ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
বিয়ে। ছোট্ট একটা শব্দ। অথচ এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে দুই মনের ‘এক’ হয়ে ওঠার সামাজিক ঘোষণা। দু’টি পরিবারের মিঠে মিলন। একটা সময় ছিল যখন বাড়িতে বিয়ে লাগলেই বাসস্থানের ভোল বদলে যেত। নতুন করে রঙের পোচ পড়ত দেওয়ালে, অলিন্দ ঘিরে ফুলের সাজ লাগানো হত। আলোয় আলোয় ভরে উঠত ঘরদোর। সদর দরজায় মণ্ডপ সাজিয়ে নহবত বসত। আর এমন সাজগোজের কৌলীন্য পেয়ে গৃহস্থানটিও যেন নববধূর মতো লাজে রাঙা হয়ে উঠত বিয়ের ক’দিন। কিন্তু এখন সে উপায় নেই। নিজের বাড়িতে বিয়ের আয়োজনের চাপ পোহাতে চান না অনেকেই। তাছাড়া বাড়ি বলতে এখন বিভিন্ন কামরার ফ্ল্যাট। এহেন পরিস্থিতিতে বাড়ির বিয়ে উঠে গিয়েছে ভাড়া বাড়িতে।
আজকাল আবার বাড়ি বা স্থানীয় মাঠ বা ক্লাব ভাড়া করে বিয়ের যে প্রচলিত চল, তা থেকেও কিছুটা সরে আসছেন কেউ কেউ। ভাবছেন ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’-এর কথা। ঘর থেকে দূরে গিয়ে এক টুকরো প্রকৃতি বা রাজকীয় পরিবেশে মালাবদল, শুভদৃষ্টি, সিঁদুরদান। মানে, বিয়ের নামে বিয়েও হল, আর বেড়ানোর নামে বেড়ানো। রথ দেখা আর কলা বেচা দুইয়ে মিলে এক মহা সমারোহ!
কলকাতার চারপাশে এমন কোন কোন জায়গা আছে যা বেছে নিতে পারেন বিয়ের ডেস্টিনেশন হিসেবে, রইল সেসবের সন্ধান।
ইবিজা ফার্ন রিসর্ট অ্যান্ড স্পা: অন্যতম সেরা এক ওয়েডিং ডেস্টিনেশন ইবিজা ফার্ন রিসর্ট অ্যান্ড স্পা। শহরের হুড়োহুড়ি নেই, ধোঁয়া ধুলো নেই, আছে শুধু ২০ একর বিস্তৃত নিরিবিলি, নিস্তরঙ্গ প্রকৃতি। আর সেই প্রকৃতিকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে চাইলে ইবিজা রিসর্ট একেবারে অনবদ্য ঠিকানা। দিগন্তবিস্তৃত সবুজ লন আর তারই মাঝে গাছ ঘেরা নিঝুম পুকুর অথবা টলটলে নীল জলে ভরা সুইমিং পুলের সমুখে বাঁধানো দালান— সবই হয়ে উঠতে পারে বিয়ের আকর্ষণীয় স্থান। প্রথমটিতে প্রকৃতির কোলে নিজেকে সঁপে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর দ্বিতীয়টি একটু অভিজাত কেতাদুরস্ত পরিবেশ। বিয়ের অতিথিদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। মোট ১১০টা ঘর নিয়ে এই রিসর্ট। তাছাড়াও আছে ব্যাঙ্কোয়েট হল। আর বিয়ে খেতে এসে একটু অন্যরকম পরিবেশ চাইলে বিভিন্ন ইনডোর অ্যাক্টিভিটির সুযোগও ভরপুর পাবেন এখানে। রিসর্টের বাহির মহলে না হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিক বন্দোবস্ত করা গেল। থাকার জন্য রিসর্টের ভিতর সুইট ও রুম যেমন আছে তেমনই আছে পুলসাইড কটেজ। অদ্ভুত একটা গ্রাম্য লুক রয়েছে এই কটেজগুলোয়। কিন্তু থাকার বন্দোবস্ত একেবারে ফাইভ স্টার। গত বছরের তুলনায় এবছর বিয়ের শুরুতেই পঁচিশ শতাংশ বেশি বুকিং হয়েছে বলে জানালেন ইবিজার জেনারেল ম্যানেজার শুভদীপ বসু। এমন মনোরম পরিবেশে নিজের রাজকন্যাটির বিবাহ বাসর সাজাতে চাইলে যোগাযোগ করুন সব্যসাচী বসুর সঙ্গে। মেনুর খরচ শুরু মোটামুটি ২৫০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে। ঘর ভাড়া শুরু ৬০০০ টাকা থেকে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ৯৮৩৬৮০১৪৫৫/
০৩৩-৬৬৫৫৫৫৫৫ নম্বরে।
বৈদিক ভিলেজ: বিয়ের দিনটা একটু অন্যভাবে উদ্যাপন করতে চাই আমরা সবাই। তাই হাল আমলে বিয়ে উপলক্ষে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই জায়গাটি। শুধু যে সাজিয়ে-গুছিয়ে বিয়ে তা-ই নয়। আপনি চাইলে এখানে থিম বিয়ের অনুষ্ঠানও করতে পারেন। একটু গ্রাম্য লুক চাইছেন, একেবারে হুবহু আপনার চাহিদা মতো সেজে উঠবে বৈদিক ভিলেজ। অথবা আপনার চাই রাজকীয় মেজাজ, কুছ পরোয়া নেই, একেবারে রাজরাজরাদের মহলের মতো জাঁকজমকপূর্ণ হবে সাজের ধরন। অনেকে আবার ওয়েস্টার্ন থিম পছন্দ করেন, কেউ বা রাজস্থানি ফোক থিম— চাহিদা আপনার, ভাবনা রিসর্টের। আবার অত জাঁক যদি মনে না ধরে তাহলে ব্যাঙ্কোয়েটগুলোও ভাড়া নিতে পারেন। এখানে ছোট বড় মাঝারি মিলিয়ে ছ’টি ব্যাঙ্কোয়েট রয়েছে। অনেকে আবার ভিতর ও বাইরে দু’রকম জায়গা মিলিয়ে মিশিয়ে চান। সেক্ষেত্রে তেমনই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় বলে জানালেন সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার রাজীব রায়চৌধুরী। মোটামুটি ৬২৫ বর্গফুট থেকে শুরু করে ৫৩০০ বর্গফুট পর্যন্ত এলাকা জুড়ে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অনেকে প্রিওয়েডিং শ্যুট করতে চান, তাঁরা এখানকার পুলসাইড, কটেজ, আউটডোর লোকেশন সবকিছুই ব্যবহার করতে পারবেন। চাইলে ফোটোগ্রাফার থেকে মেকআপ আর্টিস্ট সব ব্যবস্থা এঁরা করে দেন। খাবার মেনু ১৩০০ -২১০০ টাকা পর্যন্ত। ঘর ভাড়া মোটামুটি ৬০০০ টাকা থেকে শুরু। আরও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ৯৮৩০৮২০৪৪২/৯৮৩০৪৪৯৭৯৭ নম্বরে।
বাওয়ালি রাজবাড়ি: এক রাতের জন্য নিজেকে রাজা বা রানি ভাবতে চান? তাহলে বাওয়ালি রাজবাড়ি হয়ে উঠতে পারে মনের মানুষের সঙ্গে এক হওয়ার লীলাভূমি। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে নোদাখালি নামে একটি জায়গা আছে। সেখানেই এই সুবিশাল রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের জাঁকজমক, ঘর, বারান্দা, সুউচ্চ গথিক থাম, দালান, প্রাসাদের নকশা আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়। বউবেশে বা বরবেশে সেই দালানে দাঁড়িয়ে নহবত বাজিয়ে বিয়ে করতে বসলে নিজেকে রাজপুত্তুর বা রাজকন্যে বলে মনে হওয়া কিন্তু খুব বিচিত্র নয়! বছর কয়েক আগে টলিউডের রাজ-শুভশ্রীর বিয়ে এখানে হওয়ায় এই জায়গাটি আরও পরিচিতি পেয়েছে। তবে বাওয়ালি রাজবাড়িকে বিয়েবাড়ি উপলক্ষে ভাড়া দেওয়ার প্রথা নতুন নয়।
এই রাজবাড়ি ভাড়া করতে চাইলে যোগাযোগ করুন মৃণালিনী মজুমদারের সঙ্গে। জায়গাটি ভাড়া করতে খরচ পড়বে ৫ লক্ষ টাকা ও কর। মেনুর খরচ শুরু ১৫০০ টাকা থেকে। বিস্তারিত যোগাযোগের জন্য ফোন করুন ৯০৭৩৯১০৫০১ নম্বরে।
নিরালা রিসর্ট: কলকাতার আশপাশেও এমন অনেক ডেস্টিনেশন রয়েছে, যেগুলো বিয়ে উপলক্ষে ভাড়া দেওয়া হয়। ঝিল, সুইমিং পুল ও অগুনতি গাছকে সাক্ষী রেখে আলোয় আলোয় ভরা এক অপূর্ব প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ জীবনের পথচলার সূচনা করতে চাইলে ‘নিরালা রিসর্ট’ হতে পারে আপনার অন্যতম পছন্দ। এই রিসর্টের কাছেই কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের বাড়ি। তাঁর দেউলটির বাড়িকে কেন্দ্র করেই একটি পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হয়েছে এখানে। নিরালা রিসর্টটি সেই পর্যটনেরই অঙ্গ। এটি বিয়েবাড়ি উপলক্ষে ভাড়া করতে চাইলে দু’ভাবে করতে পারেন। এক) আলো, ডেকরেটিং, খাওয়াদাওয়া, গানবাজনা সব কিছুই রিসর্টের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি অতিথির খরচ পড়বে ১১০০-১৫০০ টাকা (মেনু ও সাজানোর উপর দাম ওঠানামা করবে)। দুই) শুধুমাত্র ব্যাঙ্কোয়েট হল ও চারটি এসি ঘর ও লনটুকু ভাড়া করতে পারেন। এক্ষেত্রে ঘরভাড়াটুকু ছাড়া সাজনো, খাওয়াদাওয়া বা অন্যান্য কোনও ইভেন্টে রিসর্টের কোনও দায়িত্ব থাকবে না। তাহলে খরচ পড়বে ১,৬০০০০ টাকা। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন: ৯৮৩১৬২০৯০১/৮১১৬৪৮১১৩৬।
ফরচুন পার্ক, পঞ্চবটী: কোনা এক্সপ্রেস ওয়ের উপর অবস্থিত এই আইটিসি-র রিসর্ট। ধর্মতলা থেকে মিনিট ২০-২৫-এর দূরত্ব। সূর্যাস্তের সময় পাশের গোলাবাড়ি ঘাটের সৌন্দর্য ও কালীমন্দিরের অবস্থান জায়গাটির গা থেকে শহুরে গন্ধ সরিয়ে আরও মাটির কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বিশাল ব্যাঙ্কোয়েট, সুইমিং পুল, স্পা, বলরুম মিলবে সবই। সংস্থার তরফ থেকে রণিত নাগ জানালেন, চাইলে সন্ধের সময় অতিথিদের জন্য লাইভ ক্যাম্পফায়ারের আয়োজনও মিলবে এখানে। এই বিশেষ রিসর্টটিকেও বিয়ে উপলক্ষে বহু বছর ধরেই ভাড়া দেওয়া হয়। ঘর ভাড়া সমেত এই খরচ ধরা থাকে। সারারাত ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান বা পার্টিও চলে এখানে। মেনু, ডেকরেটিং, স্পট সবকিছু নিয়ে অন্তত ৫০০ জনের জন্য খরচ পড়বে ১০-৩০ লক্ষ টাকা। মেনুর ফারাক ও সাজানোর রকমফেরে দাম ওঠানামা করবে। কেউ কেউ শুধু ব্যাঙ্কোয়েট ও ঘর ভাড়া নিতে পারেন। এখানে নানা রকমের ব্যাঙ্কোয়েট রয়েছে। প্রয়োজন মতো এই হলগুলি ভাড়া দেওয়া হয়। ঘর ভাড়া শুরু ৬০০০ টাকা থেকে। ফরচুন পার্ক পঞ্চবটীকে বিয়ের জন্য বাছলে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ৯৯০৩৯৮৬৪১০ নম্বরে।