বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
আমাদের রাজ্যটাও তো এই দেশের বাইরে নয়। অতএব এখানেও বাজেট প্রকাশ পাওয়া মাত্র এমনটা হবে—এতে আশ্চর্য কী? এমনটা হলে তাকে অস্বাভাবিকই বা ভাবি কী করে! তার চেয়েও বড় কথা, কেবল আনাজপাতির দরদামই তো নয়, বাজেটকে শিখণ্ডী করে সর্বস্তরেই পাওনা আদায়ের রেট বাড়ানোর একটা প্রয়াস প্রক্রিয়াও যে শুরু হয়ে যায় সেটাই বা কে না জানে? এই তো, বাজেটের পর কদিন যেতে না যেতেই বাস-ট্যাক্সির ভাড়ায় এক লপ্তে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি উঠে এল! পণ্য পরিবহণের লরি গাড়িও যে এই দাবির বাইরে থাকবে না তা বলাই বাহুল্য! আর এই দাবিতে নিত্যদিনের বাজার যদি আর একপ্রস্থ চড়ে বসে তাতেও কি আমরা খুব অবাক হব? কেন চড়ল দাম—প্রশ্ন করলে বাঁধা বুলি তো আছেই, লরি-গাড়ির ভাড়া বাড়ছে, পাইকারি মাল আনা-নেওয়ায় খরচ বাড়ছে—দাম বাড়বে না? হয়ে গেল। অন্যদিকে গাড়িওয়ালারা বলবেন, দেখেননি, বাজেটে পেট্রল ডিজেলের উপর কেমন সেস বসিয়ে দিয়েছে দিল্লি। এমনিতেই তো রোজ ডিজেল পেট্রলের দাম কমা-বাড়া হচ্ছে। এবার বাজেটের পর তো পাকাপাকিভাবে ওই জ্বালানির দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে, আমাদের চলবে কী করে? ভাড়া না বাড়ালে গাড়ি বন্ধ করে দিতে হবে। গাড়ি চালিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেও যদি পেটে ভাত না জোটে তবে খাটবে কে?
হক কথা। ঠিকই তো—পণ্য পরিবহণই হোক, কি যাত্রী পরিবহণ—সংশ্লিষ্ট কর্মীদের তা সে তিনি ড্রাইভার-কন্ডাকটারই হোন কি তাঁদের সহযোগী, সকলকেই যে উদয়অস্ত কঠোর পরিশ্রম করে পেটের ভাত জোগাড় করতে হয়—তাতে সন্দেহ কী? তাঁরা তাঁদের আয় বাড়ানোর দাবি করতেই পারেন। কিন্তু কথা হল, বাজেট লাগুই হল না কেবল প্রস্তাব পেশ হল আর অমনি চারদিকে দাম বাড়ানোর হাঁক কেন! শুধু কি তাই? বাজেট পেশ হতে না হতেই দাম চড়ে যাচ্ছে—এটাই বা কেমন কথা! আমরা বলছি না যে বাজেটে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহণ খরচ বা জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না, নিশ্চয়ই বাড়বে। তাই বলে এমন রাতারাতি কেন? আজ কে না বোঝেন যে আগের দিনের চল্লিশ টাকা কেজির বেগুন পরের রাতে কোন গুণে আশি টাকা হয়। পুজো উৎসবের সময় বা কোনও একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি একটু বৃষ্টি-বাদলা হলেই কোন গুণে মাছ, সব্জি থেকে যাবতীয়ের দাম অমন ধাঁ করে চড়ে যায়? জানেন, বহুজনাই জানেন—সে দাম বাজেটে বাড়ে না, বাড়ে ফড়ে-দালালের কারসাজিতে। চটজলদি মুনাফার লোভে এখন দেশ-রাজ্যের বাজারগুলোতে এই ফড়েদের উৎপাত মাত্রাছাড়া—তেমনটাই বলেন তথ্যভিজ্ঞজনেরা।
এই ফড়েরা সারাক্ষণ সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। পুজো-পার্বণ, ঝড়-বৃষ্টি দুর্যোগের মতো বাজেটও এদের কাছে একটা সুযোগ। এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর একাধিকবার এই ফড়েদের উৎপাত কমানোর চেষ্টা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাময়িকভাবে তাতে কিছু কাজও হয়েছিল। তবে ধূর্ত সুযোগ-সন্ধানী, ফড়ে-দালাল বাহিনীকে যে পুরোপুরি কব্জা করা যায়নি তার প্রমাণ মাঝেমধ্যেই মিলেছে, মেলে। এই যেমন এবার বাজেট প্রকাশ মাত্রেই বাজার যে ধক করে অনেকটা চড়ে গেল, মূল্যবৃদ্ধির আঁচ লাগল আমজনতার মুখে—তার জন্য বাজেট যত না দায়ী তার চেয়ে ঢের বেশিগুণ দায়ী ওই ফড়ে-দালালেরা। বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে তথ্যভিজ্ঞ সকলেই বলছেন সেকথা। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এবারের বাজেটে জ্বালানি তেলের উপর নতুন করে সেস বসায় সব কিছুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র বা কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর মতো বিরোধী নেতা-নেত্রীরা সেই আশঙ্কার কথা তুলে ইতিমধ্যেই দেশের প্রথম পূর্ণ সময়ের মহিলা অর্থমন্ত্রী বাজেটের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। সিপিএমের মুখপত্র ‘গণশক্তি’ নরেন্দ্র মোদিজির দ্বিতীয় সরকারের প্রথম বাজেটকে ‘পুঁজির পৌষমাস’ বলে কটাক্ষও করেছে। এবং সেটাও স্বাভাবিক। বিরোধী শিবির চিরকাল এভাবেই কেন্দ্রীয় কি রাজ্য বাজেটের নেতিবাচক দিকগুলো জনতার সামনে তুলে ধরেন, বাজেট প্রস্তাব রূপায়িত হলে মানুষের কোথায় কতটা চাপ পড়বে তার আগাম আভাস দেন।
কিন্তু, বাজেটের কারণে মূল্যবৃদ্ধির আগেই যদি বাজার চড়ে যায়—তাহলে কী বলা যাবে!? সত্যি বলতে কী, বাজেট প্রস্তাব পেশ হতে না হতেই কলকাতার বাজারে দাম বৃদ্ধির বহর শুনে অস্বাভাবিক না লাগলেও এই ধন্দটা কিন্তু মনে জেগেছে—কে বাড়ায় দাম! মজুতদারি, মুনাফাবাজি, ফাটকার মতো শব্দগুলো ষাট-সত্তর-আশির দশকের মতো আজকাল আর অত শোনা যায় না ঠিকই, কিন্তু তাদের অস্তিত্ব যে আজও বহাল সেটা কিন্তু বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে বাজারের চেহারা চরিত্র থেকে বেশ ভালোই মালুম পাওয়া যায়। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপটে ভেজাল আর লোক ঠকানোও যে এখনও প্রায় অবাধে চলেছে তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। বাজারে দোকানে ওজন কম দেওয়া, নকল নিম্নমানের জিনিস বেশি দামে গছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি তো এখন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দোকানদারের ক্ষেত্রে রেওয়াজই হয়ে গেছে। কিন্তু, তাই বলে জীবনদায়ী ওষুধ! আমাদের রাজ্যে ওষুধ এমন হারে ভেজাল হচ্ছে যে, সিএজি অব্দি নাকি তাঁদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন! খবরেই পড়লাম। যারা এসব করছে তারা কি মানুষ! মানুষের জীবনের কোনও মূল্যই যাদের কাছে নেই, সামান্য কটা টাকার জন্য যারা এমন জঘন্য ব্যবসা করতে পারে তাদের মানুষ বলা যায়! পৃথিবীর কঠিনতম শাস্তিও কি এদের অপরাধের উপযুক্ত হয়?! শুধু এরা কেন, যারা ওই জাল ওষুধপত্র রোগী বা তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছে তাদের অপরাধও কি কম? কিন্তু, আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড চলছে অথচ কারবারিরা কেউ ধরা পড়ছে না! ড্রাগ কন্ট্রোল বলে যে দপ্তরটি আছে তারও বিশেষ হেলদোল আছে বলে মনে হচ্ছে না! অথচ, এই ভেজাল ওষুধ সরকারি হাসপাতালে ঢুকে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন করে তুললে আর একটা এনআরএস কাণ্ড ঘটে যেতেই পারে! মুনাফাবাজরা তো সঙ্গত কারণেই সেই বিপদের কথা ভাববে না, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বাদবাকিরা?
শুক্রবার জল সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে জনসচেতনতা গড়তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহানগরীর পথে নেমেছিলেন। নিঃসন্দেহে সময়োচিত উদ্যোগ। এর পাশাপাশি বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সবুজায়নের সুফল বোঝানোর চেষ্টাও চালাচ্ছে। অবিলম্বে লাখ লাখ গাছ লাগিয়ে পৃথিবীর সবুজের অভাব পূরণ না করলে যে মানব সভ্যতা আগামী এক দশকের মধ্যেই ঘোরতর বিপদে পড়বে সেই বার্তা দিচ্ছে। কিন্তু, তাতে ফল কতটা হচ্ছে তা
নিয়ে সন্দেহ এখনও যথেষ্ট। কারণ, রাজ্যের
নানা জায়গায় এখনও নির্বিচারে গাছ কাটা চলছে, তার ছবি ও খবর বেরচ্ছে। আর কোনওরকম তর্কে না গিয়ে চোখ বুজেই বলে দেওয়া যায়, বিশ্বের চারদিক
থেকে পানীয় জল নিয়ে গুরুতর অশনিসংকেত আসার পরও আমাদের এই কলকাতা শহরে তো বটেই, গোটা রাজ্যেই প্রতিদিন বিশাল পরিমাণ জল অপচয় হয়। আপাতত বেশির ভাগ জায়গায় জলের জোগান স্বাভাবিক আছে বলে সেটা গায়ে লাগছে না। তাই এখনও আসন্ন মহাবিপদের কথাটা ভাবছেন খুব সামান্যজনই। বাদবাকিরা এখনও নির্বিকার, ভয়ডরহীন—দু’জনের সংসারে আড়াই-তিন
হাজার লিটার শেষ করে দিচ্ছে দিনে, বাড়ি গাড়ি ধোয়া চালাচ্ছে কর্পোরেশনের পানীয় জলে! আহাম্মক
আর কাকে বলে। অন্যদিকে মুনাফাবাজেরা এখনও ভেজাল ওষুধ ছড়িয়ে, বৃষ্টি-ঝড় বাজেটের মতো কিছু পেলেই বাজারে আগুন লাগিয়ে আখের গোছাচ্ছে! এবং এই দুয়ের সাঁড়াশি আক্রমণে নাজেহাল
বিপর্যস্ত সংকটাপন্ন হচ্ছে সাধারণ গরিব মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন যাপন। কিন্তু, যেদিন চেন্নাইয়ের মতো
এই মহানগরীর জলতৃষ্ণা মেটাতেও ট্রেন-
ট্যাঙ্কার আনতে হবে—সেদিন আজকের অপচয়
এই সবুজ নিধন প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াবে না তো?
একটু ভাবুন।