উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
কেউ যদি প্রশ্ন করে, সিঙ্গল মাদারহুড কেমন উপভোগ করছি, তাহলে বলব, একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আনন্দে আছি। ইচ্ছে হলে রাত বারোটার সময় আমি ছেলের সঙ্গে খেলা করতে পারি। সাক্ষী থাকতে পারি ওর সব আজব আবদার আর অদ্ভুত কাজকর্মের। ইচ্ছে হলে কাতুকুতু দিতে পারি, হাসাতে পারি।
আমার আর সন্তানের মাঝে আর কেউ নেই বাধা দেওয়ার মতো। কেউ থাকলে তার খিটিমিটি শুনতে হতো। মা আর ছেলের মধ্যে তার নাক গলানো সহ্য করতে হতো! সে আমার না-পসন্দ!
আর শুধু আমি একা নই। আমার কাছে আরও অনেক মহিলা আসেন যারা সিঙ্গল মাদার হতে চান। তাদের সঙ্গে কথা বলেও আমার মনে হয়েছে, তাঁরাও চান নিজের মতো করে বাঁচতে, নিজের মতো করে সময় কাটাতে। সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি থাকা মানেই সেই স্বাধীনতাটুকুতে ছেদ পড়া। আমার সন্তান আর আমি— এটুকু পৃথিবীতে আমরা নিজেরাই রাজা!
আর শুধু মহিলা নয়, বহু পুরুষও চান সিঙ্গল ফাদার হতে। তাদের বক্তব্যও এক। দুটি মানুষের সম্পর্কের লক্ষ দ্বন্দ্ব আর জটিলতা আসলে শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণা দেয়। তাই নিজেকে কষ্ট না দিয়ে, সন্তানকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়াই ভালো।
এখন কেউ প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে গেলেই প্রশ্ন ওঠে— সিঙ্গল মাদারের সন্তানের ভবিষ্যৎ কেমন হবে?
আমার উত্তর হল— ভবিষ্যৎ যেমনই হোক না কেন, তার ভার নিতে আমি রাজি আছি। সন্তান বিগড়লে সে দায় আমার। আবার পড়াশোনা করে অনেক বড় হলে তার কৃতিত্বও আমার।
অবশ্য এখন থেকেই আমার আত্মীয়রা বলে আমি নাকি ছেলেকে এখন থেকেই বিগড়ে দিচ্ছি! কেন? কেন আবার, হাসপাতাল থেকে ফিরেই আমাকে তার সঙ্গে খেলতে শুরু করতে হয়, যেমন আমি দাঁড়িয়ে আছি, আর ও এসে আমার পায়ের ফাঁক দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলে যাবে! তারপর, আমি সোফায় বসে আছি, সে বাবু পা বেয়ে উঠে বুকের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে ঘাড়ের উপর দাঁড়িয়ে নাচতে শুরু করল! কোত্থেকে এক রকম নাচ শিখেছে হাতটা বেঁকিয়ে, সেই নাচ আমাকে দেখায়। আর আমাকেও নাচতে হয় দেড় বছরের ছেলের সঙ্গে। আবার, মাঝরাতে উঠে বাবুমশাইয়ের খেতে ইচ্ছে হয় আবার তার সঙ্গে আমাকেও খেতে হবে এই তার দাবি। হ্যাঁ, মেনে নিই ওর সব দাবি! বকা দিই না এতটুকুও।
আসলে সারাদিন কাজ করতে হয় আমাকে। ছেলের জন্য মন খারাপ করে বইকি! যেটুকু সঙ্গ দিই ওকে তখন কি আর বকা যায়?
কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, সারাদিন ছেলেকে ছেড়ে থাকতে হয়। কাজ করেন কীভাবে? আবার বলি, মনখারাপ করে বলে কি কাজ ছেড়ে দেবো? কীভাবে ভুলব, আমার এই কাজটা আছে বলেই, ওকে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসার মতো সাহস করতে পেরেছি। তাই আমি সমস্ত কর্মরত মহিলাকে বলি, নিজের কাজের জায়গাটি আগে নিশ্চিত করুণ। তারপর রাখুন আবেগকে।
সবাই নিশ্চয় ভাবছেন, সিঙ্গল মাদার হওয়া বেশ কঠিন একটা ব্যাপার। কীভাবে সামলাচ্ছি সব দিক! সত্যিই কঠিন। তবে আমার সন্তানকে মানুষ করতে গিয়ে আমার কোনও সমস্যা হয়নি। তার কারণ সম্ভবত আমার মা। আমার জীবনে মায়ের প্রভাব রয়েছে যথেষ্ট। বলা ভালো মায়ের জন্যই আমি আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি। মা সবসময় আমাকে সঠিক রাস্তা দেখিয়ে সাহায্য করেছে। মনে আছে, খুব কঠিন পরীক্ষার আগে যখন আমি দোনামোনায় ভুগতাম, তখনও মা বলত— ‘তুই লড়াই ছাড়িস না। ঠিক সফল হবি।’ এমনকী গাইনিকোলজি বিষয়টাও নিয়েছিলাম মায়ের পরামর্শে! এখনও আমার প্রতিষ্ঠানটি চালাই মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই। তাই আমিও চাই , মায়ের শিক্ষাই আমার সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত হোক। ও যেন লড়াই না ছাড়ে, কারণ লড়াই চালালেই সফল হওয়া যায়!
অনুলিখন: সুপ্রিয় নায়েক