প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস— সর্বপল্লী ডঃ রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন। প্রতি বছর এই দিনটা এলেই মনে হয়, ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’। ছাত্রাবস্থায় এবং শিক্ষক জীবনে, দুই ক্ষেত্রেই এই দিনটি কেমন যেন মনের গভীরে একটা চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে। যে শিক্ষকেরা প্রতিদিন ছাত্র গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেদের নিযুক্ত রাখেন, একটি সুন্দর কোরককে সুগন্ধময় বিকশিত পুষ্পে পরিণত করেন, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের খুঁটিনাটি নিয়ে চিন্তাভাবনা, গবেষণা করেন, কীভাবে তাদের কচি কচি মুখে হাসি ফুটবে সেই প্রচেষ্টায় সদা-সর্বদা নিজেদের নিয়ত রাখেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা জানাবার একটি দিন শিক্ষক দিবস। প্রস্তুতিপর্বটি নির্দিষ্ট দিনের প্রাকলগ্ন থেকেই সূচনা হয়ে যায়, দোকানে দোকানে উপচে পড়ে ভিড়, সদ্য কৈশোর বা যৌবনে পা দেওয়া সেই মুখগুলো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ৫ সেপ্টেম্বর, সকাল হতে না হতেই কার্ড, ফুলের তোড়া বা অকৃত্রিম ভালোবাসার উপহার হাতে নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা অপেক্ষা করে, কখন সেই প্রিয় মানুষটিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবে। এক অপূর্ব পরম্পরা, গুরুশিষ্যের এক অচ্ছেদ্য মেলবন্ধন। শিক্ষাগুরু জীবনের বিভিন্ন বয়সে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওয়া যায় — শিক্ষা, সঙ্গীত, নৃত্যকলা বা সৃজনশীল যে কোনও ক্ষেত্রেই। মা-বাবার কাছে যে শিক্ষাপর্বের সূচনা হয়, পরবর্তীকালে সেটি পরিণতি পায় কোনও প্রকৃত গুরুর সান্নিধ্যে। গুরুদক্ষিণা বা গুরুপ্রণামের এ এক অপূর্ব রীতি।
দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে, অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর ভালোবাসায় জারিত হয়ে ধন্য হয়েছি। এখন আবার আন্তর্জাল প্রযুক্তির হাত ধরে সামাজিক মাধ্যমের যোগাযোগে, কাছে ও দূরের, বর্তমান ও অতীতের, ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সংযোগটি অনেক নিবিড় হয়েছে। পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে ভেসে আসে একরাশ ভালোবাসা, অফুরান শ্রদ্ধার বার্তা। কালের নিয়মে যুগের পরিবর্তন হয়েছে, পারিপার্শ্বিকে বদল ঘটেছে আমূলভাবে, কিন্তু গুরু-শিষ্যের এই শাশ্বত পারম্পর্যটি রয়ে গিয়েছে নিষ্কলুষ, অমলিন। প্রতি বছরের মতো আজও, ৫ সেপ্টেম্বর, অপেক্ষায় থাকি, সেই প্রিয় বার্তাটি শোনবার আশায়, ‘প্রণাম নেবেন ম্যাম, ভালো থাকবেন’।
বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারীর প্রকোপে, বিগত প্রায় পাঁচ মাস ধরে শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কটি ডিজিটাল সামাজিক মাধ্যমের জালে বন্দি হয়ে পড়েছে। শিক্ষণ প্রক্রিয়াতে ছাত্র-ছাত্রীর কল-কোলাহল, ক্ষণিকের উচ্ছলতা ও নির্দোষ দুষ্টুমি যেমন অনুপস্থিত, তেমনি ছাত্র-ছাত্রীরাও তাদের প্রিয় স্কুল, খেলাপ্রাঙ্গণ, বন্ধু-বান্ধবী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্নেহময় শাসন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবুও, এই আবহে যখন ৫ সেপ্টেম্বর আসবে, নিশ্চিত ভাবেই পালিত হবে শিক্ষক দিবস, হয়তো নতুন আঙ্গিকে, কিন্তু আবহমান শ্রদ্ধা ও স্নেহের সুরধুনীটি বয়ে যাবে আপন ঐতিহ্যের বাহক হয়ে।