উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
দিল্লিতে পড়াশোনা করতে করতেই প্রথম কেরিয়ার ব্রেকটা পান গীতিকা গানুজ ধর। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম মেকিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্টুডিওতেই প্রথম সুযোগ পান। বলিউডের ফিল্মি গানের ওপর প্রোগ্রাম আর সেই অনুষ্ঠানের অ্যাঙ্কর হিসেবে নির্বাচিত হন গীতিকা। তারপর দীর্ঘ কেরিয়ার পেরিয়ে আজ তিনি সেলিব্রিটি পাবলিক স্পিকার। রাজনৈতিক শো থেকে সেলিব্রিটি অ্যাঙ্করিং বা কমার্শিয়াল শো সবই করেছেন। সেই সুবাদে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে মনমোহন সিং, সোনিয়া গান্ধী, নরেন্দ্র মোদির মতো বিখ্যাত রাজনীতিকের। পাশাপাশি অমিতাভ বচ্চনের মতো সেলিব্রিটির সঙ্গেও কাজ করেছেন গীতিকা। তারই সঙ্গে মুখোমুখি আড্ডা জমে উঠেছিল জে ডব্লু ম্যারিয়ট হোটেলের কফি শপে। ব্রেকফাস্টের সঙ্গে সেই আড্ডায় উঠে এলেন এক অন্য গীতিকা। যিনি কেরিয়ার ওম্যানের পাশাপাশি ঘরোয়া মা-ও বটে।
হন্ডা লঞ্চের অডিশনে
অটো এক্সপো হচ্ছিল দিল্লিতে। ভারতে প্রথমবার হন্ডা কোম্পানি তাদের গাড়ি লঞ্চ করবে। তার জন্য অডিশন নেওয়া হচ্ছে। প্রচুর নামী দামী শো অ্যাঙ্করের সঙ্গে নতুন মুখও যে একেবারে বিচারের বাইরে তা নয়। অডিশনে নাম লেখালেন গীতিকা। তিনি ভাবতেও পরেননি এমন একখানা শোয়ে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু হলেন। দিল্লি অটো এক্সপোতে হন্ডা গাড়ির অ্যাঙ্কর হিসেবে নির্বাচিত হলেন গীতিকা। শো অ্যাঙ্কর কাম পাবলিক স্পিকারের যাত্রার সেই শুরু। এই কেরিয়ার যে গীতিকা নিজে বেছেছেন তা নয়। বরং কেরিয়ারই বেছে নিয়েছে গীতিকাকে। হন্ডার সেই ব্রেকের পর আরও অনুষ্ঠানের অফার পেতে শুরু করেন তিনি। সেই অবস্থায় পাবলিক স্পিকার হয়ে ওঠা ছাড়া আর কিছু করার কথা ভাবতেও পারেননি গীতিকা। সেই যাত্রাই আজও চলেছে।
জ্যাপানিজ ব্র্যান্ড
‘কেরিয়ারের শুরুতে সেই যে জাপানি ব্র্যান্ডে কাজ করলাম তারপর থেকে জাপানি ব্র্যান্ড যেন পেয়ে বসল আমায়। এমন কোনও জাপানিজ কোম্পানি নেই যাদের সঙ্গে আমি কাজ করিনি। অটোমোবাইল থেকে ইলেকট্রনিক্স থেকে ফ্যাশন সর্বত্রই তখন জাপানিজ ব্র্যান্ডে আমার মুখ দেখা যেত। ওদের কাজের ধরনের সঙ্গে নিজেকে খুব মানিয়ে নিয়েছিলাম। অসম্ভব ডিসিপ্লিনড কাজ। ঠিক সময়ে কাজ শুরু হয়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই কাজ হয় আর কনট্র্যাক্টটা পুরোপুরি মেনে চলা হয়। এমন কাজের ধরনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো সত্যিই সহজ।’ বলছিলেন গীতিকা গানুজ ধর।
পাবলিক স্পিকিং আর প্রস্তুতি
গীতিকা বললেন তাঁর জীবনে সব কাজের পিছনে একটাই মন্ত্র, প্রস্তুতি। তিনি যাই করেন প্রচণ্ড পড়াশোনা করে করেন। রাজনৈতিক শো থেকে শুরু করে বিয়ের অনুষ্ঠান সর্বত্রই সেই পড়াশোনার ছাপ থাকে। পাবলিক স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রে তিনি বললেন, এটা একটা অত্যন্ত কঠিন কেরিয়ার। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলতে হয়। একেকটা শোয়ের একেক রকম চ্যালেঞ্জ। আর সেগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে তবেই এই পেশায় সাফল্য পাওয়া যায় নচেৎ নয়।
সেলিব্রিটিদের সঙ্গে
কেরিয়ারের কারণে বহু সেলিব্রিটির মুখোমুখি হয়েছেন গীতিকা। কাকে কেমন লাগে তাঁর? কেমন সেইসব সেলিব্রিটিদের সঙ্গে ওঠা বসা? প্রশ্ন করলে একটু ভাবলেন গীতিকা। তারপর বললেন একেকজন সেলিব্রিটি একেকরকম। কারও সঙ্গে কারও কোনও মিল নেই। এই যেমন যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কাজ করেছেন, তখন শোয়ের আগে বারবার তাঁর অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাঁরা ঠিক কী চাইছেন সেই বিষয়ে আলোচনায় বসেছেন, সেই অনুযায়ী কনটেন্ট তৈরি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে গ্রিন সিগনাল এলে তবেই কাজ এগিয়েছে। কিন্তু এই গোটা সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি একবারও বৈঠকে বসার সুযোগ হয়নি। এটাই রাজনৈতিক রীতি। তবে নরেন্দ্র মোদিকে যেমন দেখেছেন তাতে তিনি বলতে পারেন উনি প্রচণ্ড পরিশ্রমী নেতা। যে কোনও বক্তব্য বা অনুষ্ঠান স্টেজে ওঠার আগে পর্যন্ত তিনি তা খুঁটিয়ে দেখে নিজের মত দেন। তাঁর মতের সঙ্গে না মিললে বা তাঁর পছন্দ না হলে শেষ মুহূর্তে পুরো জিনিসটাই বদলাতে হতে পারে। তিনি যখন পাবলিকের সামনে তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতিক নেতা। কিন্তু তার বাইরে তিনি বিচক্ষণ এক ব্যক্তিত্ব। আবার আমাদের রাষ্ট্রপতির স্বভাব সম্পূর্ণ আলাদা। নিজের ইমেজ রক্ষা করার কোনও দায়ই যেন তাঁর নেই। তিনি ভেতরে বাইরে একই রকম। একইসঙ্গে অনেক কিছুতে আগ্রহী, অনেক বিষয়ে তাঁর জ্ঞানও প্রচণ্ড। এই সব মিলিয়েই তাঁর চরিত্র।
নায়ক ও শিল্পপতি
নায়ক বললেই অমিতাভ বচ্চনের কথা মনে হয়। তাঁকে যতবার দেখেন ততই নাকি অবাক লাগে গীতিকার। অমিতাভ বচ্চনের মতো লেজেন্ড আজও সব শোয়ের আগে রিহার্সাল করেন। নিজের রোল বারংবার বলেন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। অন্যদের থেকে টিপস নেন, কাজটা আরও ভালো কীভাবে করবেন সেদিকে তাঁর সদা সজাগ নজর। দেখলে অবাক না হয়ে উপায় থাকে না। সাধারণ থেকে সাধারণতর লোকও যদি ভ্রূ কোঁচকায় তাহলেও তিনি নিজের ধরনটা বদলে ফেলেন। অন্য কিছু, আরও উন্নত কিছু করার চেষ্টা করেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করলে অনেককিছু শেখা যায়। বললেন গীতিকা। তাঁর মতে শিল্পপতিদের একটা আলাদা ধরন আছে। তাঁরা সবাই নায়ক। তাঁদের অনুষ্ঠানে সকলেরই কিছু না কিছু বক্তব্য থাকে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বার করা অনেকক্ষেত্রেই কঠিন হয়।
কাজ ও রোজগার
পাবলিক স্পিকিংকে পেশা হিসেবে নিলে রোজগারের সুযোগ কেমন? একটু যেন থমকালেন গীতিকা। সরাসরি টাকা পয়সা বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে কি না ভেবে নিয়ে বললেন রেঞ্জটা বিশাল। যখন কেউ পাবলিক স্পিকিংয়ের কেরিয়ার শুরু করেন তখন শো পিছু মোটামুটি ১৫০০০ টাকা রোজগার করার সম্ভাবনা থাকে। কেরিয়ারের শেষে গিয়ে রোজগারটা দাঁড়ায় ১০ লক্ষ টাকা প্রতি শো। তবে তার জন্য কাজটাও সেরকম হওয়া চাই। কনটেন্ট তৈরি থেকে প্রেজেন্টেশন সবটাই একেবারে পারফেক্ট হতে হবে। গীতিকা নিজের ক্ষেত্রে কনটেন্ট রাইটিং টিমের সঙ্গে বসে বক্তব্য তৈরি করেন, সেই বক্তব্যের মধ্যে কোথায় হাসবেন, কোথায় একটু সিরিয়াস নোট আনবেন আবার কোথায় বা ভাবলেশহীন ভাবে ফ্যাক্ট আওড়াবেন সবই মাপা থাকে। সাজ পোশাক নির্বাচন করেন তিনি নিজেই। শো অনুযায়ী শাড়ি, ইন্ডিয়ান এথনিক, কর্পোরেট প্যান্ট স্যুট সব পোশাকেই তিনি সাবলীল।
ব্যস্ত কেরিয়ার বনাম সুখী গৃহকোণ
না, কোনও ‘বনাম’ নেই। সাফ জানিয়ে দিলেন গীতিকা। তাঁর বক্তব্য কেরিয়ার আর গৃহকোণের মধ্যে কোনও লড়াইয়ের জায়গা তিনি রাখেননি। যতদিন শুধু কেরিয়ার করতে চেয়েছেন করেছেন। তারপর যখন বিবাহিত জীবন ও সন্তান পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন নিজে থেকেই অনুষ্ঠান কমিয়ে দিয়েছেন। সংসারে মন দিয়েছেন। সন্তানকে সময় দিয়েছেন। এখন আর হুট বলতে ছুট বাইরে বাইরে শো করেন না। মুম্বইতেও যেটুকু কাজ করেন সবই প্রচণ্ড নির্বাচিত। গীতিকার শিশু কন্যাটি মুম্বইয়ের একটি স্কুলে ক্লাস থ্রিয়ের ছাত্রী। সুযোগ থাকলে মেয়েকে নিয়েই বাইরে শো করতে যান গীতিকা। বললেন মেয়ের সঙ্গে তাঁর সময় কাটানোতে কোনও কম্প্রোমাইজ নেই। আর কোয়ালিটি টাইমের দোহাই দিয়ে কোয়ান্টিটি কমানোরও পক্ষপাতি নন তিনি। তাই বাচ্চা মানুষ করার ক্ষেত্রে গীতিকা হয়ে ওঠেন সুপার মম। একই সঙ্গে বাচ্চাকে পড়ানো থেকে তাঁর স্কুলের যাবতীয় ফাংশনে অংশগ্রহণ বা তার আবদার রক্ষা সবই হাসি মুখে করেন গীতিকা। বললেন, ‘বাড়ির, বিশেষত স্বামীর সমর্থনেই আজ আমি সুপার মম হয়েছি। তবু বলব বাচ্চা মানুষ করার পিছনে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।’