ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
জীবমাত্রেরই শারীরিক ও মানসিক কার্যাবলীর উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করিলে জানা যায় যে, কোন জীবই কেবলমাত্র জীবনরক্ষার জন্যই সকল কর্ম করে না। অধিকন্তু সে কর্মসহায়ে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে চেষ্টা করে তাহার সীমাবদ্ধ অপূর্ণ জীবনের গণ্ডি অতিক্রম করিয়া এক অসীম ও পরিপূর্ণ জীবন লাভ করিতে—সকল অজ্ঞান অভাব ও দুঃখ হইতে মুক্ত হইয়া সকল চাওয়া ও সকল পাওয়ার অবসান ঘটাইতে, —শরীর মন ইন্দ্রিয় ও প্রকৃতির দাসত্ব ত্যাগ করিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন হইতে—সকল বন্ধন দূরে সরাইয়া মুক্তিলাভ করিতে। অতি ক্ষুদ্র পরমাণু-পরিমিত জীব হইতে মানুষ পর্যন্ত সকল জীবই মুক্তিলাভের জন্য সর্বদা কর্ম করিতেছে। মুক্তির অব্যক্ত প্রেরণায় সাধু সৎ কার্য করেন এবং অসাধু অসৎ কার্য করে। সর্ববন্ধনবিমুক্তিই সকল জীবের সকল কর্মের একমাত্র লক্ষ্য।
কর্মযোগ মানুষকে কর্মদ্বারা এই লক্ষ্যে উপনীত হইবার পথ দেখায়। কর্মযোগ শিক্ষা দেয়—কর্ম ব্যতীত যখন কাহারও জীবন ধারণের উপায় নাই, তখন এরূপ ভাবে সকলেরই কর্ম করা কর্তব্য যাহাতে সকল বন্ধন হইতে মুক্তিলাভ করা যায়। আত্মজ্ঞান লাভের অনুকূল কর্ম ভিন্ন সকল কর্মই সংস্কার উৎপাদন করিয়া বন্ধনের হেতু হয়। কর্মযোগের রহস্য জানা থাকিলে এই বন্ধন ঘটিতে পারে না। এই কর্ম-কৌশল শিক্ষা প্রদানই কর্মযোগের আদর্শ। ‘‘কর্মের কৌশলই যোগ।’’
কর্মের এই কৌশল জানিতে হইলে সর্বাগ্রে কার্য-কারণ-সম্বন্ধের রহস্য বুঝা আবশ্যক। বিজ্ঞান ও দর্শন শাস্ত্রসমূহ সমস্বরে ঘোষণা করে যে, চেতন-অচেতন এবং স্থূল-সূক্ষ্ম-কারণ জগতের সব-কিছু কার্য-কারণের অচ্ছেদ্য নীতিদ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শারীরিক ও মানসিক নির্বিশেষে বিশ্বপ্রকৃতির সকল ক্রিয়া এই অলংঘনীয় নীতি অনুসারে পরিচালিত। এই জগতে কারণ ভিন্ন কোন কার্য হয় না। এক কারণ—সঞ্জাত কার্য আবার অপর কার্যের কারণ হইয়া থাকে। এই কার্য-কারণ-শৃংখল অন্তহীন। এই শিকল হইতে একটি কড়াও অনাবশ্যক বোধে পৃথক করিবার উপায় নাই। শারীরিক ও মানসিক ক্রিয়া এবং ইহার প্রতিক্রিয়া উভয়কেই কর্ম বলা হয়। কোন কর্মবিশেষ সমকালে কার্য ও কারণ উভয়ই এবং উহা হইতে বহু কার্য-কারণের উদ্ভব হইতে পারে। শরীর ও মনের দৃশ্য-অদৃশ্য এবং স্থূল-সূক্ষ্ম সকল ক্রিয়াই প্রতিক্রিয়া মূলক কর্মের বা কার্য-কারণ-নিয়মের অধীন। এই নিয়ম কেহ অতিক্রম করিতে পারে না।