প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
শিক্ষকরা খুব সাহায্য করছেন
সাধারণত মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের দিনই পরবর্তী মাধ্যমিকের রুটিন দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাভাবিকতার যে বিচ্যুতি এ বছর ঘটেছে তার ফলে মাধ্যমিকের তারিখ না জেনেই পড়াশোনা চালাতে হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর জন্য মাত্র আড়াই মাস আমরা স্বাভাবিক ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছি।
প্রথমে ইউটিউব বা স্কুলের ওয়েবসাইটে ভিডিও দিয়ে পড়ানোয় যে সমস্যা হচ্ছিল, এখন সেই সমস্যা অনেকটা মিটেছে। অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ায় সরাসরি কথাবার্তার সুযোগ পাওয়া গিয়েছে। তাছাড়া আমাদের যে কোনও প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়ে দিলে শিক্ষকরা যত্ন সহকারে সেগুলির উত্তর করে দিচ্ছেন। সঙ্গে অন্যান্য নোটসও আমরা এভাবেই পেয়ে যাচ্ছি। ইংরাজিতে কোনও রাইটিং শিক্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে পাঠালে তাঁরা সংশোধন করে দিচ্ছেন। তাছাড়া ফোন করে কথা বলার সুযোগ তো সবসময় খোলা। বলাবাহুল্য, এরই মধ্যে শিক্ষকদের উদ্যোগে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও আমরা পেয়েছি।
আর মাধ্যমিকের প্রোজেক্টের বিষয়গুলি আমাদের এই সময়েই করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মহারাজ। যদিও কাজটা সহজ নয়—কিন্তু শিক্ষকরা যেভাবে অনলাইন ক্লাসে আলোচনা করেছেন তাতে অসুবিধার কোনও কারণ থাকছে না।
ভূগোল-ইতিহাসের ম্যাপ পয়েন্টিং, জ্যামিতির প্রয়োগ, বাংলার লিখনশৈলী সমৃদ্ধ করার প্রক্রিয়াটা যে মন্থর হয়ে পড়েছে, তা সম্যক। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষকদের কথা ঠিকমতো শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সেরাটা দিয়ে আমাদের সাহায্য করছে। তাই এ বছরের মতোই একটা উজ্জ্বল রেজাল্টের প্রত্যাশী।
অর্ক ঘোষ, দশম শ্রেণী
রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় (উচ্চ মাধ্যমিক)
পরিকল্পনা মতো পড়াশোনা করছি
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সকালে ঘুম থেকে উঠলেই মনটায় একটা অদ্ভুত বিষণ্ণতা লেগে থাকে—ঘিরে থাকে একটা অপূর্ণতার বৃত্ত, যা বলে বোঝানো কঠিন। সারা পৃথিবী এখন কোভিড-১৯-এ পর্যুদস্ত। আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাও তার ব্যতিক্রম নয়।
এপ্রিল-এর প্রথম দিকটায় একটা অনির্দিষ্ট, অলিখিত ছুটির দিনপঞ্জিকা আমাদের সকলকেই একটা আনন্দের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, একথা অনস্বীকার্য। একটা বাধাহীন, মুক্তির স্বাদ, রোজ নিয়ম মাফিক ঘুম থেকে ওঠা, ক্লাসরুম, পিরিয়ড আর নিয়মের ঘেরাটোপ থেকে দূরে থাকা।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, মনটা ভারী হচ্ছে, রিতমা-অনুষ্কা-কাশভির সঙ্গে টিফিন ভাগ করা, বিস্তৃত করিডোর-এ বসে অফ পিরিয়ড কাটানো, বাস্কেটবল কোর্টের ছন্দ, বিগ হল থেকে ভেসে আসা পিয়ানোর মূর্ছনা, আর ম্যামদের স্নেহ মাখা, বকুনি, মমতা, ব্ল্যাক বোর্ড, কাঠের বেঞ্চ ভীষণ ভীষণভাবে টানছে। ঘরে একেবারেই মন টিকছে না। ক্লাসরুমের জানলা দিয়ে নীল আকাশ, সবুজের উঁকিঝুঁকি সবকিছু ভীষণভাবে মিস করছি।
জুম কলের মাধ্যমে এখন আমাদের ক্লাস হচ্ছে। অনলাইন এই শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা কেউই তেমন পারদর্শী ছিলাম না। সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে আমরা মাঝে মাঝেই খেই হারাচ্ছি। নেটওয়ার্ক-এর সমস্যা, ক্রমাগত ফোন আর ল্যাপটপের ব্যবহার, অনুপযুক্ত পরিকাঠামো সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলছে। আমার তিন বন্ধু বাড়তি কোভিড উপহার হিসেবে চশমা নিতে বাধ্য হয়েছে।
যাইহোক, আগামী বছর বোর্ডের পরীক্ষা দেব। এখনও পর্যন্ত জানি না কবে, কীভাবে পরীক্ষা হবে। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও পড়াশোনায় কোনও খামতি রাখছি না। একটি রুটিন করেছি। প্রতিটি বিষয় পরিকল্পনা করে পড়ছি, যাতে পিছিয়ে না পড়ি। স্কুলের শিক্ষকরাও খুব সাহায্য করছেন।
ঐশিনী মজুমদার, দশম শ্রেণী
লরেটো হাউস, মিডলটন রো
যতটা সম্ভব প্রস্তুতি সেরে রাখছি
আগামী বছর বোর্ড পরীক্ষা কীভাবে কখন হবে তা জানি না। খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। করোনা ভাইরাসের জন্য এ বছর স্কুলে গিয়ে শিক্ষিকা ও শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে রেজাল্টও নেওয়া হয়নি। রেজাল্ট জেনেছি ইন্টারনেটের মাধ্যমে। গত এপ্রিল মাস থেকে জোর কদমে স্কুলের অনলাইন ক্লাস চলছে। স্কুলের বাইরে আর যাঁদের কাছে গিয়ে আমি পড়াশোনায় সাহায্য নিতাম, সে সবও এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলছে। সব মিলেমিশে একটা দমবন্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত স্কুলের অনলাইন ক্লাস হয়। সন্ধেবেলা অনলাইনে অন্য শিক্ষকদের কাছে পড়ি। সব পড়াশোনাই এখন ফোন বা কম্পিউটারে করতে হচ্ছে। অসুবিধা হলেও অন্য কোনও উপায় নেই। সব থেকে বেশি অসুবিধা হয় অঙ্কের ক্লাসে। মাঝে মাঝে ইন্টারনেটের সিগন্যাল না থাকায় শিক্ষকদের কথা শোনা যায় না। আবার কখনও ইন্টারনেটের সমস্যার জন্য ক্লাসও বন্ধ হয়ে যায়। তার ওপর সিবিএসই-এর বোর্ডের সব বই এখনও পাওয়া যায়নি। তাই পিডিএফ বই দেখে পড়তে হচ্ছে। এখন তো আবার অনলাইনে স্কুলের পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এখন আমাদের এইভাবে পড়াশোনা করতে হবে। স্কুল কবে খুলবে কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই একটু চিন্তায় রয়েছি। যাইহোক, আর কিছু করার নেই, আমাদের এভাবেই বাড়িতে থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতি যতটা সম্ভব এগিয়ে রাখতে হবে।
পৃথ পাত্র, দশম শ্রেণী
এপিজে স্কুল, পার্ক স্ট্রিট
প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছি না
আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রতিবছর মাধ্যমিকের রেজাল্টের সঙ্গে আগামী বছরের পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দেওয়া হয়। করোনা ভাইরাসের জন্য এবার সেটা হয়নি। আগামী বছর কবে পরীক্ষা হবে, কীভাবে হবে তা কেউই জানে না। আমার মতো সবাই এই দুশ্চিন্তার মধ্যেও প্রস্তুতি নিচ্ছে। সম্পূর্ণ নতুন কোনও ব্যবস্থায় পরীক্ষা দিতে হলে, দ্রুত তার জন্য তৈরি হয়ে ওঠা খুব সহজ কাজ কিন্তু নয়।
এই অনিশ্চয়তার মধ্যে নিয়মিত পড়াশোনা করছি। মোবাইল ফোনের ওপর এখন ভরসা। অনলাইন ক্লাসে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ওয়ার্ক শিট, অ্যাক্টিভিটি টাস্ক কথাগুলো এখন নতুন। আগে ছিল ‘বাড়ির কাজ’। এখন সবই ‘বাড়ির কাজ’, স্কুলের কাজ আর কিছু নেই। শিক্ষকরা খাতা দেখে হাতে হাতে দিতে পারছেন না। ছবি তুলে পাঠিয়ে খাতা দেখা খুব ভালো হয় না। ঠিক যেমন, জ্যামিতির আঁকা, জীবনবিজ্ঞানের ছবি, ভূগোলের ম্যাপ এইগুলো সামনে করে দেখালে অনেক সুবিধা হয়, সেটা হচ্ছে না। অনেক সময় অঙ্কেও এটা হয়। আগে শিক্ষকদের থেকে ডিকটেশন নিয়ে লেখার একটা ব্যাপার ছিল। এখন লেখা দেওয়া নেওয়া হচ্ছে ইন্টারনেটে পিডিএফ-এ। এতে অবশ্য আমার নিজের বানান ভুলের সম্ভাবনা কমেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় ঠিকভাবে এগচ্ছি কিনা। একসঙ্গে পড়াশোনা না করতে পারলে এটা বোঝা যায় না। তবে এখন পড়াশোনায় বাজে সময় নষ্ট অনেক কমে গেছে। খুব সুন্দরভাবে শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাস নিচ্ছেন। যতক্ষণ অনলাইন, ততক্ষণ পড়া। বন্ধুদের মধ্যে গল্প নেই। শিক্ষকদের পড়ার বাইরে অন্য কোনও কথা নেই। মাধ্যমিক পরীক্ষার দিকে তাকিয়ে এই সময়টা তাই আমার কাছে শুধু প্রস্তুতির নয়, একটা চ্যালেঞ্জ এই প্রতিকূলতা জয় করে উঠে দাঁড়ানোর।
মহাদিত্য রায়, দশম শ্রেণী
বালিগঞ্জ গভঃ হাই স্কুল
প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেই প্রস্তুতি সারতে হবে
প্রতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার দিনই পরের বছরের পরীক্ষার দিন জানানো হয়। কিন্তু এবার বিশ্ব-অতিমারী ও দেশব্যাপী লকডাউনের ফলে এখনও পর্ষদ থেকে আগামী পরীক্ষাসূচি জানানো হয়নি। ফলে আমরা খুব চিন্তিত। কিন্তু এই অবস্থাতেই আমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে হবে। তাই পূর্বের বছরগুলির অনুসারে পরীক্ষার সময়কে লক্ষ্য রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোভিড-১৯-এর জন্য বহুদিন যাবৎ বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছি। অবশ্য শিক্ষিকারাই অনলাইন ক্লাস করিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে অনলাইন ক্লাসে বেশকিছু সমস্যাও হচ্ছে। কারণ আমরা অনেকেই অভিভাবকদের ফোন ব্যবহার করি। ফলে তাঁরা যখন বাড়িতে থাকেন না, তখন ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছে। যাইহোক, চেষ্টা করছি কোনও অধ্যায় পড়ার পর তা থেকে কী প্রশ্ন আসতে পারে তা দিদিদের থেকে জেনে উত্তর লেখার ও তাঁদের কাছে অনলাইনে পাঠিয়ে সংশোধনের। সমস্ত বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হচ্ছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অঙ্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রশ্ন বিচিত্রা, পুরনো টেস্ট পেপারের মকটেস্ট পেপারগুলি সমাধান করছি। ভৌতবিজ্ঞান ও জীবনবিজ্ঞানের টেস্ট পেপার ও বাংলা শিক্ষা পোর্টাল থেকে দেওয়া অ্যাক্টিভিটি টাস্কের উত্তর লিখছি। বাড়ির বড়রা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা নেওয়া ও পড়া ধরার মাধ্যমে সাহায্য করছেন। প্রশ্নপত্রে বহু বিকল্প প্রশ্নের আধিক্য থাকায় সব বিষয়েই বহু বিকল্প প্রশ্ন সমাধান করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ইংরেজি খবরের কাগজ পড়ছি আনসিন-এর প্রস্তুতির জন্য। এছাড়া ইতিহাস, বাংলা, ভূগোলের ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নগুলি লিখছি ঘড়ি ধরে। এই সকল অনুকূল, প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেই শেষ করে ফেলতে হবে পরীক্ষার সব প্রস্তুতি।
শ্রাবণী মালাকার, দশম শ্রেণী
বেথুন কলেজিয়েট স্কুল
পুরনো টেস্ট পেপার সলভ করছি
আমরা এখন করোনা যুগের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকে যে জীবন চর্চায় অভ্যস্ত ছিলাম, তার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। নবমের গন্ডি পেরিয়ে দশমে পাড়ি মানেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। বাবা-মা, শিক্ষক, বন্ধু সকলের মুখে শুধু এক কথা। তার জন্যে শুরু হল মনে মনে প্রতিজ্ঞা। সঙ্গে জোরদার পড়াশুনা। কিন্তু করোনার অতিমারীতে দিক্ভ্রান্ত অবস্থা। মার্চে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ক্লাস বন্ধ, তারপর করোনা ভাইরাস। প্রথমত দিশেহারা, সারাদিন চিন্তা, খাওয়া-দাওয়া আর ঘুম। তারপর স্কুলের শিক্ষকদের উদ্যোগে শুরু হল ই-লার্নিং। মায়ের ফোনটাই হয়ে গেল আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। ফোন কলে, হোয়াটসঅ্যাপে, পরে জুম এবং শেষে গুগল মিট দিয়ে শুরু হল ইচ্ছেপূরণ, শ্রেণীকক্ষের বিকল্প পাঠদান। শিক্ষকদের প্রচেষ্টার কোনও খামতি নেই। নেটওয়ার্ক সমস্যা আর ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সবাই অভ্যস্ত নই বলে নানান অসুবিধা। সরকারি প্রচেষ্টায় দূরদর্শনেও বিষয় ভিত্তিক আলোচনা শুনতে লাগলাম। ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ গুলো আলাদা আলাদা বিষয়ের খাতায় লিখতে শুরু করলাম। যাইহোক, ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এখন অনেকটাই ধাতস্থ হয়ে গিয়েছি। জোরকদমে পুরনো টেস্ট পেপার সলভ করে শিক্ষকদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। শিক্ষকরা খুব সাহায্য করছেন। এভাবেই জোরকদমে চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি। এটাকে শিক্ষা বিপ্লব বলব কিনা জানি না, কিন্তু এটা ঠিক এটুকু বুঝে গেয়েছি ‘ভালোমন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে’।
বিপ্রজিৎ পোদ্দার, দশম শ্রেণী
হিন্দু স্কুল