উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
একজন শেফ হয়ে নিজের কেরিয়ার গড়তে চাইলে তা খুবই প্রশংসাযোগ্য। কারণ শেফ একটি সৃজনশীল এবং রোমাঞ্চকর পেশা। এই পেশায় অবিরাম সৃজনশীলতার সম্ভাবনা আছে। এটি রপ্ত করতে গেলে আগে এর মৌলিক দক্ষতা শিখে নিতে হবে।
এই পেশার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই গড়তে পারবেন আপনার উজ্জ্বল কেরিয়ার। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে শেফ পেশায় নিজের কেরিয়ার গড়া খুব সহজ। একজন শেফ, তারকা হোটেল ছাড়াও চাকরি পেতে পারেন বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানির কুক বিভাগে, ট্যুর এবং ট্রাভেল এজেন্সির কুক বিভাগে। আর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই।
শেফ বা কুক, হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সের একটি অংশ। হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এর স্নাতকে অধ্যয়নের জন্য ছাত্রছাত্রীদের ১০+২ উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন। এরপর ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। এখানে আপনি ইন্ডিয়ান, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, চাইনিজ, ইতালিয়ান ও ইউরোপিয়ান খাবার তৈরির প্রণালী, ডেকোরেশন, হাইজিন এবং স্যানিটেশন সম্বন্ধে জানতে পারবেন। এমনকী ফাস্টফুড ও ডেজার্ট তৈরির কোর্স করতে পারেন। প্রতিটি কোর্সে একজন শেফের আচার-আচরণগত বিভিন্ন দিক, রান্নাঘরের খুঁটিনাটি বিষয় এবং খাবারের গুণগতমান, স্বাস্থ্যবিধি ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিশদ ধারণা দেওয়া হয়।
হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বা হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ে ডিপ্লোমা কোর্স, ব্যাচেলর কোর্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে শেফ হওয়া যায়। তবে ইংরেজি ভাষা ভালো এবং শুদ্ধভাবে জানা থাকলে এ পেশায় সহজেই সাফল্য বয়ে আনা সম্ভব হবে। হোটেল ম্যানেজমেন্টের কয়েকটি ভাগ আছে। তা হল যথাক্রমে:
ফুড অ্যান্ড বেভারেজ: শেফ বা কুক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন’ কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
ফ্রন্ট অফিস: চেক ইন, চেক আউট, বিল সংরক্ষণ, হিসাব সংরক্ষণ, রেকর্ড সংরক্ষণ ও কম্পিউটার সংক্রান্ত বিষয়গুলো শিখবেন এই কোর্সে।
হাউসকিপিং: বেড তৈরি, ক্লিনিং, লন্ড্রি সার্ভিস, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন, ফাস্ট এইড ইত্যাদি এই কোর্সের অন্তর্ভুক্ত।
বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রি প্রোডাকশন: এই কোর্সে শিখবেন কেক, পেস্ট্রি, ব্রেড, কুকিজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট আইটেম প্রস্তুত, ডেকোরেশন, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশনের মতো বিষয়গুলো।
তবে এর মধ্যে রন্ধনবিদ্যার চাহিদা সব থেকে বেশি। শেফ হতে গেলে ভীষণভাবে দরকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিয়মানুবর্তিতা এবং অতি অবশ্যই পেশার প্রতি ভালোবাসা। শেফের কাজ হল একটা কিচেন সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা করা। সঙ্গে তাকে বুঝতে হবে কাস্টমারদের চাহিদা এবং খাওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়া।
এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা। প্রতি মুহূর্তে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তবে শেফদের জীবনে বিশেষ দিন বলে কিছু নেই। অন্যদের জন্য দিনটি যখন বিশেষ তখন তারা ব্যস্ত সময় পার করেন নিজেদের কাজে। নিজেদের জন্য খারাপ লাগলেও কাস্টমারদের মুখে হাসি ধরে রাখাই তখন তাদের কাজ। তারা সুখটা খুঁজে নেন অন্যদের মুখে হাসি ফুটিয়ে। আপনাকে এই পেশায় আসতে হলে বা কেরিয়ার গড়তে হলে সর্বপ্রথম বিশেষ দিনের মায়া ত্যাগ করতে হবে।
শেফদের চাহিদা বর্তমানে তুঙ্গে। কারণ দেশের পাঁচতারা রেস্তরাঁগুলো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোটখাট রেস্তরাঁতেও এখন বাবুর্চির বদলে শেফ নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে শেফ হতে পারলে দেশেও চাকরির জন্য বেশি কষ্ট করতে হয় না। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণ চলাকালীন অবস্থায় ইন্টার্ন করারও সুযোগ থাকে। প্রায় সময়েই দেখা যায়, যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানেই ভালো পদে কাজ পেয়ে যান অনেকে। তাছাড়া ইন্টার্নের সুযোগকে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা হিসেবে ব্যবহার করে দেশে ও বিদেশে নিজের ভালো অবস্থান তৈরি করা যায়। এই পেশায় কাজের মানের প্রশ্নে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আপনি কতদূর শিখলেন, কতটুকু জানেন, আপনার রান্না ও পরিবেশনায় মানুষকে কতটুকু মুগ্ধ করতে পারছেন, এগুলোর ওপরেই নির্ভর করবে এই পেশায় আপনার ভবিষ্যৎ।
লেখক: অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের
সহ অধ্যাপক