তোমাদের জন্য চলছে জনপ্রিয় বিভাগ মার্কশিট। এই বিভাগে থাকছে পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানোর সুলুক সন্ধান। এবারের বিষয় নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান। পরামর্শে রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের (উচ্চ মাধ্যমিক) ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক স্নেহাংশু দে।

ছাত্রছাত্রীরা, নবম শ্রেণী মানে তোমরা ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির প্রথম ধাপে প্রবেশ করে ফেলেছ। এরপরই আসবে রেজাল্ট, কেরিয়ার, চাকরি, প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি—অর্থাৎ বৃহত্তর জীবনের পথে এগিয়ে চলা। আপাতত আমরা যদিও করোনা আবহে বাস করছি, তবে কোনও কিছুর জন্য জীবনের গতি থেমে থাকবে না। সময় এগিয়ে চলবেই, এগিয়ে যাবে জীবন প্রবাহ। চলে আসি পড়াশোনার কথায়। স্কুল বন্ধ, তাই ছাত্রছাত্রীদেরকে বাড়িতে বসে নিজে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে পড়তে হচ্ছে। এই লেখাটুকুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সামান্য উপকৃত হলে এই ছোট্ট প্রচেষ্টা সার্থক হবে। আজ আমরা ভৌতবিজ্ঞানের ‘অ্যাসিড, ক্ষার, লবণ’ অধ্যায়টি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
এই অধ্যায়ের প্রথমে আমাদের পড়তে হবে আরহেনিয়াসের আয়নীয় তত্ত্ব এবং এই তত্ত্বানুসারে অ্যাসিড ও ক্ষারের সংজ্ঞা, ক্ষার ও ক্ষারকের পার্থক্য, এই তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা। কৌতূহলী ও অনুসন্ধিৎসু শিক্ষার্থীরা এর সঙ্গে ব্রনস্টেড-লাউরির অনুবন্ধী অ্যাসিড-ক্ষারক তত্ত্ব এবং লুইস অ্যাসিড-ক্ষারক তত্ত্ব যে কোনও একাদশ শ্রেণীর রসায়ন বই থেকে পড়ে নিলে এইসব তত্ত্বগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য বুঝতে সুবিধা হবে এবং অ্যাসিড-ক্ষারক সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা তৈরি হবে। আসলে অ্যাসিড-ক্ষারকের ধারণাটা অনেক প্রশস্ত। অনেক যৌগ আছে, যেমন BF3, AlCl3, NH4Cl। এরা আম্লিক যৌগ হলেও আরহেনিয়াসের তত্ত্বানুসারে এদেরকে অ্যাসিড বলা যায় না। আবার NH3, CH3NH2, NaH—এরা ক্ষারকীয় প্রকৃতির হলেও এদের ক্ষারকীয়তা আরহেনিয়াসের তত্ত্বানুসারে ব্যাখ্যা করা যায় না।
এরপর পড়তে হবে HCl, H2SO4, HNO3—এই তিনটি অ্যাসিডের রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ। মনে রেখো HCl একটি বিজারক অ্যাসিড কিন্তু H2SO4 ও HNO3 জারক অ্যাসিড। সুতরাং HCl-এর বিক্রিয়াগুলো দু’প্রকার: ১. HCl-এর বিজারণ বিক্রিয়া ২. প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া (প্রশমন বিক্রিয়াও একপ্রকার প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া)। H2SO4 ও HNO3-এর বিক্রিয়াগুলোর সাধারণ প্রকারভেদগুলি হল: ১. জারণ বিক্রিয়া ২. প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া। H2SO4-এর ক্ষেত্রে নিরুদন বিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। H2SO4 অ্যালকোহলকে নিরুদিত করে অ্যালকিনে পরিণত করে। কপারের সঙ্গে বিভিন্ন শর্তে HNO3-এর বিক্রিয়াগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিক্রিয়াগুলিতে লক্ষ কর নাইট্রিক অ্যাসিডের গাঢ়ত্ব যত কমতে থাকে তত নাইট্রোজেনের কম জারণস্তর যুক্ত অক্সাইড উৎপন্ন হয়— উষ্ণ ও গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে কপারের বিক্রিয়ায় নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, শীতল ও মধ্যম গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে কপারের বিক্রিয়ায় নাইট্রিক অক্সাইড, শীতল ও লঘু নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে কপারের বিক্রিয়ায় নাইট্রাস অক্সাইড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড বাষ্পের সঙ্গে কপারের বিক্রিয়ায় নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। অ্যাসিড তিনটির শনাক্তকরণ পড়তে হবে। নাইট্রিক অ্যাসিডের বাদামি বলয় পরীক্ষা (Brown ring test)-র সমীকরণ ও উৎপন্ন জটিল যৌগের সংকেত অত্যন্ত জরুরি। সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের ক্ষেত্রে অ্যাসিডের সঙ্গে প্রশমন বিক্রিয়া ও ধাতুর সঙ্গে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়াগুলো পড়তে হবে। এই ক্ষার ও অ্যাসিডগুলির সকল বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ‘কী ঘটে লেখো’ (What happens when) জাতীয় প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় চারটি পয়েন্ট মাথায় রাখতে হবে: —১. বিক্রিয়ার সমতাযুক্ত সমীকরণ ২. বিক্রিয়ার সঠিক শর্ত (উষ্ণতা, চাপ, অনুঘটক) ৩. বিক্রিয়ায় সংঘটিত জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া (জারক ও বিজারক দ্রব্য নির্দেশ করতে হবে) ৪. বিক্রিয়ার ভৌত পরিবর্তন (বর্ণের পরিবর্তন, গন্ধ, অধঃক্ষেপণ ইত্যাদি) লিখতে হবে।
এই অধ্যায়ের পরবর্তী অংশ হল: pH (Potenz of hydrogen ion)। pH-এর গাণিতিক প্রকাশ ও সংশ্লিষ্ট সমীকরণগুলো নবম শ্রেণীর সিলেবাস বহির্ভূত। কিন্তু ধারণার স্পষ্টতার জন্য 25°C উষ্ণতায় প্রশম জলীয় দ্রবণের pH=7 এই মানটির উৎস জানা আবশ্যিক। গাণিতিকভাবে, pH=-log10[H+]। 25°C উষ্ণতায় জলের ক্ষেত্রে, আয়নীয় গুণফল Kw=[H+] [OH-]=10-14। এখন, বিশুদ্ধ জলের ক্ষেত্রে [H+]=[OH-] :. Kw=[H+]2=10-14 => [H+]=10-7=> pH=-log10 (10-7)=7. এরসঙ্গে pH স্কেল এবং এর ওপর উষ্ণতার প্রভাব সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রেখ। 100°C উষ্ণতায় বিশুদ্ধ জলের pH=6.13। ওই জল কিন্তু আম্লিক নয়; প্রশম। অর্থাৎ উষ্ণতার পরিবর্তনের সঙ্গে pH স্কেলের পাল্লাও পরিবর্তিত হয়। এছাড়া, মানবদেহ এবং আমাদের পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন জৈব ও অজৈব প্রক্রিয়ায় pH-এর ভূমিকা অর্থাৎ pH-এর প্রয়োগমূলক দিকগুলি জানা থাকলে Theoretical aspect-এর প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়বে।
এরপরের অংশে আমাদের পড়তে হবে প্রশমন বিক্রিয়া, টাইট্রেশন ও অ্যাসিড-ক্ষারক নির্দেশক। কী প্রকার অ্যাসিডের সঙ্গে কী প্রকার ক্ষারের টাইট্রেশনে কোন নির্দেশক ব্যবহার করা হয় এবং তাদের বর্ণের পরিবর্তন কী হয় তা জানতে হবে। ছাত্রছাত্রীরা হয়তো জানলে এখন অবাক হবে যে, বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে টাইট্রেশন প্রক্রিয়ার বহুল প্রয়োগ রয়েছে। বাজারজাত সকল তরল খাবার পানীয়, তরল ওষুধ, কসমেটিকস-এর container-এর গায়ে তোমরা pH- এর মান, composition লেখা দেখতে পাবে। এই সকল product-এর pH-এর মান, উপাদানের পরিমাণ নির্ণয়ে টাইট্রেশন বহুল প্রচলিত পদ্ধতি।
অধ্যায়ের পরবর্তী অংশ ‘অক্সাইড ও তার শ্রেণীবিভাগ’। সাধারণভাবে ধাতব অক্সাইডগুলো ক্ষারকীয় প্রকৃতির এবং অধাতব মৌলের অক্সাইডগুলো আম্লিক প্রকৃতির। Mn2O7 ও CrO3 হল দুটি ব্যতিক্রমী ধাতব অক্সাইড যারা আম্লিক প্রকৃতির। কেন্দ্রীয় ধাতব মৌলের উচ্চ জারণস্তর এদের ব্যতিক্রমী আচরণের কারণ। এরপর অম্লবৃষ্টি-এর কারণ ও তার ক্ষতিকারক প্রভাব পরীক্ষার জন্য আবশ্যিক। এরপর বাজারজাত কিছু অ্যান্টাসিডের নাম ও তাদের উপাদান তোমাদেরকে মনে রাখতে হবে।
অধ্যায়ের শেষ অংশে আমাদের পড়তে হবে বিভিন্ন প্রকার লবণ। প্রশম লবণ, আম্লিক লবণ, ক্ষারকীয় লবণ, মিশ্র লবণ, যুগ্ম লবণ, জটিল লবণ-এর প্রত্যেক প্রকারের উদাহরণ পড়তে হবে। অ্যাসিডের ক্ষারগ্রাহিতা, ক্ষারকের অম্লগ্রাহিতা এবং বিভিন্ন ক্ষারগ্রাহিতা সম্পন্ন অ্যাসিড ও অম্লগ্রাহিতা সম্পন্ন ক্ষার থেকে কী কী প্রকার লবণ গঠিত হতে পারে সে ধারণাটা থাকলে তা পরবর্তীকালে তোমাদের ধারণার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
পরিশেষে সকল শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় সাফল্য, সামগ্রিক বিকাশ ও ভবিষ্যতের উন্নতি কামনা করি।