উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ। বন্ধ বাইরে বেরনো, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, খেলাধুলোও। স্বাভাবিকভাবেই তোমরা বেশ হতাশ হয়ে পড়েছ। মনও অশান্ত হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। বাইরে বেরলে করোনার ভয়। জোরকদমে চলছে অনলাইন ক্লাস। কাজেই এখন তোমাদের মনকে শান্ত রাখতেই হবে। এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো মেনে চললে তোমাদের মন ভালো থাকবে। দূর হবে হতাশা। যেমন—
মানিয়ে চলার মানসিকতা তৈরি করো
নিজেকে এমনভাবে তৈরি করো, যাতে যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা তৈরি হয়। যুক্তি দিয়ে যে কোনও পরিস্থিতিকে বুঝতে হবে। তাহলেই দেখবে সব রকম পরিস্থিতিকে সামলানো সহজ হচ্ছে। ভেবে দেখো তো—তোমরা গৃহবন্দি থাকলেও ইন্টারনেট পরিষেবা সচল, সিনেমা দেখতে পারছ, ইন্ডোর গেম খেলছ, টিভি চলছে, মায়ের হাতে পছন্দের খাবারও মুহূর্তে পেয়ে যাচ্ছ। সব থেকে বড় কথা, পৃথিবীতে যতই অনিশ্চয়তা থাক না কেন, সবাই মিলে এক জায়গায় নিরাপদে থাকতে পারছ। এটাই বা কম কী?
কী করলে ভালো থাকবে
এমন কী কী আছে, যেগুলো করলে তোমাদের মন ভালো থাকবে সে সবের সন্ধান করো। খুঁজে বার করো এমন কিছু, যেগুলি সময়ের অভাবে বা অবহেলায় কখনও করা হয়ে ওঠেনি। যেমন— ছবি আঁকা, গান, আবৃত্তি, বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা, গল্প ও কবিতা লেখার চেষ্টা প্রভৃতি। এটাই কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বা শিখে নিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করার বড় সুযোগ। হাতছাড়া কোরো না।
বাড়ির কাজে হাত লাগাও
যে কারণেই হোক, বাড়ির কাজে সেভাবে তোমাদের কখনও সাহায্য করা হয়ে ওঠেনি। এখন সেই সময় এসেছে— তাই বাড়ির কাজে হাত লাগাও। মা-বাবার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে প্রয়োজনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। এতে বাড়ির সকলের সঙ্গে সঙ্গে তোমাদেরও মন ভালো থাকবে।
অনলাইনে গল্প করো
কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তাই ইচ্ছে করলেই ঘরবন্দি অবস্থাতে থেকেও সবার সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখা যায়। অবসর সময় পেলে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ফোনে, অনলাইনে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলো। গল্প করো। একে অপরের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নাও। এতে মনের কোণে জমা মেঘ সরে যাবে।
পুরনো অ্যালবাম দেখো
মন খারাপ, কী করবে বুঝে উঠতে পারছ না? সিনেমা দেখতে ভালো লাগছে না, গান শোনার মতো পরিস্থিতি নেই, বই পড়া হয়ে গিয়েছে—এরকম ক্ষেত্রে বাড়ির পুরানো অ্যালবাম একা বা সবাই মিলে দেখতে পারো। দেখবে অনেক পুরানো কথা মনে পড়ে যাবে। আর মুহূর্তে মন ভালো হয়ে যাবে।
সিনেমা দেখা, গান শোনা, বই পড়া
সময় থাকুক বিনোদনের জন্যও। পড়াশোনা ও কাজকর্ম শেষ করে পছন্দের সিনেমা দেখো। যেসব বই সময়ের অভাবে পড়া হয়নি, সেগুলো পড়তে পারো। গান শুনলেও মন ভালো থাকে।
স্বনির্ভর হওয়ার সেরা সুযোগ
আমাদের প্রত্যেকেরই স্বনির্ভর হওয়া জরুরি। অর্থাৎ নিজের কাজটুকু নিজে করে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। শুধু ভাবলে হবে না, করে দেখাতে হবে। প্রথম প্রথম অসুবিধা হতে পারে। তেমন হলে বাড়ির বড়দের সাহায্য বা পরামর্শ নাও। নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যদি কোনও কিছুর অভাব থাকে, তাহলে শিখে নাও। এখন তো অনলাইনে বহু ধরনের কোর্স করা যাচ্ছে।
বাগানের পরিচর্যা করো
বাড়িতে গাছ থাকলে তার পরিচর্যা করো। যে গাছকে আমরা বড় হতে দেখি, যার প্রাণ আছে সেও কিন্তু সামাজিক বন্ধুর মতো আমাদের সঙ্গ দিতে পারে।
একটি রুটিন তৈরি করো
সারাদিনের পড়াশোনা, কাজকর্ম, বিনোদন, গল্প, আড্ডা, সিনেমা দেখা, বই পড়া, গান শোনা, শরীরচর্চা, ঘুম প্রভৃতির জন্য এই সময়কে মাথায় রেখে একটি রুটিন তৈরি করো। সব কিছুর জন্য নির্দিষ্ট সময় ভাগ করা থাকলে সুবিধে হয়। রুটিন না থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সময়কে ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারি না। এতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করা যায় না।
ভালো অভ্যেস তৈরি করো
বিভিন্ন কারণে আমাদের কিছু খারাপ অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। অনেক সময় এমন হয় যে, আমরা চাইলেও সেই সব অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না। কখনও সময়ের অভাবে বা পরিস্থিতির চাপে বা কখনও নিজেকে আমরা বোঝাতে পারি না। সেই সব অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য এর থেকে ভালো সময় আর তোমরা পাবে না। তাই ভালো অভ্যাস তৈরির তালিকাটি করে নাও।
আকাশ চেনো, তারা দেখো
অনেকেরই তেমনভাবে আকাশ বা তারা দেখা হয়ে ওঠে না। দিনে বা রাতে আকাশ দেখারও যে আনন্দ আছে, তা এবার পরখ করে দেখো। এই সুযোগ একেবারেই হাতছাড়া কোরো না। মেঘ, বৃষ্টি, নির্মল নীল আকাশ, সূর্য, চন্দ্র, তারা দেখে শুধু আনন্দ হয় না, আমাদের কল্পনাপ্রবণ করে তোলে। অন্য জগতে নিয়ে যায়।
নিয়ম মেনে শরীরচর্চা
মন ভালো রাখার অন্যতম চাবিকাঠি শরীরচর্চা। বাড়ি হোক বা ফ্ল্যাট, একটু জায়গা খুঁজে নিয়ে নিয়মিত শরীরচর্চা করো। শরীরচর্চা মানে জিমে যেতে হবে, এই ধারণা একেবারেই ভুল। নিয়ম মেনে ফ্রি হ্যান্ড, যোগাসন, প্রাণায়াম করলেই যথেষ্ট। এতে ঘুমও ভালো হবে।
সব রকম খাবার খাও
যদিও তোমাদের খাবারদাবারের ভার বড়দের হাতেই, তবু তোমরাও এটা খাবো না সেটা খাবো না বলে বায়না করো না। কারণ এই সময় প্রতিদিনের তালিকায় চাই ভিটামিন সমৃদ্ধ সব রকম পুষ্টিকর খাবার। এতে শরীর যেমন ভালো থাকবে, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। করোনা আবহে এরকম একটি জটিল পরিস্থিতিতে এইসব বিষয়গুলি মাথায় রাখলেই তোমাদের মনের কোণে জমা সব উদ্বেগ, হতাশা, মন খারাপ দূর হয়ে যাবে। আনন্দ ও হাসিখুশিতে ভরে উঠবে এই বন্দিদশা।
অনুলিখন : স্নেহাশিস সাউ