পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
এই ক’দিন আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে একটা আধমরা বেড়াল ছানা তুলে নিয়ে এল। দেখে তো বমি উঠে আসার জোগাড়। ম্যাগো! কী নোংরা আর তেমনি হাড় জিরজিরে। কোথায় কোন নর্দমায় পড়েছিল কে জানে! মহাপুরুষ ছেলে পরম মমতায় তাকে বুকে করে তুলে এনেছেন। দেখেই তো চেঁচিয়ে উঠেছে রঞ্জা, ‘ওরে ফ্যাল ফ্যাল! তোর কি ঘেন্না পিত্তি কিছু নেই রে! তুই ওটাকে হাতে ধরলি কী বলে ?’
—বাহ্! কী যে তুমি বল না মা! মুখটা গুঁজে কীভাবে নর্দমায় পড়েছিল জানো? না তুলে আনলে হয় দম বন্ধ হয়ে মরে যেত নয়তো কাক, চিল ঠুকরে মেরে ফেলত।
আর কী! তুমি আছ বিশ্বপরিত্রাতা! সকলকে উদ্ধার করে বেড়াবে! গায়ে জ্বালা ধরে এসব দেখলে। কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই। এসব নিয়ে বেশি বকাবকি করলেই ছেলের মুখ গোমড়া হয়ে যাবে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেবে। অগত্যা জেনে বুঝেও চুপ করেই থাকতে হয়।
শুধু কি বেড়াল ? পাখির ছানা, গাছের চারা— মোদ্দা কথা লেগেই রয়েছে ওর। স্কুল থেকে ফেরার সময় হলেই বুক ধুকধুক করে রঞ্জার। আবার কী এনে হাজির করবে কে জানে? তবুও অন্য সব ম্যানেজ করা যায়। কিন্তু কালকে যে কাণ্ডখানা ঘটাল! এ যে একটা আস্ত মানুষের ছেলে! একে কী বলে বাড়ি এনে হাজির বিতান! হাঁ করে তাকিয়ে থেকেছে রঞ্জা ছেলের মুখের দিকে। বাক্যস্ফুর্তি হয়নি কিছুক্ষণ।
—মা, ওর নাম হরিয়া। আমার খুব বন্ধু। আমাদের ইশকুলের সামনের মুড়ি-ছোলা-বাদাম ভাজার দোকানটায় কাজ করে।
ছোলা, বাদাম ভাজার দোকানের কাজের ছেলে কী করে বিতানের ‘খুব বন্ধু’ হয়ে উঠল বুঝে উঠতে পারেনি রঞ্জা।
—ওই দুর্গাপ্রসাদ নামে লোকটা! ওর মালিক গো। জানো পেট ভরে খেতে দেয় না ওকে! খালি খাটায়।
—তুই ওকে চিনিস কী করে? তুই দোকানে যাস?’ ছেলের দম নেওয়ার ফাঁকে কোনওক্রমে কথাগুলো বলেছিল রঞ্জা।
—বাহ্! যাওয়া আসার পথে দেখি তো। আমিই তো কথা বললাম একদিন ওর সঙ্গে। ব্যস। বন্ধুত্ব হয়ে গেল। জানো মা, ওর খুব লেখাপড়া করার শখ। আমি বললাম যে, আমার পুরনো ক্লাসের বইগুলো তো সব আছে। সেগুলো দিয়ে ও তো পড়তেই পারে। তাই না।
পুরোপুরি বিশ্বাস না হলেও তখন কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে রঞ্জা। শুধু বইয়ের উপর দিয়ে হলে ঠিক আছে। যথারীতি এবার একটু কৌতূহলও হয়েছিল—
—কোন ক্লাস অবধি পড়েছে ও?
ছেলেটা কিছু উত্তর দেবার আগেই তড়বড় করে উঠল বিতান।
—ও তো ওর গ্রামে থাকতে ক্লাস ফাইভে পড়ত। তারপর আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। ওর বাবা মরে গেল তো।
বাপ রে! ছেলে একেবারে ওর ঠিকুজি কুষ্ঠি মুখস্থ করে ফেলেছে। কী কাণ্ড!
‘আমি স্কুলের ড্রেস ছেড়ে আসছি। তুই এখানে বোস। মা আমাদের কিছু খাবার দাও।’ বলতে বলতে দুড়দাড় করে ওপরে উঠে গিয়েছিল বিতান।
‘আমাদের’ কথাটা কানে বেজেছে। কিন্তু বলার কিছু নেই। বিকেলের জলখাবারে একটু চিকেন চাউমিন করেছিল। ছেলেটা ভালোবাসে। সেটাই ভাগ করে দিতে হল। কিন্তু ছেলে তো বলেই খালাস খেতে দাও। দেয় কীসে? জানা নেই, শোনা নেই। তাছাড়া রাস্তার ছেলে। নিজেদের বাসনে তো আর খেতে দেওয়া যায় না। ছেলে তো আর এসব বুঝবে না। শেষে রান্নাঘরে ঢুকে এদিক ওদিক চোখ চালিয়ে কাজের মেয়ে মলিনার জলখাবার খাওয়ার থালাটাই খুঁজে বের করতে হল।
খাবার হাতে নিয়ে রান্নাঘরের বাইরে এসে দাঁড়িয়েই পিত্তি জ্বলে গেল আবার। আক্কেল দেখ ছেলের! একেবারে খাবার টেবিলে ওকে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছে! উফফ! একটু যদি বুদ্ধি থাকত ঘটে। বেজার মুখে প্লেটগুলো সামনে রাখতেই চেঁচিয়ে উঠল বিতান, ‘ওয়াও! আজ চিকেন চাউমিন! গ্রেট মা!’
গ্রেট তো! কিন্তু পুরোটা তো আর পেটে গেল না। যেমন বাড়িতে এনে তুলেছ, তেমনি ভাগ দিয়ে খাও এখন! খাওয়ার পর পুরনো বইয়ের পাঁজা নিয়ে বসল ছেলেটার সামনে। নিজের কাজ পড়ে থাকলেও সামনে থেকে সরেনি রঞ্জা। বইপত্র গুছিয়ে বেঁধে দিয়ে দিব্যি ফতোয়া জারি করে দিল বিতান, ‘কাল থেকে দুপুরে তুই এখানে এসে ভাত খেয়ে যাবি বুঝলি? অসুবিধে হবে না। মা থাকবে তো। আমি স্কুল থেকে এসে তোকে পড়াগুলো বুঝিয়ে দেব।’
ঘটনাটা এতই আকস্মিক যে হাঁ করে বিতানের মুখের দিকে চেয়ে রইল রঞ্জা। খেয়ে যাবে মানে? একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও মনে করল না ছেলে! বেমালুম বলে দিল ‘এখানে এসে খেয়ে যাবি!’ এই বাজারে খামোখা একটা বাইরের ছেলেকে রোজ ভাত খাওয়াতে হবে! এ কি মামার বাড়ির আবদার নাকি! ছেলেটা চলে যেতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে, ‘অ্যাই! খেয়ে যাবে মানে? কোনও জিজ্ঞাসা নেই যুক্তি নেই— তুই দুম করে ছেলেটাকে খেয়ে যেতে বললি? এসবের মানে কী রে?’
—ও পেট ভরে খেতে পায় না। আমার বন্ধু। আমার কষ্ট হয়। দিও না মা দুটো ভাত। কত আর খাবে?
আহত চোখে চেয়ে থেকেছে ছেলে। আর ওই চোখের দিকে তাকিয়ে আবার কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে রঞ্জা। রাতে সৌমেন বাড়ি ফিরতে খাবার টেবিলে কথাটা তুলেছে। ও শুনে শুধু হেসেছে।
এমনিতেই মেজাজ খারাপ। আজ তিন দিন ধরে মলিনা কামাই করছে। ওর বরের অসুখ। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তাই কিছু বলতেও পারছে না রঞ্জা। ঘর মোছা থেকে বাসন মাজা, জামা কাপড় কাচা, শুকোতে দেওয়া, তোলা, ভাঁজ করা সর্বস্ব করতে হচ্ছে একা হাতে। সঙ্গে আবার দু’বেলা রান্না। বাপ, ছেলে দু’জনেরই তো মুখের তার একেবারে সপ্তম সুরে বাঁধা। একটু এদিক ওদিক হবার জো নেই। একে এত রকম সমস্যা! তার মধ্যে ছেলে এনে জোটাল এই উটকো ঝামেলা! নাহ! এবার কড়া হাতে শাসন করতে হবে বিতানকে! বড্ড আস্পর্ধা। কোনও কিছুতে মায়ের অনুমতিটুকু নেবারও তোয়াক্কা করে না আজকাল। আর ওই হরিয়া না কী নাম যেন ছেলেটার—যদি আজ থেকে আসা শুরু করে! এলে যে কী করবে সেটা অবশ্য এখনও পর্যন্ত ভেবে উঠতে পারেনি ও।
দুই
দ্রুত হাতে বাসনগুলো মেজে নিচ্ছে হরিয়া। ত্রস্ত চোখে সেদিকেই চেয়ে আছে রঞ্জা। আজ বড্ড দেরি করে এল ও। খাবে, বাসনগুলো মাজবে। সময় তো লাগবেই। ওদিকে বিতানের স্কুল থেকে ফেরার সময় হয়ে এল। তার আগে সবটা সামাল দিতে না পারলে কেলেঙ্কারি। ছেলে বুঝবে তো না কিছু। শুনবেও না সবটা। শুধু চেঁচাবে। অথচ ঘটনাটা এতটাই আকস্মিক! রঞ্জা কি জানত? নাকি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিল এমন কথা! ওই হরিয়াই তো...।
শুরুটা অবশ্য সেভাবে হয়নি। সেদিন বিতান স্কুলে চলে যাবার পর কাজকর্ম সেরে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া মিটিয়ে বাসনগুলো সবে মাজতে যাচ্ছে, তখনই ওই মূর্তিমান এসে হাজির। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দেখেই তো বিরক্তির একশেষ। কী বলে চলে এল ছেলেটা? বিতান নয় কথার কথা বলেইছে। তাই বলেই কি আসতে হয়? কী হ্যাপা রে বাবা! এদিকে নিজের কাজের অন্ত নেই, তার মধ্যে এখন একে পাত সাজিয়ে খেতে দাও। যত উটকো ঝামেলা! বেজার মুখেই গেট খুলে ছেলেটাকে ভেতরে ঢুকিয়েছে। ওকে ভাত বেড়ে দিয়ে বাসনগুলো ধুতে যাচ্ছে তখনই বলে উঠল ছেলেটা, ‘আমি মেজে দেব?’
এবার অবাক হবার পালা রঞ্জার।
—তুই বাসন মাজতে পারিস?
একদলা ভাত গিলে নিয়ে বড় করে ঘাড় নেড়েছে ছেলেটা।
—বাহ্! পারি না? আমার মালিকের ঘরের সব বাসন আমিই তো মাজি। তুমি রেখে দাও। আমি সব মেজে দেব।
তখনও মনে মনে ইতস্তত করেছে রঞ্জা। কিন্তু ছেলেটা যেন এক ফুৎকারে ওর সব আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছে।
—তুমি আমাকে বাসন মাজার জায়গাটা দেখিয়ে দাও না কাকিমা। আমি ভাত ক’টা খেয়েই খুব তাড়াতাড়ি মেজে ফেলব।
রান্নাঘরের পাশের ছোট্ট চাতালটাতেই বাসন মাজে মলিনা। দেখাতে গিয়েও ভেতরে কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করেছে রঞ্জা। ওর মুখ দেখে কী বুঝেছে কে জানে ছেলেটা। তাড়াতাড়ি বলে উঠেছে, ‘কেউ কিছু জানতে পারবে না। তুমি দেখ—’
মনে মনে লজ্জা পেলেও বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে, বয়স ওইটুকু হলেও গিভ অ্যান্ড টেক ব্যাপারটা ছেলেটা ভালো বোঝে। কিন্তু নিজের ভেতরে অজান্তেই কামড় পড়েছে কুটুস কুটুস— দুটো ভাত দিচ্ছে বলে বাসন মাজিয়ে নেবে? বিতান জানলে কী ভাববে!
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ‘না’টা বলে উঠতে পারেনি রঞ্জা। একটা ইচ্ছে-অনিচ্ছের দোলাচল চলছিল ভেতরে। খেয়ে উঠে বাসন মাজতে ভীষণ বিরক্ত লাগে! ছেলেটা অবশ্য রঞ্জার হ্যাঁ বলার অপেক্ষাও করেনি। ভাত কটা নিঃশেষে খেয়ে তাড়াতাড়ি উবু হয়ে বাসন মাজতে বসে পড়েছে।
সেই শুরু। চারদিন ধরে এই চলছে। যাবার সময় পই পই করে বলে যায় হরিয়া, ‘খেয়েদেয়ে বাসনগুলো ভিজিয়ে রেখে দেবে। আমি মেজে দেব। তোমাকে ভাবতে হবে না।’
শুধু কি বাসন? বেশ একটু বেলা করে আসে হরিয়া। ততক্ষণে জামাকাপড়গুলোও মেশিনে কাচা হয়ে যায়। ভাত খেয়ে বাসন ধুয়ে জামা কাপড়গুলো ছাদে মেলে দিয়ে ঘর-বারান্দা সব মুছে দেয় ও। কী সুন্দর কাজ! কে বলবে ওইটুকু ছেলে করেছে এসব! মলিনা না আসাতে ক’দিন ধরে বড্ড আতান্তরে পড়েছিল। এখন ওই ছেলের ওপর মনে মনে কৃতজ্ঞই রঞ্জা। দু’মুঠো ভাতের বিনিময়ে এত কাজ কে করে দেবে? অবশ্য দু’মুঠো মানে দু’মুঠোই দেয় না ও। যথেষ্ট পরিমাণ দেয়। সঙ্গে ডাল-মাছ-তরকারি সব। তার বিনিময়ে এটুকু কি খুব বেশি নেওয়া? মনে এলেও নিজেকে দমন করে রঞ্জা। ও তো আর নিজে থেকে বলেনি। হরিয়াই প্রস্তাব দিয়েছে।
রোজ খেয়েদেয়ে কাজকর্ম করে নিঃশব্দে চলে যায় ছেলেটা। আবার বিতান স্কুল থেকে ফিরলে গুটি গুটি পায়ে এসে হাজির হয়। ওই বারান্দাতেই বইপত্র নিয়ে বসে দু’জন। প্রথম প্রথম একটা ভয় ছিল রঞ্জার। কিন্তু ক’দিন যেতেই নিঃশঙ্ক হয়েছে! নাহ! বিতান কিছু জানতে পারেনি। অবশ্য ক’টা দিনই। মলিনা এসে গেলে আর ওকে দিয়ে কাজ করাবেও না রঞ্জা। যে ক’দিন না আসে করছে করুক।
‘হল তোর ?’ ফোন থেকে চোখ তুলে তাকায় রঞ্জা।
‘আর মাত্তর এই ক’টা।’ হাত চালাতে চালাতেই হাসিমুখে উত্তর দেয় হরিয়া।
চেয়ে চেয়ে দেখে রঞ্জা। পরিপাটি করে ঘরদোর মুছে ফেলেছে ও। জামাকাপড় মেলে দিয়ে এসেছে ছাদে। এবার বাসন মেজে রান্নাঘরটা মুছে দিলেই কাজ শেষ। হঠাৎ ওর পরনের জামাটার দিকে নজর পড়ে যায়। এহে! জামাটা একদম ছেঁড়া যে! বিতানের বেশ কিছু পুরোনো জামা, প্যান্ট তো পড়েই রয়েছে। দিয়ে দিলেই হয়। পরে বাঁচবে ছেলেটা। ক’দিনে কেমন মায়াও পড়ে গিয়েছে যেন!
—মা, দরজা খোলা কেন? তুমি গেট দিতে ভুলে গেছ?
ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ায় রঞ্জা। দরজার সামনে বিতান! এখন কী করে এল ও? স্কুল ছুটি হয়ে গেল! ক’টা বাজে? ততক্ষণে বিতানের চোখ হরিয়ার দিকে।
—তুই? কী করছিস ওখানে?
‘ওই থালাটা— মানে—’ থতমত খেয়ে যায় হরিয়া।
‘বাসন মাজছিস?’
‘না, না। আমার খাওয়ার থালাটা ধুয়ে রাখছি।’ আর্তস্বরে বাধা দেবার চেষ্টা করে হরিয়া।
‘ওহ। আচ্ছা।’ বিতানের হাসিভরা চোখ সামনের মাজা বাসনগুলোর ওপর দিয়ে ঘুরে এসে হরিয়ার চোখে স্থির হয়।
‘রোজই মেজে দিচ্ছিস তো? আর ঘর মোছা, কাপড় কাচা—এগুলো ? করছিস না?’
‘না, না।’ সামাল দেবার চেষ্টা করে হরিয়া।
‘কেন? করে দে। কি মা? মলিনা মাসি আসছে না তো। করে দিক। ভাত খাচ্ছে তো! তাই না?’
হাসিমুখে মায়ের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় বিতান। সে চাউনির সামনে কেঁপে ওঠে রঞ্জা। কী অদ্ভুত চাউনি বিতানের চোখে! কী ওখানে? ঘৃণা নাকি বিদ্রুপ? ওই ঠোঁটের কোণে ও কী হাসি? কবে এমন তির্যক হাসি হাসতে শিখল ওর চোদ্দো বছরের ছেলে! স্তব্ধ হয়ে চেয়ে থাকে রঞ্জা। একটা শব্দও আর উচ্চারণ করতে পারে না ও। আত্মজের দৃষ্টির কশাঘাত কী ভীষণ! কী ভয়ঙ্কর নির্মম!