উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বন্ধু ও ছোটদের জানাই অনেক শুভেচ্ছা। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিলাম। শিক্ষক মহাশয়রা বলতেন, সবগুলো বিষয়ে মনোযোগ দিতে। একেক বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির পদ্ধতি তাঁরা আলোচনা করতেন। আমি বিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে পড়া প্রস্তুত করে যেতাম। স্কুলে যেদিন যা যা পড়ানো হবে তা আগে থেকে পড়ে যেতাম। সব পড়া শেখার পর বাড়িতে লিখতাম। নিজে আবার ভুলত্রুটিগুলো ঠিক করে নিতাম। ক্লাসরুমে ভালোভাবে পড়া শুনলে, বুঝলে এবং মনে রাখলে বাড়িতে নিজের পড়ার টেবিলে লেখাপড়া কষ্টকর বা ক্লান্তিকর হয় না। বাংলা থেকে ভূগোল সব বিষয়ের আলাদা স্বাদ-গন্ধ-বর্ণ আছে। বিষয়কে ভালোবাসলে তা বোঝা যায়।
সব বিষয়ের ভালো ছাত্র হতেই হবে। সমান যত্নে পড়লে পরীক্ষায় সাফল্য আসবেই। আগামী দিনের পরীক্ষার্থীদের জন্য আমি একটু বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় যাচ্ছি। বাংলায় ভালো করার জন্য গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, সহায়ক পাঠগুলো খুব ভালো করে পড়তে হবে। ব্যাকরণ বুঝে পড়তে হবে। গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলি আগে থেকে তৈরি করতে হবে। ৩-৪ বছরের প্রশ্নপত্র (মাধ্যমিকের) থেকে সহায়ক পাঠের সম্ভাব্য প্রশ্ন বুঝে নেবে। ইংরাজির জন্যও পাঠ্যবই পড়বে খুব ভালো করে। সঠিক বাক্যগঠন, ভার্ব আর টেনস-এর সঠিক ব্যবহার, পয়েন্ট ধরে রাইটিং স্কিল ডেভেলপ করার জন্য নিয়মিত প্রয়াস দরকার। অঙ্কের জন্য পাঠ্যবই খুবই মন দিয়ে (উদাহরণ থেকে প্রশ্নমালা) করতে হবে। টেস্ট পেপার থেকে সক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করবে। প্রতিটি অধ্যায়ের স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। ভৌতবিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানে দুটো করে পাঠ্যবই পড়তে বলব। টেস্ট পেপার ও সহায়িকা বইও খুব দরকার হয়। গাণিতিক প্রশ্নের সমাধান শিখবে। আঁকা শিখতে হবে। কোন প্রশ্নে জীবন বিজ্ঞানে আঁকা লাগবে তা জানতে ও শিখতে হবে। ইতিহাসেও দুটো পাঠ্যবই পড়া দরকার। ৪ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর লিখে তৈরি করবে। ভূগোলের প্রস্তুতিতে মনে রাখবে যে, সিলেবাস খুবই বড়। প্রাকৃতিক ভূগোল খুব ভালো করে বুঝতে হবে। ঘড়ি ধরে কম সময়ে লেখার অভ্যাস এই বিষয়ে খুব দরকার। ছোট অধ্যায় যেমন বর্জ্য ব্যবস্থা বা উপগ্রহচিত্র মন দিয়ে পড়বে। আর বড় প্রশ্ন ঠিকঠাক বাছাই করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, প্রশ্নের নম্বর অনুযায়ী স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত উত্তর দেবে। ম্যাপ পয়েন্টিং অভ্যাস করবে। এসবের পাশাপাশি তোমরা আরও কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখ। যেমন—
১. মডেল প্রশ্ন, টেস্ট পেপার ধরে অভ্যাস করা। নতুন প্রশ্নগুলোকে চেনা জানা শেখা তোমার বড় কাজ।
২. বারবার পড়ে পাঠ মনে রাখতে হবে।
৩. বাইরে কোথাও সুযোগ সুবিধা থাকলে মক টেস্ট দাও। এতে তোমাদের খুব উপকার হবে। বাইরের পরিবেশে লেখার অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন সবই কাজে আসে।
৪. ক্লাসে খুব ভালো সহপাঠী দরকার। তাতে পড়ার আনন্দ বাড়ে। সবাই মিলে পড়ার অপূর্ব পরিবেশ তৈরি করবে। পরিবেশই সম্পদ।
৫. মনে রাখবে ‘শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানম্।’ আমাদের নির্মল আশ্রমিক পরিবেশে এই কথাটি প্রধান শিক্ষক মহারাজ স্বামী মুরলীধরানন্দজি বড় করে লিখে রেখেছেন। আমাদের সাফল্যের মূল শক্তিটি এখানেই নিহিত আছে। আত্মবিশ্বাসী হবে। সহজ সরল জীবনযাপন অবশ্যই পালন করবে। হাতের লেখা ও উত্তর লেখার সঠিক ধরন এবং উপস্থাপনা খুব বড় গুণ। আমাদের আশ্রম সম্পাদক স্বামী জয়ানন্দজি মহারাজ বলেন, ‘পড়বে, বুঝবে আর নিজের স্মৃতিতে সবকিছু নিখুঁতভাবে ধরে রাখবে। পরীক্ষকগণ এইরূপ ছাত্রদেরই সমস্ত নম্বর দেন।’ ছোটবেলা থেকে অসংখ্যবার এই কথা শুনে আমাদের সবার রেজাল্টই আজ ঝকঝকে আকাশের মতো উজ্জ্বল।