পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
কোটি কোটি টাকার সেট, জনপ্রিয় নায়ক, অভিনেতা ঘেরা কাস্টিং, বিশ্বমানের আধুনিক প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স একদিকে। অন্যদিকে সহজ সরল গল্প। চিরকালীন সুখ, হাসি, দুঃখ, আবেগ, বিপজ্জনক বাঁক নেওয়া গ্রামের রাজনীতি। এই সিজন দেখলে বারবার বলতে ইচ্ছে করবে, ৩৪ বছরের দীপক কুমার মিশ্র (পরিচালক), আপনার তুলনা আপনি নিজেই! মনে হবে, আচ্ছা, সিনেমা বা সিরিজ তৈরি করা এত সহজ!
মাফ করবেন জিতেন্দ্র কুমার (অভিষেক ত্রিপাঠি), রঘুবীর যাদব (ব্রিজ ভূষণ দুবে), নীনা গুপ্তা (মঞ্জু দেবী)। আপনারা যথারীতি আশি শতাংশ পাওয়ার মতোই অভিনয় করেছেন। কিন্তু একশোতে ৯৮, ৯৯ পাওয়ার মতো অভিনয় যে করে ফেললেন অখ্যাত কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী। বিকাশ বা চন্দন রায়, জগমোহন বা বিশাল যাদব, জগমোহনের মা (আম্মাজি) বা আভা শর্মা, বোমবাহাদুর বা অমিত কুমার মৈর্য, বিললো কুমার বা মাধব, নিখুঁত শয়তানের ভূমিকায় দুর্গেশ কুমার ভূষণ এবং তাঁর সহযোগী বিনোদ বা অশোক পাঠককে দেখে মনে হবে, অভিনয় তাঁরা শেখেননি, অভিনেতা হয়েই জন্মেছেন! এই পঞ্চায়েতের কোন হিরো বা হিরোইন নেই। ছোট চরিত্রগুলোই জলতরঙ্গ বাজিয়ে গিয়েছেন সিরিজ জুড়ে।
বুদ্ধিমান পরিচালক গ্রামীণ ভারতের সমকালীন সমস্যাকে অগ্রাহ্য করেননি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ কীভাবে হয়, তা বলেছেন হিউমারের মোড়কে। যখন আবাস যোজনায় বাড়তি ঘর পাওয়ার লোভে জগমোহনের মা তার ছেলে এবং বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে পাশেই একটি মাটির বাড়িতে থাকতে শুরু করে, অসাধারণ লাগতে পারে আপনাদের। সে পঞ্চায়েতকে বোঝানোর চেষ্টা করে, আসলে ছেলেই তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে! দক্ষ পরিচালক দুর্নীতির খোঁজ দিতে দিতেই জগমোহনের দারিদ্র্য, বউয়ের উস্কানি, মায়ের এই বয়সেও ছেলেকে বাড়ি পাইয়ে দিতে নাটক করে যাওয়ার পিছনের গভীর স্নেহ— সবটাই পেঁয়াজের খোসার মতো ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ঝগড়ার নাটক করতে করতে সত্যিই জগমোহনের মা আলাদা হয়ে গিয়ে প্রহ্লাদের বাড়িতে উঠলেন। সদ্য যুবক সন্তানকে হারানো প্রহ্লাদ এবং সদ্য পরিবার হারানো জগমোহনের মা ফাঁকা, নিঃসঙ্গ, আবর্জনাভরা বাড়ির আবর্জনা যখন একসঙ্গে পরিষ্কার করতে শুরু করলেন, এই ওয়েব সিরিজ যেন কবিতা হয়ে উঠল! আবেগের সুর বাজিয়ে দিয়ে পরিচালক ফের হাস্যরসে ফিরলেন। কুকুর মেরে কেটে খাওয়ার দোষে অভিযুক্ত হলেন স্থানীয় বিধায়ক! পরে তাঁর বিরুদ্ধে উঠল পায়রা খুনের অভিযোগ!
গ্রাম জীবনের গল্প বলা হবে, রাজনীতি আসবে না, এমনটা হয় না। প্রথম সিজন থেকেই খেয়াল করে দেখবেন, গল্প যত এগিয়েছে, ততই গ্রামের রাজনীতির অলিগলির বাঁকগুলি দেখাতে শুরু করেছেন পরিচালক। প্রহ্লাদের ছেলের শহীদ হওয়া যেমন সিজন টু-তে বড় ধাক্কা, সিজন থ্রি-তে তেমন জোরদার ধাক্কা প্রধানের গুলি খাওয়া! কে গুলি করল, সেই কথা চলতে চলতেই ফুলেরায় এসে পড়ল পঞ্চায়েত ভোট। দেশে চলছে লোকসভা ভোট!
সমসময়কে অগ্রাহ্য করেননি পরিচালক। রাজনীতি তো ভারতীয়দের জীবনে সবজির খোসার মতো, আনাজ কাটতে গিয়ে বেশিরভাগই ফেলে দেন। কিন্তু অনেকে যে আবার সেই খোসা দিয়েই রান্না করে খান! তা ভুললে চলবে না।