উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
মাদারিং সানডে
সেটা ছিল ষোড়ষ শতাব্দী। ইংল্যান্ডে মাদারিং সানডে বলে একটা রবিবার নির্দিষ্ট করা হল। না, কোনও একটা রবিবার নয়, বছরের যে কোনও রবিবারই মাদারিং সানডে হতে পারে। কিন্তু যে রবিবার মাদারিং সানডে হিসেবে নির্দিষ্ট হবে সেই রবিবার অন্য সব কাজের ছুটি। দিনটি শুধুই মাতৃসেবার জন্য। রীতিটা বেশ অভিনব। মাদারিং সানডেতে বাড়ির বড় ছেলে বা মেয়ে মায়ের জন্য একটা বিরাট কেক বানিয়ে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে। সঙ্গে অন্যান্য ভইবোন ও তাদের পরিবারকেও সে নেমন্তন্ন করে আনবে মায়ের কাছে। বেশ একটা ফ্যামিলি রিউনিয়ন বা গেট টুগেদারের মতো ব্যাপার। সেই দিনে মায়ের সব কাজ থেকে ছুটি। কেক কেটে দিনটা শুরু হবে তারপর ছেলেমেয়েরা মিলে লাঞ্চ ও ডিনারেরও আয়োজন করবে। মাকে উপহার দেওয়ার আলাদা করে কোনও চল ছিল না এই দিনে তবে একটা গোটা দিন রানির মতো কাটাতে পেরে মাতৃদেবী তো আহ্লাদে আটখানা হয়ে থাকতেন। উপহারের তোয়াক্কাও তিনি করতেন না। সেই সময় ইংল্যান্ডে পরিবার প্রথা ক্রমশ ভেঙে যেতে বসেছিল। তাই সেই প্রথার গুরুত্ব বুঝিয়ে তা আবারও চালু করার উদ্দেশ্যেই এই মাদারিং সানডে শুরু হয়।
জুলিয়া ওয়ার্ড হো
এরও বেশ কয়েক শতক পর ১৮৭২ সালে মার্কিন কন্যা জুলিয়া ওয়ার্ড হো জুন মাসের ২ তারিখকে মাদার্স ডে হিসেবে নির্দিষ্ট করেন। জুলিয়া পেশায় স্বনামধন্য কবিই শুধু নন, একই সঙ্গে তিনি উইমেন অ্যাকটিভিস্টও বটে। অ্যাবলিশন অব উইমেন’স রাইটসের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেন জুলিয়া। আমেরিকায় নারীর অধিকার দাবির পিছনের তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়েই বিশ্ব শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর ধারণা ছিল মায়ের সম্মানের মাধ্যমেই বিশ্বের উন্নতি সম্ভব। তাই মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর জন্য তিনি ২ জুন তারিখটি নির্দিষ্ট করেন। দুঃখের কথা এই যে জুলিয়ার এই প্রয়াস সাফল্য পায়নি। মাত্র কয়েক বছর ২ জুন মাদার্স ডে হিসেবে পালিত হওয়ার পর দিনটি আর পাঁচটা সাধারণ তারিখের মতোই ক্যালেন্ডারে মিশে যায়। মায়েরা প্রকৃত সম্মান পেতে শুরু করলেন ১৯০৭ সালে।
আনা জার্ভিস ও মাদার্স ডে
মাদার্স ডে-র সঙ্গে যে মহিলার নাম সবচেয়ে বেশি জড়িত তিনি আনা এম জার্ভিস। ফিলাডেলফিয়ার কন্যা আনার মা মারা যান ১৯০৫ সালে। তাতে আনা এতটাই ভেঙে পড়েন যে মাদার্স ডে বা মায়েদের সম্মান জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। ফিলাডেলফিয়া শহরে আনা জার্ভিসের মা ছিলেন মাদার জার্ভিস নামে খ্যাত। সন্তান সম্ভাবনার সময় ও তার পরবর্তীকালে মেয়েদের কাজ করার স্বাধীনতা নিয়ে বিস্তর লড়াই করেছিলেন মাদার জার্ভিস এক সময়। বলাই বাহুল্য তখনও মার্কিন মুলুকে নারী স্বাধীনতার ধ্বজা ওড়েনি। মেয়েদের অবস্থা ছিল রীতিমতো শোচনীয়। আমেরিকার সিভিল ওয়ারের সময় মাদার জার্ভিস এক মহিলা ব্রিগেড তৈরি করেছিলেন। মাদার জার্ভিস যে সময় সমাজে সেবার কাজে নিজেকে উৎস্বর্গ করেছিলেন সেই সময় সমাজে পুরুষদের জন্য নিবেদিত নানা দিন থাকলেও নারী ছিল অবহেলিত, অবাঞ্ছিত। এ হেন মহীয়সী মায়ের স্মৃতির উদ্দেশে ১৯০৮ সালে ১০ মে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন চার্চে মাদার্স ডে মেমোরিয়াল সার্ভিসের আয়োজন করা হয়। ওই চার্চে মাদার জার্ভিস বহু বছর পড়িয়েছিলেন বলেই সেখানে এমন শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের ব্যবস্থা করা হয়। চার্চ কর্তৃপক্ষই সেই ব্যবস্থা করে। কিন্তু আমেরিকার এক ছোট্ট শহরের আরও ছোট চার্চে আয়োজিত এই মাতৃশ্রদ্ধাকে বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করেছিলেন মাদার জার্ভিসের কন্যা আনা। চিঠি, টেলিগ্রাম ও সরাসরি যোগাযোগর মাধ্যমে তিনি দিনটির গুরুত্ব জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেন। শুধু তাই নয়, এই দিনটিকে বিশ্ব মাতৃ দিবস হিসেবে গ্রহণ করার জন্য তিনি বই, পুস্তিকা, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি নানা কিছু লিখে ছাপিয়ে তা বিলি করার বন্দোবস্তও করেন। আনার এই প্রয়াস প্রথম ফিলাডেলফিয়ার মেয়রের চোখে পড়ে। সেখানে স্বীকৃতি পাওয়ার পর আনা তাঁর আর্জি নিয়ে ওয়াশিংটন ডি সি পর্যন্ত যান। ক্রমশ মার্কিন দেশে মাদার্স ডে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মাদার্স ডে হিসেবে সরকারি তরফে ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
পরবর্তীকালে ১৯১৪ সালে রাষ্ট্রপতি উড্রু উইলসনের আমলে মাদার্স ডে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তার প্রভাব পাশ্চাত্য ছাড়িয়ে প্রাচ্যেও এসে পড়ে।