তোমাদের জন্য চলছে জনপ্রিয় বিভাগ মার্কশিট। এই বিভাগে থাকছে পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানোর সুলুক সন্ধান। এবারের বিষয় নবম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞান।
ভাবতে অবাক লাগে তালগাছ, ‘একপায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি দেয় আকাশে’। মাটি থেকে ৬০ বা ৭০ ফুট উঁচু সেই গাছের মাথায় জল পৌঁছয় কী করে? বাতাসের চাপে সেই জল তো এতদূর ওঠার কথা নয়। কী হয় তাহলে? যেভাবে হয়, তাকে বলে পরিবহণ পদ্ধতি। মাটি থেকে জল সূক্ষ্ম জলনালিকার মধ্যে দিয়ে বিন্দু বিন্দু করে জুড়ে লম্বা সুতোর মতো জলস্তম্ভ তৈরি করে ফেলে। আর সেটাই পাতায় নিয়ে যায় মাটির জলকে। এখন এই ব্যবস্থা চালু রাখতে কোথাও একটা চাপ দেওয়ার, ঠেলে মাটির জলের বিন্দুকে জলনালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়ার বা গাছের মাথার দিক থেকে কোনও টান জলস্তম্ভকে সচল রাখতে কাজ করা উচিত। বিন্দু বিন্দু জল সেখান থেকে বের হয়ে বাতাসে মিশে যাবে আর, মাটি থেকেও জল ঢুকবে গাছের মূলে। তা না হলে পরিবহণ হবে কী করে? মাটিতে জলের চাপ আর গাছের পাতা থেকে বাতাসে জল বেরিয়ে যায় বলেই এই রেলগাড়ির মতো জলের সরবরাহ চলতে পারে। অবশ্য আকাশে সূর্য থাকার ব্যাপারটা এখানে খুব দরকারি। তা না হলে তাপ-এ পাতা থেকে জল বেরতে পারবে না, আর রেলগাড়িও থমকে দাঁড়িয়ে যাবে।
গাছের মতো পরিবহণ না হলেও প্রাণীদের শরীরেও যা ঘটে তার নাম সংবহন। স্পঞ্জ, তারামাছ জল ব্যবহার করেই তাদের সংবহন চালায়। আর মানুষের কী হয়, সে তো আমরা জানি। মানুষের শরীরের প্রধান সংবহন মাধ্যম রক্ত।
মানুষের সংবহন বদ্ধ প্রকৃতির। মাছ, ব্যাঙ, সাপ, টিকটিকি, গিরগিটি, পাখি, তিমি, বাদুড়, প্যাঙ্গোলিন সবার ব্যবস্থাই একই। শিরা ধমনী জালক হৃৎপিণ্ড ফুসফুসের মধ্যে বন্দি হয়ে সারাদেহে রক্ত ঘোরাঘুরি করে। মুরগিকে যদি এমনভাবে কাটা যায় যে তার একটিও শিরা বা ধমনী কাটা পড়বে না, তাহলে দেখা যাবে ছাল ছাড়িয়ে নেওয়ার পরেও একফোঁটা রক্তও পড়বে না। সব রক্ত, রক্তবাহতেই আবদ্ধ থাকবে। এটাই বদ্ধ সংবহনের বৈশিষ্ট্য। যাদের এমন নয় যেমন আরশোলা, তাদের আবার শিরা নেই, ধমনী নেই। রক্ত সারা শরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে সে রক্ত আমাদের মতো লাল নয়।
এই রক্ত এক বিচিত্র তরল। এতে জল, নুন, চিনি, মৌল, যৌগ, ভিটামিন, শত্রু মোকাবিলার কোষ, অক্সিজেন বহনের ব্যবস্থা, কেটে গেলে জমাট বাঁধার সরঞ্জাম আছে। এমনকী জীবাণুর বেঁচে থাকার সুবিধেও আছে। কী নেই? আর তাই তো ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেই তিনি বলেন, আগে রক্ত পরীক্ষা করে দেখি। যে রক্তে এতকিছু আছে, তার কাজ যে কতরকম তা অনুমান করা যায়। তবে এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার, সবার রক্তের রং লাল আর কাজ এক হলেও চার রকম গ্রুপের— এ, বি, এবি এবং ও রক্ত মানুষের শরীরে দেখা যায়। রক্তদানের সময় এই গ্রুপ অনুযায়ী রক্ত দিতে হয়, না হলেই বিপদ। ভুল হলেই রক্ত জমাট বেঁধে যায়।
রক্ত সারা দেহে ঘুরে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। নিজেকে বিশুদ্ধ রাখে। ফুসফুসে গিয়ে অক্সিজেন নিয়ে আসে। তারপর, সেটা দেহে ছড়িয়ে দেয়। খাবারের থেকে পুষ্টি নিয়ে যেখানে দরকার সেখানে নিয়ে যায়। এখানে হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের ভূমিকা পাম্পের। সংবহন পদ্ধতিকে সচল রাখে সে। মানুষের শরীরে বেশি অক্সিজেন আর কম অক্সিজেন যুক্ত দু’ রকম রক্ত থাকে। দুটো থাকাই জরুরি। এদের আলাদা করে রাখে শিরা আর ধমনী। হৃৎপিণ্ডের মধ্যেও আলাদাভাবেই দু’রকম রক্ত পরিবাহিত হয়। যাইহোক, এবার তোমাদের কিছু প্রশ্ন দেওয়া যাক। যেমন—
১. পরিবহণ আর সংবহনের তফাৎ কী?
২. বদ্ধ প্রকৃতির সংবহন কী? এখানে কে কেন কোথায় বদ্ধ থাকে? ‘রক্তজালক’ কীভাবে তৈরি হয়?
৩. আরশোলার শরীরে রক্ত, শিরা ধমনী থাকে কি?
৪. রক্তের অকোষীয় উপাদান কী কী? ছকের মত করে দেখাও। রক্তের কোষীয় উপাদানগুলিও উল্লেখ কর।
৫. ব্লাড প্লাজ়মা কী? এর কাজ কী?
৬. রক্তের কোষীয় উপাদানগুলিকে ‘কণিকা’ বলা হয় কেন? এদের কাজ উল্লেখ কর।
৭. ইওসিনোফিল, বেসোফিল ও নিউট্রোফিল কী? এদের এরকম নামের কারণ কী? এদের কাজ কী?
৮. বাতাসে খোলা রক্ত জমাট বেঁধে জেলির মতো হয়ে যায় কেন? এর রসায়ন কী?
৯. অ্যান্টিজেনঅ্যান্টিবডি শব্দগুলি খুব প্রচলিত। মানুষের রক্তগ্রুপে এদের গুরুত্ব কী? এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব কোন বিজ্ঞানীর?
১০. ‘মানুষ যে বাঁদরের থেকেই বিবর্তিত হয়েছে, রক্তের মধ্যে সেই ইতিহাস আছে’ – কথাটি ঠিক? বিচার কর।
১১. মানুষের হৃদপিণ্ডেরলম্বচ্ছেদ– গঠন ও ছবি। রক্তের প্রবাহ পথ।
১২. হৃৎপিণ্ডের কপাটিকা ও তাদের অবস্থান।
এই প্রশ্নগুলি ছাড়াও হিমোলাইসিস, এভিনোড, এস এ নোড, সিস্টোল ও ডায়াস্টোল, পেরিকার্ডিয়াম, গ্র্যানুলোসাইট, অ্যগ্র্যানুলোসাইট কথাগুলির মানে জেনে রাখো।
যে কোনও অধ্যায় পড়বার পর যা শিখেছ বা জেনেছ, সেটা নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর খোঁজবার চেষ্টা কর। সেটাই হল প্রস্তুতির শেষ ধাপ। উত্তর শুধু জানা নয়, প্রশ্ন করতে শেখাটাও খুব দরকার। এরকম কিছু প্রশ্ন এখানে ভাবা যেতে পারে। যেমন সব প্রাণির হৃৎপিণ্ড কী মানুষের মতো? হৃৎপিণ্ড যদি পাম্প হয়, নিজে চলে কেমন করে? রক্তে চিনির মাত্রা বাড়লে ক্ষতি কেন? ফুসফুস কীভাবে রক্তে অক্সিজেন মেশায়? এইসব।
পরামর্শে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক অরণ্যজিৎ সামন্ত।