উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
আকাশে রাখো চোখ
স্কুল বন্ধ। বন্ধুদের মন কেমন কেমন করছে নিশ্চয়ই! তবে মন খারাপ কোরো না। আজ তোমাদের এক খুশির খবর দেব। এই খবর জেনে সেই মতো কাজ করলে তুমি যা দেখবে, সেটা আগামী ৬ হাজার ৭৬৬ বছরেও কেউ দেখতে পারবে না! অবাক হলে? না, বেশি অবাক হয়ো না। আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে যা তোমাদের প্রতি মুহূর্তে অবাক করবে। হতবাক করবে। আজ এমনই এক অতি বিরল ঘটনার কথা বলছি শোনো।
আচ্ছা তোমরা আজ সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় কে কী করছ? খুব কাজ আছে কি? না, থাকলে একবার বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ছাদে যেতে পারবে? ছাদে না পারলে অন্তত খোলা আকাশের নীচে দাঁড়াও। এবার আকাশের উত্তর পশ্চিম দিকে একবার তাকিও। ভালো করে দেখো, আকাশে লেজের মতো কিছু একটা ঝলমল করছে! একটু খুঁজলে নিশ্চয়ই চোখ পড়বে। হ্যাঁ, এই ঝলমলে লেজ নিয়েই আজকের লেখা। আকাশে অবাক করা এই লেজটি হল একটি ধূমকেতুর। সেই ধূমকেতুর বিজ্ঞানসম্মত নাম সি/২০২০-এফ থ্রি। তবে এত বড় নাম মনে রাখা একটু শক্ত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও বোঝেন এই সমস্যার কথা। তাই তাঁরা এই ধূমকেতুর অপর একটি নাম দিয়েছেন— নিওওয়াইজ।
বিস্ময়ের ধূমকেতু
আকাশের অসংখ্য বিস্ময়ের মধ্যে একটি হল ধূমকেতু। তোমাদের মধ্যে অনেকেই ভূগোল বইতে ইতিমধ্যেই ধূমকেতুর কথা জেনেছ। আবার অনেকে এখনও পড়ে ওঠনি। তাই সকলের জন্যই প্রথমে একবার ধূমকেতু নিয়ে ছোট্ট আলোচনা সেরে ফেলা যাক।
আমাদের সৌরজগতের একদম বহির্ভাগে তাপমাত্রা খুবই কম থাকে। এই জায়গায় অসংখ্য বরফের খণ্ড ভেসে বেড়ায়। এই বরফ খণ্ডগুলি জলীয় বরফ, কার্বন ডাই অক্সাইড বরফ এবং অ্যামোনিয়া বরফ দিয়ে গঠিত। এই বরফের টুকরোগুলি আমাদের সৌর জগতের আদিকালে পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেতে খেতে একসঙ্গে জুড়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদের আয়তন হয় ১০ থেকে ২০ কিলোমিটারের মতো।
বরফের তৈরি এই তুষারখণ্ডই হল ধূমকেতু। নিজের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে স্বাধীনভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ধূমকেতু। এভাবে অনবরত চলতে চলতেই অতিথির মতোই আমাদের দেখা দেয়। দেখা দিয়েই আবার চলে যায় নিজের মতো।
ধূমকেতুর ঝিলমিলে লেজ
আচ্ছা বন্ধুরা তোমাদের অনেকের মনেই নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, ধূমকেতুর লেজটা কী? সেই লেজ জ্বলজ্বলই বা করে কেন? আসলে জমে থাকা অবস্থায় একটা ধূমকেতু ছোট আকারের হয়। অথচ কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের কাছাকাছি এসে পড়লেই সূর্যের তাপ ধূমকেতুর উপর প্রভাব ফেলে। এই সময়ে ধূমকেতুর বরফ গলতে শুরু করে। তার মধ্যে থেকে গ্যাস বেরিয়ে আসে। সেই ধূমকেতুর থেকে বেরিয়ে আসা ধুলো আর গ্যাস থেকেই তৈরি হয় লেজ। ধূমকেতুর মূল ভাগ থেকে তৈরি হয়ে সূর্যের বিপরীত দিকে ছড়িয়ে থাকে এই লেজ। আর সব থেকে অবাক করা তথ্য হল, এই লেজ কয়েক লক্ষ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। আর সেই কারণেই আমরা পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও সুদূরের ধূমকেতুর লেজ দেখতে পাই। আর ধূমকেতুর লেজ জ্বলজ্বল করার পিছনেও রয়েছে সূর্যের কেরামতি। সূর্যের আলো এই ধুলো এবং ধোঁয়ার উপর প্রতিফলিত হয়। ফলে সেই লেজ ঝলমল করে।
নিওওয়াইজ আবিষ্কার
এতক্ষণে নিশ্চয়ই তোমারা ধূমকেতু সম্বন্ধে কিছুটা হলেও বুঝে নিয়েছ। এবার আমাদের বিরল অতিথি নিওওয়াইজের কথায় ফেরা যাক। এই বছরের ২৭ মার্চ আমেরিকার মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা ন্যাশনাল এরোনোটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা সংক্ষেপে নাসা তাদের একটি উপগ্রহের সাহায্যে মহাকাশের এক তুষার গোলক অতিথিকে আবিষ্কার করে। যেই উপগ্রহের মাধ্যমে ধূমকেতুটি আবিষ্কৃত হয় তার নাম নিওওয়াইজ। নাসার পক্ষ থেকে নিজেদের উপগ্রহের নাম অনুসারেই এই ধূমকেতুর নামকরণ করা হয়। আর এমন খবর জানার পরই বিশ্বের তাবড় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে উত্তেজনার সীমা রইল না। শুরু হয়ে গেল সুন্দরী নিওওয়াইজ পর্যবেক্ষণের তোড়জোড়।
নিওওয়াইজ দর্শন
১৪ জুলাই থেকে রোজই আকাশে খালি চোখে নিওওয়াইজের দেখা মিলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সূর্য নামার পর আকাশের উত্তর পশ্চিমে তাকাতে হবে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, উত্তর পশ্চিম আকাশের দিগন্ত রেখার সামান্য উপরে তাকালেই এর দেখা মিলতে পারে। ১৪ জুলাইয়ের পরের ২০ দিন খালি চোখে এর দেখা মিলবে। প্রথম পর্যায়ে দিগন্ত রেখার কাছাকাছি থাকলেও ধীরে ধীরে আকাশে উপরের দিকে উঠতে থাকবে এই ধূমকেতু। নিওওয়াইজ আকাশে যত উপরের দিকে উঠবে তত বেশিক্ষণ সময় ধরে আকাশে এর দেখা মিলবে। ২২ জুলাই নিওওয়াইজ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে। এই সময় পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব ছিল সাড়ে দশ কোটি কিলোমিটার। এই নির্দিষ্ট সময় পৃথিবী থেকে সবথেকে ভালোভাবে ধূমকেতুটিকে দেখা যায়। অবশ্য জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত অনায়াসে দেখা মিলবে তার। তবে আগস্টের শুরু থেকেই এই ধূমকেতু খুব দ্রুত গতিতে আমাদের ফেলে এগিয়ে যাবে। এই সময় নিওওয়াইজের দর্শন পেতে দূরবিন এবং টেলিস্কোপের বন্দোবস্ত করতে হবে। তাই এই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য দেখার জন্য একদমই সময় নষ্ট করা চলবে না। আগেই বলেছি, আপাতত নিওওয়াইজ দেখতে কোনও যন্ত্রের প্রয়োজন নেই। খালি চোখেই দেখা মিলবে এই ধূমকেতুর। অবশ্য তোমাদের মধ্যে কারও যদি এই ধূমকেতুকে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছে থাকে তবে দূরবিনে চোখ রাখতেই পারো। সবথেকে ভালো হয় টেলিস্কোপে চোখ রাখতে পারলে। তবে এই ধূমকেতুকে দেখার ক্ষেত্রে আরও একটা সমস্যা রয়েছে বন্ধুরা। ভাবছ কেন আবার সমস্যা? আসলে এটা জুলাই মাস। মোটের উপর বর্ষাকাল। এই নির্দিষ্ট সময়ে রাতের আকাশ বেশিরভাগ সময়ই থাকে মেঘাচ্ছন্ন। আর মেঘের আস্তরণ পেরিয়ে দূরের ঝলমলে ধূমকেতু দেখা সম্ভব নয়। তাই নিওওয়াইজ দেখতে গেলে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে হবে। আজ না হলে কাল, কাল না পরশু...আকাশের দিকে পাখির চোখ রেখেই আমাদের নিওওয়াইজের মায়াবী রূপ দেখতে হবে।
আবার ৬৭৬৬ বছর পরে
পরিক্রমণকাল অনুযায়ী ধূমকেতুকে দুইভাগে ভাগ করা যায়— শর্ট পিরিয়ড কমেট এবং লং পিরিয়ড কমেট। পরিক্রমণের সময় দুশো বছরের কম হলে তাকে বলে শর্ট পিরিয়ড কমেট। এই শর্ট পিরিয়ড কমেট আসে কুইপার বেল্ট অঞ্চল থেকে। বিখ্যাত হ্যালির ধূমকেতু শর্ট পিরিয়ড কমেটের উদাহরণ। অপরদিকে লং পিরিয়ড কমেটের পরিক্রমণ কাল দুশো বছরের বেশি। এই ধূমকেতুরা আসে সৌরজগতের বহির্ভাগের উর্ট ক্লাউড অঞ্চল থেকে। নিওওয়াইজ হল একটি লং পিরিয়ড কমেট। বিজ্ঞানীরা জটিল সব অঙ্ক কষে হিসেব লাগিয়ে দেখেছেন, আজ থেকে ৬ হাজার ৭৬৬ বছর পর ফের সৌর জগতের অন্দরে আসবে এই ধূমকেতু। তাই বুঝতেই পারছ বন্ধুরা, ঠিক কতটা বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছ তোমরা! তাই আর দেরি নয়, বাবা-মাকে বলে রাখো। সন্ধের আকাশ পরিষ্কার থাকলেই আকাশ পানে মাথা তোলো। তারপর চোখ ভরে দেখে নাও মায়াবী নিওওয়াইজ। আকাশ ভরা সূর্য তারার মাঝে দাঁড়িয়ে বিস্ময় লাগবেই!