে পান না। তাঁর শাসনে এমন ‘দুর্ভাগা’ বেড়েই চলেছে। মনে করাচ্ছে কবির সেই লেখা—হে মোর দুর্ভাগা...। 
2d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

শরিকি সম্পত্তি মামলায় ফল অনুকূল হতে পারে। উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান গবেষণায় উন্নতির যোগ। অর্থাগম হবে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৭.৮৭ টাকা১১১.৬৫ টাকা
ইউরো৮৯.৬৮ টাকা৯৩.০৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা