উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে
পরামর্শে বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম হাই স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক কিংশুক মণ্ডল।
দ্বিতীয় পার্বিক পরীক্ষার সময় এসে গেল, কিন্তু এই অতিমারীতে এখনও প্রথম পার্বিক পরীক্ষাও হয়ে উঠল না। স্কুল না খুললেও পঠন পাঠন এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। সেজন্য আজ ভূগোলে প্রথম ও দ্বিতীয় পার্বিক পরীক্ষায় আঞ্চলিক অংশটি আলোচনা করব।
এই লেখায় ১. ভারতের প্রতিবেশী দেশ সমূহ, ২. উত্তর আমেরিকা মহাদেশ এবং ৩. দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ নিয়ে গল্প করব।
প্রথমে, ‘ভারতের প্রতিবেশী দেশ সমূহ ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক’ অধ্যায় নিয়ে একটু ভাবা যাক। এই অধ্যায়ে ভারতের চারপাশে যে সব প্রতিবেশী দেশগুলো রয়েছে তাদের নাম জানব। তারা ভারতের কোন দিকে, তাদের সঙ্গে ভারতের কোন কোন সীমারেখা রয়েছে, কোন কোন জলভাগ রয়েছে, কারা দ্বীপরাষ্ট্র ইত্যাদি জানব। ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলো মিলে একটা সংগঠন তৈরি করেছে ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর। সংগঠনের নাম SAARC (সার্ক) বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা পরিষদ। এর উদ্দেশ্য সার্কের সদস্য দেশগুলির মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, খেলাধুলার উন্নয়ন এবং সহযোগিতার আদান-প্রদান।
গভীরভাবে অধ্যয়ন করব প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিত কেন। আমাদের জানা উচিত পৃথিবীর এমন কোনও দেশ বা ভূখণ্ড নেই যারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। সব বিষয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ কেউ হতে পারে না। আমাদের সবসময় অন্যের কোনও না কোনও সহযোগিতায় বেঁচে থাকতে হয়।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থান একেবারে মাঝখানে, ঠিক যেন মধ্যমণি। আয়তন, জনসংখ্যার বিচারে ভারত বৃহত্তম। এই সব দেশগুলির ভাষাগত, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ভাবধারা প্রায় একইরকম। অর্থাৎ বৃহত্তম ভারতীয় সংস্কৃতি। সে কারণে ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলির সামগ্রিক অঞ্চলকে ভারতীয় উপমহাদেশে বলা হয়।
প্রতিবেশী প্রতিটি দেশের উচ্চতম অংশ, নদী, তাদের রাজধানী, দেশগুলির সরকারি ভাষা, প্রধান খাদ্যশস্য, প্রধান খনিজ সম্পর্কে জানতে হবে।
প্রতিটি দেশ তার নিজগুণে অনন্য। তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির কারণও ভিন্ন। যেমন হিমালয়ের কোলে নেপাল দেশটি অবস্থিত বলে নেপালের পর্যটন শিল্প খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভুটানে কেন ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতি হয়েছে, বাংলাদেশ এই দুটি বাদ দিয়ে কেন কৃষি এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পে এগিয়ে তা বুঝতে হবে। শ্রীলঙ্কায় কেন বছরে দু’বার বর্ষাকাল এবং এর ওপর নির্ভর করে কৃষির উন্নতি কেমন, তাও জানতে হবে। অন্যদিকে পাকিস্তান শুষ্ক দেশ, অথচ কী নিপুণ দক্ষতায় জমিতে ক্যারেজ পদ্ধতিতে সেচ করে চাষবাসে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটিয়েছে।
ভালো করে পড় ভুটান কেন ‘বজ্রপাতের দেশ’, শ্রীলঙ্কা কেন ‘দারুচিনির দ্বীপ’ ইত্যাদি সম্পর্কে। এছাড়া অবশ্যই ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলির আমদানি-রপ্তানি দ্রব্য সমূহের নাম মুখস্থ করতে হবে।
আঞ্চলিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় উত্তর আমেরিকা। ভারতের আয়তনের প্রায় ছয়গুণ বড় এই মহাদেশ। পৃথিবীর বৃহত্তম গিরিখাত (গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন), বিখ্যাত জলপ্রপাত (নায়াগ্রা), বৃহত্তম সুপেয় জলের হ্রদ (সুপিরিয়র), বৃহত্তম দ্বীপ (গ্রিনল্যান্ড), ব্যস্ততম বিমানবন্দর (আটলান্টা) প্রভৃতি নিয়ে এ মহাদেশ উজ্জ্বল হয়ে আছে। শিল্পক্ষেত্রে হ্রদ অঞ্চল, কানাডার শিল্ড অঞ্চল পৃথিবী বিখ্যাত। প্রায় পাঁচশো বছর আগে (১৫০১ সালে) আমেরিগো ভেসপুচি নামে এক পর্তুগিজ নাবিক এই মহাদেশ আবিষ্কার ও নামকরণ করেন।
প্রথমে এই অধ্যায়ের পাহাড়-পর্বত-মালভূমি-নদনদী-খনিজ সম্পদের বিশেষ তথ্যগুলি চিহ্নিত করে পেন্সিল দিয়ে আন্ডারলাইন করো। এইসব তথ্যগুলি বহু বিকল্পভিত্তিক, অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে খুব কাজে দেবে।
এরপর দু নম্বরের প্রশ্নের জন্য পানামা যোজক, কর্ডিলেরা, বৃহৎ সমভূমি, মৃত্যু উপত্যকা, লরেন্সিয় মালভূমি, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, ঝোপতুন্দ্রা, প্রেইরি তৃণভূমি, পৃথিবীর কসাইখানা সম্পর্কে খাতায় আলাদা করে লিখে রাখো।
তিন নম্বরের জন্য উত্তর আমেরিকা হ্রদগুলির বিবরণ, হ্রদ অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থা, উত্তর আমেরিকার জলবায়ুর উপর অক্ষাংশ ও সমুদ্রস্রোতের প্রভাব, মিসিসিপি নদীর জল শীতকালে বরফে পরিণত হয় কেন, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভেবেচিন্তে খাতায় উত্তর লিখে রাখো। এছাড়া কানাডা শিল্ড অঞ্চলে অসংখ্য হ্রদ সৃষ্টির কারণ, এখানকার নানা খনিজ সম্পদ, কাগজ শিল্পের উন্নতির কারণ গুরুত্ব দিয়ে পড়ো। এছাড়া হ্রদ অঞ্চলের শিল্পোন্নতির কারণ ও প্রধান শিল্প ও শিল্পকেন্দ্র সম্পর্কে ধারণা রাখো।
তৃতীয় ভাগে দক্ষিণ আমেরিকা সম্পর্কে পড়ো। এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ, ভারতের আয়তনের প্রায় পাঁচ গুণ। ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপীয়রা এই মহাদেশে বসবাস শুরু করে। তাই তাদের ভাষার প্রভাব এখানে সর্বাধিক। ইউরোপীয়দের এই ভাষা প্রাচীন লাতিন থেকে সৃষ্ট বলে এই ভাষার প্রভাবে এই মহাদেশের অন্য নাম লাতিন আমেরিকা। মহাদেশের পশ্চিম প্রান্ত বরাবর পৃথিবীর দীর্ঘতম নবীন ভঙ্গিল পর্বত রয়েছে, নাম আন্দিজ। এটি অত্যন্ত ভূকম্প ও আগ্নেয়গিরিপ্রবণ। এই পর্বতের পশ্চিমে রয়েছে আটাকামা মরুভূমি। এই মহাদেশে গায়ানা উচ্চভূমি, ব্রাজিল উচ্চভূমি, ল্যানোস, আমাজন, গ্রানচাকো ও পম্পাস সমভূমি সম্পর্কে পড়ো। এই মহাদেশে পৃথিবীর সর্বাধিক জলবহনকারী নদী আমাজন প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য নদীগুলিও গুরুত্বপূর্ণ। মহাদেশে নানা জায়গায় জলবায়ু ও উদ্ভিদের যে ভিন্নতা রয়েছে তার কারণ খোঁজো।
এখানকার চিরসবুজ সেলভা অরণ্যের উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য, বৈচিত্র্য ও প্রাণী বৈচিত্র্য নিয়ে একটু ভাবো।
দক্ষিণে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি যুক্ত পম্পাস তৃণভূমি রয়েছে। তাই এখানে বিপুল চাষবাস ও পশুপালন করা হয়। পশুচারণ ভূমিকে আর্জেন্টিনায় এস্টেনশিয়া বলে। এই কারণে এখানে ময়দা, বিস্কুট, দুগ্ধ, মাংস, চামড়া, পশম শিল্প খুব উন্নত। কিন্তু প্রকৃতি তেমন ভাবে খনিজ সম্পদ দেয়নি বলে ধাতব ও যন্ত্রশিল্প তেমন ভাবে গড়ে ওঠেনি। তাহলে এভাবেই প্রকৃতির উপর নির্ভর করে মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষি শিল্প সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
পড়ার সময় অবশ্যই উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মানচিত্রে সব ধরনের নদনদী, পাহাড় পর্বত, জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, শহর, নগর, বন্দর সম্পর্কে ধারণা করো।
পরিশেষে বলি, এই সময়টাকে কাজে লাগাও। কারণ, নিজেকে প্রস্তুত করার এটাই সেরা সময়।